মহাকাশে বিকিরণের ঝুঁকির মাত্রা বুঝতে যাচ্ছে পুতুল
২৩ মার্চ ২০২০কোলন শহরে জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টার ডিএলএফ-এ হেলগা ও জোহর নামের দুই ফ্যান্টম বা পুতুল মহাকাশে যাবার অপেক্ষায় রয়েছে৷ চাঁদে পাড়ি দেবার সময় মহাকাশচারীদের উপর বিকিরণ কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, বিকিরণ সংক্রান্ত পদার্থবিদ টোমাস ব্যার্গার এভাবে সে বিষয়ে আরও জ্ঞান অর্জন করতে চান৷ তিনি বলেন, ‘‘ফ্যান্টম আসলে একটা মানুষ, তবে তার দেহ প্লাস্টিকের তৈরি৷ তাই সেটি বিকিরণের প্রভাব মাপার আদর্শ পরীক্ষামূলক ব্যক্তি৷''
পরীক্ষামূলক এই দুই মডেল একাধিক স্তর দিয়ে তৈরি৷ প্রত্যেক স্তরে মানুষের হাড়গোড়, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও সংযোজক টিস্যুর নকল রয়েছে৷ মানুষের শরীরের কাঠামো হুবহু নকল করতে ফ্যান্টমের শরীরে প্লাস্টিকের ঘনত্বের মধ্যেও পার্থক্য রাখা হয়েছে৷ টোমাস ব্যার্গার মনে করেন, ‘‘আমাদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সমস্যা হলো, বিকিরণের মুখে সেগুলি সমান সংবেদনশীল নয়৷ যেমন যে সব অংশে রক্ত সৃষ্টি হয়, সেগুলি ত্বকের তুলনায় বেশি সংবেদনশীল৷ মহাকাশে মানুষ বা মহাকাশচারী হিসেবে ঝুঁকির মাত্রা নির্ধারণ করতে হলে আমাকে নিখুঁতভাবে জানতে হবে, আমার ত্বক, ফুসফুস, জননতন্ত্র, সুষুম্না কাণ্ডের উপর কতটা বিকিরণ হচ্ছে৷''
পুতুলের শরীরের মধ্যে ভরা ক্রিস্টাল বা স্ফটিকের মাধ্যমে মহাকাশযাত্রার সময় তেজস্ক্রিয় বিকিরণ পরিমাপ করা হবে৷ পুতুলের শরীর জুড়ে আড়াই হাজারেরও বেশি স্ফটিকখণ্ড বসানো রয়েছে৷ পরিমাপের মাধ্যমে বিকিরণের এক ত্রিমাত্রিক চিত্র উঠে আসছে৷ কোন অঙ্গের উপর ঠিক কতটা বিকিরণ হচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷
সেই তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা চন্দ্রযাত্রার সময়ে মহাকাশচারীর উপর ক্যানসারের সম্ভাব্য ঝুঁকি হিসেব করতে পারেন৷ টোমাস ব্যার্গার বলেন, ‘‘আমরা চাঁদের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিচ্ছি৷ এই প্রথম ফ্যান্টমের মাধ্যমে আমরা মহাকাশের এতটা গভীরে যাচ্ছি৷ সেই যাত্রার জন্য তৈরি মহাকাশযানেই ফ্যান্টম থাকছে৷ এভাবে বিকিরণ মাপার কাজ কখনো হয়নি৷''
ওরিয়ন নামের যানের এই যাত্রাপথে গবেষকরা বিকিরণের আরও একটি ঝুঁকি পরিমাপ করবেন৷ এমন ঝুঁকি বিরল হলেও তা মহাকাশচারীদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক৷ সূর্যের মধ্যে আলোড়নের সময় মহাকাশে প্রোটনের যে বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ে, সেটি মানুষের জন্য সত্যি বিপজ্জনক৷ এমন সৌর ঝড় মহাকাশযানের উপর আছড়ে পড়লে কী করা উচিত, নাসার এক ভিডিওতে তা দেখানো হয়েছে৷
এমন পরিস্থিতিতে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে পানি বা প্লাস্টিকভরা পাত্র দিয়ে এক প্রতিরক্ষা বলয় তৈরি করতে হয়৷ যতক্ষণ সৌর ঝড় চলে, মহাকাশচারীদের তার মধ্যে গুটিসুটি মেরে বসে থাকতে হয়৷ বিকিরণ থেকে সুরক্ষা পেতে আধুনিক জ্যাকেটও ব্যবহার করা যেতে পারে৷ ২০২০ সালে ওরিয়ন যানের অভিযানের সময় দুটি পুতুলই এমন জ্যাকেট পরে থাকবে৷ তখন সেই জ্যাকেটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হবে৷
বিকিরণ গবেষক হিসেবে টোমাস ব্যার্গারের কাছে হেলগা ও জোহরের যাত্রা অভিনব এক সুযোগ৷ এই অভিযানের আওতায় হেলগা ও জোহরকে চাঁদে পাঠিয়ে আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে৷
মাইকে শেফার/এসবি