1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাদকসেবীদের গুলি করা উচিত!

৩ জানুয়ারি ২০১৮

প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান মাদক নির্মূলে মাদকের সঙ্গে যুক্তদের ‘শুট অ্যাট সাইট' তত্ত্ব দিয়েছেন৷ বলেছেন, তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হলে এভাবে মাদক নির্মূল করে দেখাতেন৷

https://p.dw.com/p/2qIY2
Symbolbild Drogen Spritze Junkie
ছবি: picture alliance/JOKER

মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ২৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকার তেজগাঁওয়ে আয়োজিত আলোচনা সভার প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান৷ তিনি সেখানে বলেন,‘‘ মাদক নির্মূলে মাদকের সঙ্গে জড়িতদের শুট অ্যাট সাইট একমাত্র সমাধান৷ আমার কথাটা খুব অপ্রিয় মনে হতে পারে৷ কিন্তু আমি মনেকরি, এই সমস্যাটা এমনই৷ এটা নিয়ে সকল দলের ঐক্যমত লাগবে৷ তা না হলে কেউ জার্মানির গ্রিনপার্টির মতো আন্দোলন শুরু করবে৷ মানবাধিকার গেল৷ আছে তো আমাদের দেশে এমন৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘শুট অ্যাট সাইট ৫০৮ টি উপজেলায় করতে হবে না৷ ৬৪ জেলায়ও করতে হবে না৷ দশটিতে করলেই মাদক নির্মূল হয়ে যাবে৷ আমাকে দায়িত্ব দেয়া হোক৷ কিন্তু সব দল মিলে সিদ্ধান্ত দিতে হবে যে, তুমি এটা করো৷ এটাকে এক নম্বর সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করতে হবে৷ আর যদি মনে করেন, ওমুকের ছেলে খায় তাতে আমার কী, তাহলে হবে না৷''

‘এরকম অসভ্য ও অভদ্র কথা, দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য একজন মন্ত্রী কিভাবে করেন’

এর প্রতিক্রিয়ায় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গণশিক্ষামন্ত্রীর মুখ থেকে যখন এরকম কথা বের হয়, সেটা আমাদের শিক্ষা যে কতটা অশিক্ষায় পরিণত হতে পারে, তার একটা উদাহরণ৷ এরকম অসভ্য এবং অভদ্র কথা, দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য একজন মন্ত্রী কিভাবে করেন, এটা তো কল্পনা করা যায় না৷''

তিনি বলেন, ‘‘ক্ষমতার মোহে পড়ে তারা সবকিছুকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বেড়াচ্ছে৷ আইনের শাসন, ন্যায়বিচার এসব কিছুকেও তারা ছুড়ে ফেলে দিতে দ্বিধা করবে না৷ তারা মনে করে, একজন মানুষকে গুলি করে মেরে ফেললেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে৷ এভাবে কথা বলাটাই হলো আইনের শাসনের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রকাশ করা৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রাহমান কার্জন এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মন্ত্রী হয়তো মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্সের বিষয়টি বোঝাতে ওই ধরনের কথা বলেনছেন৷ কিন্তু একজন মন্ত্রী যখন প্রকাশ্যে ওই কথা বলেন, তখন আইনের প্রতি মানুষের অশ্রদ্ধা সৃষ্টি হতে পারে৷ আর সরকারের কোনো মন্ত্রণালয় বা সংস্থা গুলি করে হত্যার মাধ্যমে শাস্তি চালু করতে পারে না৷ তাহলে তো দেশে বিচার ব্যবস্থা বলে কিছু থাকে না৷''

অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রাহমান কার্জন আরো বলেন, ‘‘র‌্যাবের ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে গোড়া থেকেই মানবাধিকার কর্মী ও সুশীল সমাজের সদস্যরা কথা বলেছেন৷ এখন প্রমাণিত যে, ক্রসফায়ার কোনো সামাধান নয়৷ তাই মন্ত্রী যেরকম মনে করেন সেরকম আইন বা দেশ চলে না৷ নারায়ণগঞ্জে তো র‌্যাব এর সুযোগ নিয়ে সাত জনকে হত্যা করেছে৷''

‘তাহলে তো দেশে বিচার ব্যবস্থা বলে কিছু থাকে না’

গণশিক্ষা মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এক ফেসবুক পোষ্টে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেছেন, ‘‘মাদকের বিরুদ্ধে কথিত লড়াইয়ের ইতিহাস যাঁরা জানেন, তাঁরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন যে, এই ধরনের বক্তব্য কিসের ইঙ্গিত দেয় এবং তার পরিণতি কী হতে পারে৷ ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতার্তে কমপক্ষে ১২ হাজার নাগরিককে হত্যা করেছেন মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নামে৷ এর মধ্যে অন্ততপক্ষে ৬০ জন শিশুও আছে৷ আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে গত বছরের অক্টোবরে খানিকটা পিছিয়ে এলেও ডিসেম্বরে এই কথিত অভিযান আবার শুরু হয়েছে৷ ‘ওয়ার অন ড্রাগস'-এর আরেক উদাহরণ হচ্ছে মেক্সিকো৷ ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হবার পর ফিলিপে কলডেরোন এই ‘যুদ্ধের' সুচনা করেন৷ তাঁর ক্ষমতার ছয় বছরে মাদক ব্যবসা কমেনি; মোট যে এক লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, তার মধ্যে এক তৃতীয়াংশই মারা গেছে সরকারি বাহিনীর হাতে, ২৮ হাজার মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন, ৮ হাজার অত্যাচারের ঘটনার বর্ণনা পাওয়া গেছে৷ ‘মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের' এই ধারা অব্যাহত রেখেছেন তাঁর উত্তরসূরি এনরিকে পেনা নেটো৷ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ মেক্সিকোর কংগ্রেস এক আইন পাশ করেছে যাতে করে সেনাবাহিনীর হাতে আরো ক্ষমতা দেয়া হয়েছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথিত ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের' ইতিহাস মোটেই সুখকর নয়৷ প্রেসিডেন্ট নিক্সনের আমলে শুরু হওয়া এই নীতি দেশের কৃষ্ণাঙ্গদের জন্যে এক ভয়াবহ অবস্থার তৈরি করেছে৷ বৈষম্যমূলক আইনের পরিণতিতে মাদকের ব্যবসা কমেনি, কেবল আটক ব্যক্তি বেড়েছে৷''

‘অপরাধ দমনে প্রয়োজন আইনের শাসন’

আর মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূল খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একজন মন্ত্রী যখন এইভাবে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা প্রকাশ্যে বলেন, তখন বোঝা যায় রাষ্ট্রের কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা কোন পর্যায়ে আছে৷ আর এই ধরণের হত্যাকাণ্ডে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী উৎসাহ পায় যখন নীতি নির্ধারকরা মাদক নির্মূল বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষার নামে হত্যার প্রেসক্রিপশন দেন৷ এমনকি এর সুযোগ নিয়ে কোনো গোষ্ঠীও চরমপন্থা অবলম্বন করতে পারে৷''

তিনি মনে করেন, ‘‘এতে আসলে অপরাধ দমন হয় না৷ ক্রসফায়ারে দেশে অপরাধ দমন হয়নি৷ অপরাধ দমনে প্রয়োজন আইনের শাসন৷ সংবিধান এবং বিচারের বাইরে কোনো ধরণের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার সাধারণ নাগরিকরাও হন৷ গুম বেড়ে যায়৷ রাজনৈতিক প্রতিক্ষকে দমনে ব্যবহার করা হয়৷ এটা কোনো ভালো ফল বয়ে আনে না৷ ভালো উদ্দেশ্যে করাও হয় না৷''

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান আসলে কী উদ্দেশ্যে মাদক নির্মূলে ‘শুট অ্যাট সাইট'-এর কথা বলেছেন তা জানা যায়নি৷বুধবার তাঁকে একাধিকবার ফোন করে এবং এসএমএস পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য