1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মধ্যপ্রদেশ কি বিজেপি-র হাতছাড়া হতে পারে?

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
২১ আগস্ট ২০২৩

আর মাস কয়েকের মধ্যেই চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। সেখানে মধ্যপ্রদেশ নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত বিজেপি নেতৃত্ব।

https://p.dw.com/p/4VOV6
মধ্যপ্রদেশের মুখ্মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান।
শিবরাজ নয়, মোদীকে সামনে রেখেই মধ্যপ্রদেশে ভোটে যাবে বিজেপি। ছবি: UNI

উত্তর ভারতের তিন রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থান এবং দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানাতে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। এর মধ্যে বিজেপি-র কাছে আছে একটি মাত্র রাজ্য, মধ্যপ্রদেশ। সেটাও অবশ্য তারা গত বিধানসভা ভোটে জিততে পারেনি। পরে জ্যোতিরাদিত্য ,সিন্ধিয়া বিজেপি-তে যোগদানের পর তার অনুগামীরা কংগ্রেস ছাড়েন। ফলে সরকার সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে ও বিজেপি সরকার গঠন করে।

এবার সেই মধ্যপ্রদেশে বিজেপি সরকার গঠন করা নিয়ে সংশয়ে। সূত্র জানাচ্ছে, বিজেপি নেতৃত্ব প্রতিটি রাজ্য নিয়ে একাধিক অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা করেছে। এরকম সমীক্ষা প্রতিটি ভোটের আগে ও প্রার্থী বাছাইয়ের আগে একাধিকবার করা হয়। পেশাদার সংস্থাকে দিয়ে যেমন করানো হয়, তেমনই দল ও সঙ্ঘপরিবারের কর্মীদের কাছ থেকেও পরিস্থিতি জানতে চাওয়া হয়।

সূত্র জানাচ্ছে, মধ্যপ্রদেশ নিয়ে সমীক্ষা অনুকূল নয়। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ২৩০ সদস্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৭০-৮০ আসনে জেতার ব্যাপারে নিশ্চিত। মধ্যপ্রদেশে পিছিয়ে পড়ার কারণ, প্রধাণত অ্যান্টি ইনকামবেন্সি বা ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার প্রবণতা।

ছত্তিশগড়েও বিজেপি জয়ের আশা বিশেষ দেখছে না। সেখানে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল রীতিমতো জনপ্রিয় নেতা এবং গত প্রায় পাঁচ বছর তিনি যেভাবে চলেছেন, তাতে কংগ্রেস অপেক্ষাকৃত ভালো জায়গায় আছে। 

তবে রাজস্থানে জয় নিয়ে বিজেপি প্রায় নিশ্চিত। রাজস্থানে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট প্রচুর জনমোহিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু অশোক গেহলট বনাম শচিন পাইলটের লড়াইয়ের ফলে এই রাজ্য কংগ্রেসের হাতছাড়া হতে পারে।

বিজেপি-র সমীক্ষা অনুযায়ী, তেলেঙ্গানায় কংগ্রেস ও টিআরএসের মধ্যে তীব্র লড়াই হতে পারে। সেখানেও ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ টিআরএসের বিপক্ষে কাজ করছে।

বিজেপি-র পরিকল্পনা

এই অবস্থায় বিজেপি-র পরিকল্পনা হলো, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড ও রাজস্থানে তারা মোদীকে সামনে রেখেই ভোটে লড়বে। মধ্যপ্রদেশের ক্ষেত্রে তাদের ট্যাগলাইন হবে, 'মধ্যপ্রদেশকা মন মে মোদী হ্যায়,' যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, 'মধ্যপ্রদেশের মনের ভিতর মোদী আছেন'।

ফলে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে সামনে রেখে ভোটে যাবে না বিজেপি।

দ্বিতীয় কৌশল হলো হিন্দুত্বকে সামনে নিয়ে আসা। বারাণসীতে কাশী-বিশ্বনাথ মন্দিরের মতো উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরেও করিডোর তৈরি হচ্ছে। তার প্রথম পর্বের কাজ শেষ হওয়ার পর গত অক্টোবরে উদ্বোধন করেছেন মোদী। বিজেপি-র প্রচারে সেই মন্দির ও হিন্দুত্বের বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে।

তাছাড়া বিজেপি ইতিমধ্যেই তারা বেশ কিছু প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছে। যে সব কেন্দ্রে বিজেপি কখনো জেতেনি বা জিতলেও এক-দুইবারের বেশি জেতেনি, সেখানে প্রার্থীদের নাম জানিয়ে দিয়েছে তারা।

রাজস্থানের ক্ষেত্রেও তারা মোদীকেই ,সামনে রাখছে। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরারাজেকে প্রচার বা ইস্তাহার কোনো কমিটিতেই রাখা হয়নি। ফলে দল জিতলেও সেখানে বসুন্ধরারাজেকে মুখ্যমন্ত্রী করার সম্ভাবনা কম।

কেন এই অবস্থা?

মধ্যপ্রদেশে বিজেপি-র সরকার আছে। তারপরেও সেখানে তাদের অবস্থা কেন খারাপ? প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''ভুলে যাবেন না, মধ্যপ্রদেশে গতবারও প্রথমে বিজেপি জেতেনি। সেবার তো শিবরাজকে সামনে রেখে ভোটে লড়েছিল বিজেপি। মানুষ তখনো শিবরাজকে প্রত্যাখান করেছিল। এখনো তারা শিবরাজের বিরোধী।''

শরদের বক্তব্য, ''সরকার গঠন করার পরেও শিবরাজ তার মন্ত্রিসভায় পুরনো মুখেদেরই রেখেছিলেন। তিনি এমন কিছু করেননি, যাতে জনপ্রিয়তা বাড়ে।  তিনি এখন প্রচুর জনমোহিনী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কংগ্রেসের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথও একই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ফলে তাতে কাজ হচ্ছে না। তাই মোদী-ভরসায় থাকতে হচ্ছে বিজেপি-কে।''

আরেক প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য মনে করেন, ''কর্ণাটক ও হিমাচলে জয়ের পর কংগ্রেস আগের থেকে অনেক বেশি চাঙ্গা। দেখে মনে হচ্ছে, রাহুল গান্ধীও আর পাপ্পু-র লেভেল থেকে উঠে এসেছেন। তিনি দেশের মানুষের একাংশের মনে দাগ কাটতে পেরেছেন। তিনি আক্রমণে যাচ্ছেন, সেটাও শালীনতা বজায় রেখে।''

জয়ন্তর মতে, ''এবার বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোটও এখনো পর্যন্ত ভালোভাবে চলছে। আর নামটাও মানুষের মনে দাগ কাটার মতো। মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের ক্ষেত্রে এটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে।''

রাজস্থান নিয়েও কংগ্রেস চেষ্টা করছে। একদিন আগেই ওয়ার্কিং কমিটিতে বেশ কয়েকজন নেতাকে নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম শচিন পাইলট। ফলে অশোক গেহলটকেও একটা বার্তা দিয়েছেন খাড়গে।

এমনিতে রাজস্থানে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ক্ষমতার বদল হয়। সেখানে বিজেপি-র ক্ষমতায় আসার একটা সুযোগ থাকছে।

তেলেঙ্গানা নিয়েও জয়ন্তর মতে, ''কংগ্রেসের চাঙ্গা হয়ে ওঠা এবং রাহুল সম্পর্কে মানুষের কিছুটা মতবদল এর একটা অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া কে  চন্দ্রশেখর রাও ১০ বছর ধরে শাসন করছেন। তার বিরুদ্ধে মানুষের মনে ক্ষোভ জমতেই পারে।''

তেলেঙ্গানা নিয়ে

তেলেঙ্গানায় কংগ্রেসের অভ্যন্তরীন সমীক্ষা বলছে, ১১৯ আসনের বিধানসভায় তারা ৪১টি আসনে জেতার জায়গায় আছে।  ৩৬টি আসনে তাদের জেতার সম্ভাবনা নেই। ৪২টি আসনে কংগ্রেসের সঙ্গে কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতি ও বিজেপি-র কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এখন সেখান থেকে ২০টি বা তার বেশি আসনে জেতা হলো কংগ্রেসের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।

বিজেপি-র সমীক্ষা রিপোর্টও বলছে, কংগ্রেসের সঙ্গে বিআরএসের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এই অবস্থায় বিজেপি চায় না যে, দক্ষিণের আরো একটি রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসুক। তাই তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিআরএসকে সমর্থন করবে।

তুল্যমূল্য লড়াই

চার রাজ্যের লড়াই খুব কৌতূহলকর ও জমজমাট হতে চলেছে। ভারতে লোকসভা ভোটের আগে মানুষের রায় জানার একটা সুযোগও থাকছে। গতবার কংগ্রেস রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এও ছত্তিশগড়ে জিতেছিল। তারপর লোকসভায় তারা রাজস্থান থেকে একটা আসনও পায়নি। মধ্যপ্রদেশ থেকেও বিজেপি সিংহভাগ আসনে জিতেছিল। ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস  বেশি আসনে জিতেছিল। ফলে লোকসভা ও বিধানসভার লড়াই, তার বিষয় সবই আলাদা। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে যদি চার রাজ্যের মধ্যে এক বা একাধিক রাজ্যে পালাবদল হয়, তবে তার একটা আলাদা রাজনৈতিক তাৎপর্য থাকবে।