মাথায় জোরে আঘাত
২ জানুয়ারি ২০১৪‘ট্রোম্যাটিক ব্রেইন ইনজুরি' (টিবিআই) বলতে বোঝায় বাইরে থেকে প্রাপ্ত আঘাতের ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হওয়া৷ আর বলা বাহুল্য, মস্তিষ্কে সামান্য আঘাতও জীবনের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে৷ তবে এটাও সত্য যে মানুষের মস্তিষ্ক রক্ষায় রয়েছে শক্ত খুলি৷ তাই মাথায় আঘাত লাগা মানেই মস্তিষ্কে আঘাত নয়৷
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাথায় প্রচণ্ড জোরে কেউ ঘুসি মারলে বা বেকায়দায় পড়ে গেলে কিংবা দুর্ঘটনার কারণে আঘাত লাগলে মাথার খুলি, মস্তিষ্ক এবং তার মধ্যে থাকা রক্তনালীগুলো আক্রান্ত হতে পারে৷
এ ধরনের আঘাতের প্রভাব মস্তিষ্কের উপর কতটা পড়ছে, তা খুব দ্রুত অনুধাবন করা সহজ নয়৷ মস্তিষ্কে বিপজ্জনক রক্তক্ষরণ কিংবা মস্তিষ্ক ফুলে যাওয়ার মতো ব্যাপার অনেক সময় দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েক দিন পরও ঘটতে পারে৷ তাই চিকিৎসকরা প্রায়ই রোগীর বাহ্যিক পরিবর্তন দেখে আঘাতের গভীরতা বোঝার চেষ্টা করেন৷ যেমন, রোগী কেমন আচরণ করছেন, কারো ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় তিনি চোখ খুলছেন কিনা, তিনি স্বাধীনভাবে হাঁটাচলা করছেন কিনা, রোগীকে হালকা আঘাত করা হলে তিনি কি সাড়া দিচ্ছেন আর আঘাতের পর রোগী কতক্ষণ অচেতন ছিলেন৷
‘ট্রোম্যাটিক ব্রেইন ইনজুরি' অনেকক্ষেত্রে তেমন কোনো ক্ষতির কারণ নাও হতে পারে৷ আবার তা মৃত্যুর কারণও হতে পারে৷ চিকিৎসকরা মস্তিষ্কের জখমের পরিমাণ বিবেচনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায় নির্ধারণ করেছেন৷ প্রথম কিংবা হালকা পর্যায়কে বলা হয় ‘কনকাশন৷' এর অর্থ হচ্ছে, প্রচণ্ড আলোড়ন, আঘাত বা উত্তেজনার ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি৷ এই পর্যায়ে সাধারণত আঘাত লাগার কয়েকদিনের মধ্যেই মস্তিষ্ক আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে৷
রোগী যখন মাথায় আঘাত লাগার পর ১৫ মিনিট বা তার বেশি সময় অচেতন থাকেন, তখন সেই আঘাতের মাত্রাকে দ্বিতীয় পর্যায়ের বিবেচনা করা হয়৷ মাথায় আঘাতের পর ক্ষতির মাত্রা যাচাইয়ের সহজ পন্থা হচ্ছে, রোগী কতক্ষণ ধরে অচেতন আছেন তা বিবেচনা করা৷ রোগী যত বেশি সময় ধরে অচেতন থাকবেন ক্ষতির মাত্রা তত বেশি বলেই ধরে নিতে হবে৷ দ্বিতীয় পর্যায়ের আঘাতের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে চার সপ্তাহের বেশি সময় নিতে পারে৷ তবে এ ধরনের আঘাতের পরিণতিতে রোগীর মনোযোগের সমস্যা হতে পারে, মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা করতে পারে, এমনকি তার আচরণও অস্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে৷ কয়েক বছর পর্যন্ত এসব সমস্যা থেকে যেতে পারে৷
রোগী যদি মাথায় আঘাত লাগার পর এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অচেতন থাকেন, তাহলে তাঁর ‘টিবিআই'-এর মাত্রা তৃতীয় পর্যায়ের বিবেচনা করা হয়৷ আর রোগীর উপর এধরনের আঘাতের পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে৷ বিশেষ করে তাঁর শারীরিক এবং মানসিক – উভয় ক্ষতি হতে পারে৷ এক্ষেত্রে রোগীর হৃদযন্ত্রের কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটতে পারে, তিনি পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন, এমনকি তাঁর ব্যক্তিত্বে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটতে পারে৷ তৃতীয় পর্যায়ের ক্ষতি সাধারণত অপূরণীয় হয়৷
মস্তিষ্কের ক্ষতির মাত্রা পরীক্ষায় এখন ‘ইমেজিং প্রযুক্তি' ব্যবহার করা হয়৷ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোগীর মস্তিষ্কের ত্রিমাত্রিক স্ক্যান করা হয়৷ তখন চিকিৎসকরা সহজেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হচ্ছে কিনা, বা কোথাও ফুলে গেছে কিনা কিংবা কোনো নির্দিষ্ট অংশ আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা বুঝতে পারেন৷
মস্তিষ্কে মাঝারি বা তীব্র আঘাত পাওয়া রোগীদের হাসপাতালের ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে' রাখা হয়৷ তাঁদের মাথায় দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে৷ মানুষের খুলির আকার নির্দিষ্ট৷ কিন্তু দেখা যায়, আঘাতের ফলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হচ্ছে কিংবা কোনো অংশ ফুলে যাচ্ছে৷ তখন চিকিৎসকরা মাথার খুলিতে ফুটা করে মস্তিষ্কের চাপ কমানোর চেষ্টা করেন৷ এক্ষেত্রে রোগীকে ওষুধও দেওয়া হয়৷