মমতা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, চাকরিপ্রার্থীরা দেখাতে পারলেন না
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪সচরাচর কোনো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিক্ষোভ দেখান না। কারণ, তিনি নিজেই প্রশাসনিক প্রধান। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধেই বরং রাজ্যে বিক্ষোভ-অবস্থান হয়। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় আগেও অবস্থান-বিক্ষোভ করেছেন। আবার করছেন। শুক্রবার দুপুরে তিনি কলকাতার রেড রোডে বিক্ষোভ মঞ্চে গিয়ে পৌঁছান। তার পরনে ছিল সাদা সাড়ি। তার উপরে প্রতিবাদের চিহ্নস্বরূপ কালো শাল। ৪৮ ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ অবস্থান করবেন তিনি।
মমতা বিক্ষোভ শুরু করার পরই দলের সাংসদ, বিধায়ক, পুরপিতা ও নেতারা সেখানে ভিড় জমান। নারী নেত্রীদের পরনে ছিল কালো সাড়ি বা কালো শাল। পুরুষেরা পরেছিলেন কালো পাঞ্জাবি এবং কালো জহর কোট বা জ্যাকেট। মমতা যেখানে বসেছেন, তার পিছনে একের পর এক পোস্টার ছিল। তাতে লেখা কেন্দ্রের বঞ্চনা তারা মানছেন না। রাজ্যকে তাদের পাওনা অর্থ দিতে হবে।
মমতার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে একশ দিনের কাজের পাওনা অর্থ দিচ্ছে না। সেই টাকা দেয়ার দাবি নিয়েই তিনি বিক্ষোভে বসেছেন। এর আগে এই দাবি নিয়ে দিল্লিতেও গিয়েছেন। দিল্লিতেও তৃণমূলের বিক্ষোভ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কিছুদিন আগেও দেখা করে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তারপরেও কিছু হয়নি। কেন্দ্র টাকা আটকে রেখেছে।
রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ঠিক করে দিয়েছেন, একশ দিনের কাজের কার্ড যাদের কাছে আছে, তাদের মধ্যে কে আসল, কে জাল তা ঠিক করবে চার জন সদস্যর কমিটি। তার মধ্যে সিএজি, কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রতিনিধি থাকবেন। তাদের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কী করে কেন্দ্র অর্থ দেবে?
মমতা প্রশাসনিক কাজ করবেন
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি বিক্ষোভ অবস্থানে বসে প্রসাসনিক কাজও করবেন। সেজন্য আলাদা জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে বসেই দরকারে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক কাজ করতে পারবেন।
মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, এই বিক্ষোভে সামিল হতে যারা মিছিল করে আসবেন, তারা যেন জনগণের ভোগান্তির কারণ না হন। গাড়ি চলাচলের ব্যস্ত রাস্তা ব্যবহার না করার নির্দেশও দিয়েছেন মমতা।
অন্য বিক্ষোভকারীদের তুলে দেয়া হলো
মুখ্যমন্ত্রী নিজে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানালেও, তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের অনুমতি দিলো না পুলিশ। গ্রুপ ডি চাকরিপ্রার্থীরা এই বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। তারা বিক্ষোভ দেখাতে চাইলেও পুলিশ তাদের তুলে দেয়। প্রিজন ভ্যানে করে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আর চাকরিপ্রার্থীরা ভ্য়ানের ভিতর থেকে চিৎকার বলে বলতে থাকেন, তাদের চাকরি দিতে হবে। এই দাবি নিয়েই তারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
ডিএ চাকরিপ্রার্থীরা মুখ্যমন্ত্রীর বিক্ষোভমঞ্চের উল্টোদিকে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য সেনার কাছে অনুমতি চেয়েছে।
বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার নাম করে এসব নাটক করে কোনো লাভ হবে না।
কেন্দ্রের অর্থ এলো
মুখ্যমন্ত্রী বিক্ষোভে বসার একদিন আগে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে জলজীবন মিশনে এক হাজার কোটি টাকা এসেছে। এই অর্থ দিয়ে বাড়ি বাড়ি পরিশ্রুত জল সরবরাহ করার কথা।
জলজীবন মিশন কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ প্রকল্প। এখানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার দুই তরফই সমান অর্থ দেয়।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কী কথা হয়েছে?
সিপিএম নেতা ও আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেছেন, ''মুখ্যমন্ত্রী আর কতবার বিক্ষোভ দেখাবেন? তিনি তো এখনো একশ দিনের কাজ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগের জবাব দেননি। উল্টে তিনি এইভাবে বিক্ষোভ রাজ্যের সর্বনাশ করছেন। তাঁকে জানাতে হবে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি কেন দেখা করতে গেছিলেন? তাদের কী কথা হয়েছিল''?
বিকাশের অভিযোগ, ''মুখ্যমন্ত্রী যা করছেন, তা নাটক ছাড়া আর কিছু নয়।''
আবার দিল্লি আসছেন
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার দিল্লিতে আসছেন। আগামী মঙ্গলবার তার দিল্লি আসার কথা। তিনি দিল্লিতে জরুরি বৈঠক করবেন বলে জানানো হয়েছে। তবে কার সঙ্গে বৈঠক করবেন তা জানানো হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, মমতা কি দিল্লি এসে আবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন?
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এবিপি আনন্দ)