মহাকাশে আবর্জনা
১৯ জুন ২০১৭আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস গত ১৪ বছর ধরে পৃথিবী পরিক্রমা করে চলেছে – ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায়, ঘণ্টায় ২৮,০০০ কিলোমিটার গতিতে৷ কেফলারের একটি আস্তরণ আইএসএসকে মাইক্রো-মেটেওরাইটের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে বাঁচাচ্ছে৷ কিন্তু যেসব নভোচররা মাসের পর মাস মহাকাশযানটিতে কাটান, তাঁদের পক্ষে সবচেয়ে বড় বিপদ হলো মহাকাশের ‘ডেব্রি(স)' বা ‘স্ক্র্যাপ', অর্থাৎ বাতিল বা অকেজো স্যাটেলাইটের টুকরো৷
আইএসএস তীব্র গতিতে মহাশূন্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, আবার ‘মহাকাশের আবর্জনা'র গতি রোধ করার জন্য বাতাসের প্রতিরোধ পর্যন্ত নেই৷ কাজেই ধাক্কা লাগলে যে কী ঘটতে পারে, তা সহজেই কল্পনীয়: অতি ক্ষুদ্র ধাতব টুকরোগুলোও মহাকাশযানের বহিরাবরণে বড় বড় বিপজ্জনক ফুটো করে দিতে পারে৷
অ্যাস্ট্রো-ফিজিসিস্ট ড. হাউকে ফিডলারের মতে, ‘‘রকেটের বিভিন্ন নিঃশেষিত পর্যায় অথবা অকেজো স্যাটেলাইটগুলোকে সরাতে না পারলে, কোনো-না-কোনো সময় এই ‘মহাকাশ আবর্জনার' পরিমাণ মারাত্মক রকম বেড়ে যাবে৷ আপাতত প্রায় ২৮,০০০ এ ধরণের ধাতুর টুকরো ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু ভবিষ্যতে এমন দাঁড়াতে পারে যে, স্যাটেলাইটকে কক্ষপথে রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে৷''
কৃত্রিম উপগ্রহগুলি একটা জালের মতো পৃথিবীকে জড়িয়ে রেখেছে – মাধ্যাকর্ষণের ফলে তাদের বা পৃথিবীর এ বাঁধন থেকে মুক্তি নেই৷ মোবাইল টেলিফোন থেকে শুরু করে জিপিএস বা টেলিভিশন– সব কিছু চলে এই স্যাটেলাইটগুলির কল্যাণে৷
‘মহাকাশ আবর্জনা' সরানোর পন্থা
একটি উপায় হলো বাতিল স্যাটেলাইটগুলোকে টেনে নিয়ে যাওয়া৷ এই প্রযুক্তির মাধ্যমে যেসব অকেজো স্যাটেলাইট মহাকাশে অযথা ঘুরপাক খাচ্ছে, তাদের আবার কোনো এক দিকে ঠেলা বা চালানো যাবে৷ ড. ফিডলার জানালেন, ‘‘জিও-স্টেটশনারি স্যাটেলাইটটির নাকের ডগায় নল লাগিয়ে সেটিতে এমনভাবে জ্বালানি ভরা হবে যে, তাকে আবার চালানো সম্ভব হবে৷''
পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তা কাজ করে বলে দেখা গেছে৷ বিশেষ করে টেলিভিশনের স্যাটেলাইটগুলোকে নিয়ন্ত্রিতভাবে সরানো যাবে৷ লক্ষ্য হলো, স্যাটেলাইটগুলিকে আরো বেশ কয়েক বছর ধরে বহাল রাখা৷ আর কিছু করা সম্ভব না হলে, শুধু তখনই স্যাটেলাইটটিকে ভূপৃষ্ঠের দিকে টেনে নিয়ে আসা হবে৷
ড. ফিডলার বললেন, ‘‘আর যেটা করতে হবে, সেটা হলো, ‘ডেওস' অভিযানের জন্য একটা সাইমুলেশন৷ ডেওস হলো একটি টেন্ট্যাকল বা সাঁড়াশি৷ এই সাঁড়াশি হাত দিয়ে নড়বড়ে স্যাটেলাইটটিকে ধরে, আগে তাকে স্থিতিশীল করতে হবে – তারপর তার ভূপৃষ্ঠে পতনের ব্যবস্থা করতে হবে৷''
ষদি কোনো স্যাটেলাইট মহাকাশে দুর্ঘটনায় পড়ে, তবে তাকেও এভাবেধরা ও মেরামত করা যাবে কিংবা কক্ষপথ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে৷ অর্থাৎ এ ধরণের স্যাটেলাইট কক্ষপথ থেকে সরে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পৃথিবীর উপর আছড়ে পড়ে বিপদ সৃষ্টি করতে পারবে না৷ আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের মহাকাশচারীরাও আর কিছুটা স্বস্তির সঙ্গে কাজ করতে পারবেন৷