1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাটি আর আকাশের মাঝামাঝি নেপালের শিশুরা

২৭ আগস্ট ২০১১

ওদের কোনো দেশ নেই৷ নেই কোনো স্থায়ী বাসস্থান৷ গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হিমালয় কন্যা নেপালের বহু শিশুরই এ অবস্থা৷ একদিন যাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল মাওবাদীরা, আজ তাদেরই দেশহীন অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘ৷

https://p.dw.com/p/12OZI
দেশহীন দুই মিলিয়ন শিশুর বাস নেপালেছবি: Rebecca Henschke

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ১৫ মিলিয়ন মানুষের কোনো দেশ নেই৷ আর নেপালের নতুন সংবিধান মেনে চললে, এদের মধ্যে অন্তত দুই মিলিয়ন শিশুরই বাস নেপালে৷ দেশ না থাকায় তাদের একদিকে যেমন কোনো মৌলিক অধিকার নেই, তেমনই তাদের জন্য নেই কোনো নির্দিষ্ট জাতীয় নিয়মনীতি৷ তাদেরই একজনের কথায়, ‘আমরা বিচরণ করছি মাটি আর আকাশের মাঝামাঝি'৷

কিন্তু প্রশ্ন হলো, কারা এই দেশহীন শিশু? কি রয়েছে নেপালের নতুন ঐ সংবিধানে? জাতিসংঘ জানাচ্ছে, মিশ্র-বিবাহসূত্রে যাদের জন্ম, সেই সব শিশুদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে দেশটি৷ অর্থাৎ শুধুমাত্র যাদের মা-বাবা দু'জনেই নেপালি, তাদেরকেই একমাত্র নেপালের নাগরিক বলে স্বীকৃতি দিয়েছে দেশটি৷ শুধু তাই নয়, মিশ্র-বিবাহসূত্রে জন্ম এমন একটি শিশু যদি পরবর্তীকালে একজন নেপালি নাগরিককে বিয়েও করে, তারপরও তাদের সন্তান নেপালের জাতীয়তা পাবে না, বলছে নতুন সংবিধান৷ জানা গেছে, বিদেশিদের নেপালি নাগরিকত্বের জন্য ১৫ বছর নেপালে বসবাস করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ তাই হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই দেশটির হাজারো শিশু থেকে যাচ্ছে দেশহীন৷

Straßenkinder in Nepal
ছবি: AP

আগামী ৩০শে অগাস্ট জাতিসংঘের ‘দেশহীনতা হ্রাস করা বিষয়ক কনভেনশন'-এর ৫০ বছর পূর্তি৷ অথচ এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩৮টি দেশ এই কনভেশন-এর সদস্যপদ গ্রহণ করেছে৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই ঐ দেশহীন শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘ৷ জানিয়েছে, মাওবাদী গেরিলাদের সঙ্গে থাকা শিশু যোদ্ধাদের কথাও৷ চুক্তির পর জাতিসংঘ এদের পুর্নবাসনের কাজে হাত দিলেও, শৈশবে যারা বই-খাতা ছেড়ে হাতে নিয়েছিল মানুষ মারার অস্ত্র, তারা কতোটুকু স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারে? তাই হাজারো শিশু যোদ্ধাকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও, তারা আবারো সামরিক কিংবা আধাসামরিক বাহিনীতে যোগ দিচ্ছে কিনা – তার ওপর কঠোর দৃষ্টি রেখেছে জাতিসংঘ৷

জাতিসংঘের কথায়, দেশহীনতাতে ভুগছে এই সব শিশুরাও৷ আর অন্যদিকে, এই দেশহীনতা বাড়িয়ে তুলছে দারিদ্র্য, নষ্ট করছে সামাজিক ভারসাম্য, ভাঙছে পরিবারের পর পরিবার৷

উল্লেখ্য, বিশ্বের ১৫ মিলিয়ন দেশহীন মানুষের মধ্যে নেপালের এই শিশুরা ছাড়াও রয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী৷ মিয়ানমারের সামরিক সরকার আরাকানে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং বিতাড়িত করায়, তাদের অনেককেই পাড়ি দিতে হয়েছে বাংলাদেশে৷ তারাও আজ উদ্বাস্তু, শরণার্থী৷ তারাও আজ রয়েছে মাটি আর আকাশের মাঝামাঝি৷

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক