মহাজোটের প্রার্থী চূড়ান্ত, ঐক্যফ্রন্টের শনিবার
৭ ডিসেম্বর ২০১৮ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হবে শনিববার৷ আওয়ামী লীগ যে শরিকদের ৬০টি আসন ছেড়েছে, তাতে কি খুশি শরিকরা? এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হ্যাঁ, তাঁরা তো খুশিই৷ প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সামলেছেন৷ তবে সবাই তো খুশি হবে না৷ অনেকেরই অনেক কথা থাকতে পারে৷ আমাদের এই সিদ্ধান্ত যদি কেউ না মানেন, তাহলে এর বাইরেও প্রার্থী দিতে পারেন৷ প্রধানমন্ত্রী অনেক ক্ষুব্ধ হয়েই শরিকদের এটা জানিয়ে দিয়েছেন৷ তবে আমি আশা করি, সবাই এটা মেনে নিয়েই নির্বাচনের মাঠে নামবেন৷''
বিদ্রোহীদের নিবৃত্ত করা প্রসঙ্গে জনাব রাজ্জাক বলেন, ‘‘আমরা তো আশা করছি সবাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন৷ যদি এখনই কেউ না প্রত্যাহার করেন, পরেও প্রত্যাহারের সুযোগ আছে৷ তাঁরা ঘোষণা দিয়ে লিফলেট দিয়ে সরে যেতে পারেন৷''
শুক্রবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে মহাজোটের শরিকদের মধ্যে আসনবণ্টন নিয়ে ব্রিফিং করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের৷ তিনি জানান, বাকি ৬০টি আসনের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি ৫টি, জাসদ (ইনু) ৩টি, জাসদ (আম্বিয়া) ১টি, তরিকত ফেডারেশন ২টি এবং জাতীয় পার্টি (জেপি)-কে ২টি আসন দেওয়া হয়েছে৷ মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টিকে ৪০ থেকে ৪২টি আসন ছাড়ছে আওয়ামী লীগ৷ এর বাইরে মহাজোটের শরিক যুক্তফ্রন্টকে ৩টি আসন দেওয়া হয়েছে৷ বাকি যে ২/৪টি আসন এখনো অমীমাংসিত আছে, শুক্রবার রাতের মধ্যেই এর সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা তাঁর৷
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি পেয়েছে ৫টি আসন৷ এই পাঁচটিতে সন্তুষ্ট ওয়ার্কার্স পার্টি? প্রশ্ন ছিল দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার কাছে৷ জবাবে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘না, আমরা সন্তুষ্ট নই৷ আমাদের কর্মীরা খুবই ক্ষুব্ধ৷ ন্যায্যতার ভিত্তিতে আসনবণ্টন হলে আমরা আরো বেশি আসন পেতাম৷ যা-ই হোক, তারপরও এই নির্বাচনটাকে আমরা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নির্বাচন হিসেবেই দেখছি, তাই আমাদের যেটা দেয়া হয়েছে সেটা মেনে নিয়েই আমরা নির্বাচনের মাঠে নামছি৷ ১৪ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে আমরা জোটকে সহযোগিতা করে যাবো৷''
এদিকে যে ১৭টি আসনে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র নিয়েছিল, সেসব আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ৷ তাঁরা হলেন, শিরীন শারমিন চৌধুরী (রংপুর-৬), নিজাম উদ্দিন জলিল (জন) (নওগাঁ-৫), শহিদুল ইসলাম (বকুল) (নাটোর-১), বি এম কবিরুল হক (নড়াইল-১), ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু (বরগুনা-১), আ স ম ফিরোজ (পটুয়াখালী-২), তানভির হাসান (ছোট মনির) (টাঙ্গাইল-২), আবুল কালাম আজাদ (জামালপুর-১), মোজাফফর হোসেন (জামালপুর-৫), সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (কিশোরগঞ্জ-১), হাবিবুর রহমান মোল্লা (ঢাকা-৫), হাজী মো. সেলিম (ঢাকা-৭), আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) (ঢাকা-১৭), ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর (চাঁদপুর-১), নুরুল আমিন (চাঁদপুর-২), মুহাম্মদ শফিকুর রহমান (চাঁদপুর-৪) ও এ কে এম শাহজাহান কামাল (লক্ষ্মীপুর-৩)৷
জোটের চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা হলেও জাতীয় পার্টি অনেকটাই নীরব৷ বেশ কিছুদিনের অসুস্থতা শেষে বৃহস্পতিবার পার্টি অফিসে গিয়ে বেশ ক্ষোভের সঙ্গে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বক্তৃতা দিয়েছেন৷ সেখানে তিনি চিকিৎসা করতে দেয়া হচ্ছে না, এমন অভিযোগও তুলেছেন৷ তবে মহাজোটের শরিক হিসেবে আওয়ামী লীগ তাদের যে আসন দিচ্ছে তা নিয়ে কোনো কথা বলেননি তিনি৷ রওশন এরশাদও এ বিষয়ে একেবারে চুপ৷ তিনি কোনো কথাই বলছেন না৷
আওয়ামী লীগের মুখপাত্র ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তাঁদের জানিয়েছে দিয়েছেন, এই ৪০-৪২টি আসনের বাইরে যাঁদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, তাঁরা যেন প্রত্যাহার করে নেন৷ সেটা যদি তাঁরা না করেন, না করতে পারেন৷ তাতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই৷ তবে আমরা আশা করছি, তাঁরা প্রত্যাহার করে নেবেন৷''
এদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করার কথা ছিল শুক্রবার বিকেল ৩টায় সাংবাদিক সম্মেলন করে৷ কিন্তু তার আগে দুপুরে প্রার্থী ঘোষণা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে৷ বৃহস্পতিবার রাতে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আজ বিকেল ৩টায় তাঁরা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ঘোষণা করবে৷ দুপুরে সিদ্ধান্তটি বাতিল করা হয়৷ এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি তাদের প্রার্থী ঘোষণা করতে চেয়েছিল সেটিও ঐক্যফ্রন্টের আপত্তির কারণে বাতিল করা হয়৷ পরে বিকেল ৫টার দিকে হুট করেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০৬ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী ঘোষণা করেন৷ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থিতা শনিবার ঘোষণা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রার্থিতা নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই৷ হাতে অনেক সময় আছে, সবাই দলের নির্দেশেই চলবেন৷'' সবগুলো আসনে একাধিক প্রার্থী আছে? একজনকে রেখে অন্যদের বসিয়ে দেয়া কতটা চ্যালেঞ্জিং? জবাবে জনাব আহমেদ বলেন, ‘‘এটা কোনো চ্যালেঞ্জই না৷ সবকিছু ঠিক আছে৷ তবে নির্বাচন কমিশনের আচরণ এখনও নিরপেক্ষ না৷ তারা মনে হচ্ছে সরকারি দলের নির্দেশেই কাজ করছে৷ তারা নিরপেক্ষ আচরণ করলে আমরা বিপুল ভোটে জয়ী হবো৷''
ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের সঙ্গে বিএনপির সমঝোতা এখন কোন পর্যায়ে জানতে চাইলে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে৷ এখন আর কোনো সমস্যা নেই৷ সবাইকে তো আর খুশি করা যাবে না৷ তারপরও একটা সমঝোতায় আমরা পৌঁছেছি৷ শনিবার আমরা ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করব৷ আসলে কে কতটা আসন পেলো সেটা এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ না৷ আমরা চেয়েছিলাম একটা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে, সেটা করতে আমরা সক্ষম হয়েছি৷ এটাই মূল কথা৷''
প্রসঙ্গত, গত ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়৷ ওই তফসিল অনুযায়ী, ২৩ ডিসেম্বর ভোটের দিন নির্ধারিত হয়৷ পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আবেদনের ভিত্তিতে ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে এক সপ্তাহ পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়৷ পুনঃতফসিল অনুযায়ী প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ ছিল ২৮ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই শেষ হয়েছে ২ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ ডিসেম্বর এবং ভোট গ্রহণের তারিখ ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে৷