দড়ি টানাটানির খেলা
২ জুলাই ২০১৩মানবিক ক্ষয়ক্ষতির বদলে মন্দির নির্মাণ নিয়ে কেন এই বিতর্ক? আসলে বিশ্বাসই ধর্মের প্রাণ, বাদ বাকিটা মানুষের আবেগ৷ আর এই আবেগকেই কাজে লাগাতে চায় রাজনৈতিক দলগুলি৷ ধর্মের মধ্যেও যে আছে আবেগের জায়গা, গুজরাটের হিন্দুত্ববাদী মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তরাখন্ড বিপর্যয়ের পর গুজরাটিদের উদ্ধার করতে গিয়ে যেন সেই বার্তাই দিয়ে এলেন৷ প্রায় ১৫০০ গুজরাটিদের উদ্ধার করার পর বন্যা-বিধ্বস্ত কেদারনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণ করে দেবার প্রস্তাব দিলেন তিনি৷
বিপুল মানবিক ক্ষয়ক্ষতির দিকে সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে মন্দির পুনর্নির্মাণকে অগ্রাধিকার দিতে গেলেন কেন মোদী? ভারতের ৮৫ শতাংশ হিন্দুর ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগাতে? স্বভাবতই বিরুদ্ধদল কংগ্রেস সেটা কী হতে দিতে পারে? অবশ্যই না৷ উত্তরাখন্ডের কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী বহুগুণা তাই কড়া করে শুনিয়ে দেন, মন্দির পুনর্নির্মাণ নিয়ে তাঁর মাথা ঘামানোর দরকার নেই৷ সংবাদ মাধ্যমের কাছে তাঁকে বলতে হলো, কেদারনাথ মন্দির বা রাজ্যের অন্য কোনো ধর্মীয়স্থান রাজনৈতিক ইস্যু হতে পারে না৷ এটা আবেগের ইস্যু৷ মন্দির নিয়ে-রাজনৌতিক ফায়দা তোলা অনভিপ্রেত৷ তাকে প্রশ্রয় দেয়া যায় না৷ কেদারনাথ মন্দির বা অন্য ধর্মীয়স্থলের পুনর্গঠনের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের এবং রাজ্য সরকার তা পালন করবে৷
কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী মন্দির ইস্যুকে নস্যাৎ করে দিলেও উত্তরাখন্ডের ট্র্যাজিডির অভিঘাত মনে করিয়ে দেয় ধর্মের যত মাহাত্ম্য থাকুক না কেন ভারতীয় রাজনীতির ডিএনএ হলো ধর্ম৷ উত্তরাখন্ডের ক্ষয়ক্ষতি তে স্রেফ ইট পাথরের তৈরি কেদারনাথ মন্দিরের কাঠামো নয়, রাজ্যের দুর্গম এলাকায় পড়ে থাকা হাজার হাজার মানুষের লাশ যা ব্যাপক মড়কের কারণ হতে পারে তাঁদের উদ্ধার করে দাহ করা৷
হাজার হাজার স্থানীয় লোকজন যাঁদের জীবন ও জীবিকা বিপন্ন তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা৷ এখনো হাজার দেড়েক মানুষ আটকা পড়ে আছে, নিখোঁজ রয়েছে হাজার তিনেক তাঁদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করা৷ তিন হাজার গ্রাম এখনো বিচ্ছিন্ন সেইসব গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা৷ অথচ সেইসব বিষয়কে অগ্রাধিকার না দিয়ে ধর্মীয় আবেগ নিয়ে দড়ি টানাটানির খেলা চলছে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে৷ প্রসঙ্গত, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ-রামজন্মভূমিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় রাজনীতির বিবাদ ভারতের ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল৷ তা থেকেও আমরা শিক্ষা নেইনি৷ মোট কথা, ধর্মের রাজনীতিতে যেন স্থানীয় মানুষজনদের জীবন ও জীবিকা হারিয়ে না যায়৷
এহ বাহ্য, বিজেপির নেতারা কেন দুর্যোগস্থল পরিদর্শনে যাননি, তা নিয়ে শুরু হয়েছে দোষারোপ পাল্টা দোষারোপ৷ বিজেপির অভিযোগ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞার জন্যই তাঁদের যেতে দেয়া হয়নি৷
বৈজ্ঞানিক এবং পরিকল্পিতভাবে কেদারনাথ মন্দিরের পুনর্নির্মাণ এবং উন্নয়নের জন্য তড়িঘড়ি একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে কংগ্রেস সরকার৷ তাতে আছে পরিবেশবিদ, পুরাতত্ববিদ৷ কমিটিকে দেয়া হয়েছে আইনি ক্ষমতাও৷