1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মহারাষ্ট্রে পরিবেশবান্ধব গণেশ প্রতিমার ব্যবহার বাড়ছে

৩০ নভেম্বর ২০২২

বাঙালির দুর্গাপূজার মতো মহারাষ্ট্রের গণপতি উৎসবের পরেও প্রতিমা বিসর্জনের ঢালাও কর্মযজ্ঞ দেখা যায়৷ কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয় কমাতে মুম্বাই শহরে কিছু অভিনব উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷ সচেতনতা বাড়িয়ে প্রকৃতি সংরক্ষণের প্রচেষ্টা বাড়ছে৷

https://p.dw.com/p/4KH1S
পরিবেশবান্ধব গণেশ
পরিবেশবান্ধব গণেশছবি: DW

শুধু মুম্বাই শহরেই প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ গণেশ প্রতিমা কেনা হয়৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই বাসায় পুজার জন্য ছোট আকারের গণেশ ঠাকুর৷ সেগুলি সাধারণত প্লাস্টার অফ প্যারিস দিয়ে তৈরি, যা মোটেই নবায়নযোগ্য কাঁচামাল নয়৷ মূর্তির উপরেও কৃত্রিম রং লাগানো হয়, যার মধ্যে সীসা, ক্যাডমিয়াম দস্তা বা লোহার মতো হেভি মেটালও রয়েছে৷

উৎসবের শেষে বিসর্জনের সময় সেটা একটা সমস্যা হয়ে ওঠে৷ দেবতাকে প্রকৃতির কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতীকি সেই পদক্ষেপের ফলে উলটে পরিবেশের ক্ষতি করা হয়৷ নদী, হ্রদ বা সাগরের অবস্থা বেহাল হয়ে ওঠে৷

ক্লিনআপ অ্যাক্টিভিস্ট চিনু কাওয়াত্রা মুম্বাইয়ের সৈকতে তা হাড়ে হাড়ে টের পান৷ স্মৃতিচারণ করতে গিসয়ে তিনি বলেন, ‘‘দুই বছর আগে হাজার হাজার মাছ বিষাক্ত পিওপি উপাদান খেয়ে মরে গিয়ে সমুদ্রতটে ভেসে এসেছিল৷ সেটা ছিল বড় বিপর্যয়৷''

২০২০ সালে সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও এখনো প্লাস্টার অফ প্যারিস দিয়ে তৈরি গণেশের প্রতিমা পাওয়া যায়৷ সেই উপাদান ত্যাগ করে হাজার হাজার মৃৎশিল্পী ও বিক্রেতারা রুজিরুটির হুমকির ঝুঁকি নিতে রাজি নয়৷

তবে কিছু পরিবার অবশ্যই নানা পরিবেশবান্ধব সমাধানসূত্র গ্রহণ করছেন৷ যেমন অরোরা পরিবার প্রাকৃতিক কাদা দিয়ে তৈরি গণেশের মূর্তি ঘরে এনেছে৷ মাটির মধ্যে বীজ মেশানো হয় বলে সেটিকে ‘ট্রি গণেশ' বলা হয়৷ বিসর্জনের বদলে এই পরিবার এক বালতি পানিতে মূর্তিটি ডুবিয়ে দেয়৷ ফলে উর্বর এক কাদা সৃষ্টি হয়, যা চারাগাছের জন্য আদর্শ৷

আবাসনের অন্যান্য পরিবারও ‘ট্রি গণেশ' বেছে নিচ্ছেন৷ ফলে তাঁদের যৌথ বাগান ফুলেফেঁপে উঠছে৷ মুম্বাইয়ের বাসিন্দা ডেউজি অরোরা বলেন, ‘‘আমরা বৃক্ষরোপণের জন্য এমনটা করছি৷ আজ প্রতিটি পরিবার ‘ট্রি গণেশ' আনছে, যাতে তারা বর্জ্য সৃষ্টি না করে, সমুদ্রে টক্সিক রং না ছাড়ে৷ গত সাত বছর ধরে আমরা এমনটা করছি বলে এখানে বেশিরভাগ গাছপালা ‘ট্রি গণেশ'-এর কারণে গজিয়েছে৷ আমাদের আবাসনের বেশিরভাগ গাছপালা এভাবে লাগানো হয়েছে৷''

মহারাষ্ট্রে পরিবেশবান্ধব গণেশ প্রতিমা

অরোরা পরিবার ও তাঁদের প্রতিবেশীরাই শুধু গণপতি উৎসবের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে চিন্তিত নন৷ প্রতিমা পুনর্ব্যবহারের আহ্বান বেড়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষও মূর্তিগুলি উদ্ধার করতে এক পাইলট প্রকল্প শুরু করেছে৷ মুম্বই পৌরসভার সলিড ওয়েস্ট ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ইরফান কাজি বলেন, ‘‘আমাদের সচেতনতা অভিযানের ফল হিসেবে চলতি বছর আমরা অনেক মাটির প্রতিমা পাচ্ছি৷ সেগুলির সংখ্যা বেড়ে গেছে৷ সেটি নিজে থেকে ভেঙে গেলে আমরা মাটি আলাদা করে শুকিয়ে স্থানীয় মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে মিলে পুনর্ব্যবহার করি৷''

সেই মাটি মৃৎশিল্পীদের ওয়ার্কশপে আনা হয়৷ প্রথমে তাঁরা অবশিষ্ট প্লাস্টিক সরিয়ে মূল্যবান কাদামাটি উদ্ধার করেন৷ মাটির তাল আদর্শ অবস্থা পেলে ভাস্কররা হিন্দু ধর্মের অন্যান্য উৎসবের জন্যও প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন৷ যেমন নবরাত্রি উৎসবেই প্রতিমার চাহিদা বেড়ে যায়৷

রিসাইক্লিংয়ের পাশাপাশি পৌর প্রশাসনগুলি মানুষকে প্রাকৃতিক জলাধারে প্রতিমা বিসর্জন বন্ধ করতে উৎসাহ দিচ্ছে৷ চলতি বছর মুম্বাইয়ের প্রশাসন শহরজুড়ে অনেকগুলি কৃত্রিম পুকুর তৈরি করেছে৷ যেমন জুহু এলাকার একটি সৈকতের মুখেই এমন জলাধার তৈরি করা হয়েছে৷ সেখানে অনেক প্রতিমা বিসর্জন হয়৷

সরকারি প্রতিনিধিদের মতে, এই আইডিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ চলতি বছর বিক্রি হওয়া প্রতিমার প্রায় এক-তৃতীয়াংশই এমন জলাধারে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে৷

তবে বাকি প্রতিমাগুলি মুম্বাইয়ের সৈকতে ভেসে ওঠায় দুর্ভাগ্যবশত সামুদ্রিক প্রাণীদের দূরাবস্থা এখনো কাটে নি৷ অ্যাক্টিভিস্টরা আবার ধ্বংসাবশেষ দূর করার কাজে হাত লাগিয়েছেন৷ তবে সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে তাঁরাও কিছুটা উন্নতি লক্ষ্য করেছেন৷ ‘বিচ ওয়ারিয়ার্স' সংগঠনের চিনু কাওয়াত্রা বলেন, ‘‘দেশের তরুণ প্রজন্ম অবশ্যই উৎসবের তাৎপর্য বুঝে পরিবেশবান্ধব উপায়ে সেগুলি পালন সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে৷ দীপাবলি, ঈদসহ অন্যান্য উৎসবের ক্ষেত্রে তাদের বার্তা ছড়িয়ে পড়ায় সমাজে সংবেদনশীলতা বাড়ছে৷''

তবে সেই বার্তা আরো অনেক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং তাদের সক্রিয় করে তুলতে হবে৷ প্রতি বছর মুম্বাই শহরের চারটি হিন্দু উৎসব এবং দেশের বাকি অংশেও এমন উৎসব পরিবেশবান্ধব করে তোলাই হলো লক্ষ্য৷

মারিয়া লেসার/এসবি