মদ ও মাদকের আসক্তি দূর করতে প্রাণী সহায়ক হতে পারে
১২ জানুয়ারি ২০২২আলেক্সান্ডার স্পানিয়ার তিন মাস মাদক সেবন করেন নি৷ তাঁর কাছে এটা সত্যি বড় ব্যাপার৷ নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আমার অবস্থা একেবারে তলানিতে ঠেকেছিল৷ টাকা জোগাড় করতে খালি বোতল জমাতাম৷ মদ খেতেই হবে! প্রতিদিন চাই৷ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর, মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলেও আমি মদ্যপান শুরু করতাম৷ না করলেই অস্থির লাগতো৷ দিনে তিন থেকে চার বোতল ভোদকা, ওয়াইন৷ প্রতিদিনই খেতাম৷''
তাঁর জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় ছিল সেটা৷ ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে আলেক্সান্ডার বলেন, ‘‘প্রায় তিনবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি৷ দুই বার মাত্রাতিরিক্ত হেরোইন সেবন করে৷ আগে হেরোইনে আসক্ত ছিলাম৷ শেষ বার ১১ দিন কোমায় ছিলাম৷''
লিন্ডা ক্লাইন ও স্টুটে নেলি ৪৫ বছর বয়সি এই ব্যক্তিকে সাহায্য করেছিলেন৷ লিন্ডা বলেন, ‘‘সারা দিন নেশায় আচ্ছন্ন থাকলে শরীরের আর কোনো বোধশক্তি থাকে না৷ মাদকই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷ লক্ষ্য করেছি, বেশিরভাগ মানুষই অত্যন্ত শান্ত হয়ে পড়েন৷''
এ ক্ষেত্রে প্রাণীর সান্নিধ্য কতটা প্রভাব রাখতে পারে? রিহ্যাব ক্লিনিকের প্রধান ইওয়াখিম ইয়োশ ও তাঁর টিম এ বিষয়ে পরিসংখ্যান প্রস্তুত করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যে সব রোগী কমপক্ষে দশ সপ্তাহ ধরে এখানে প্রাণীদের সঙ্গে থেরাপি করাচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে স্পষ্ট সাফল্যের প্রমাণ রয়েছে৷ অন্যদের তুলনায় তাদের সাফল্যের মাত্রা তিরিশ দশমিক আট শতাংশ বেশি৷''
সম্ভবত প্রাণীদের সঙ্গে কাজ করার কারণে সাফল্যের মাত্রা বাড়ছে৷ তবে চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রাণীর ব্যবহার নিয়ে মৌলিক সমালোচনা রয়েছে৷ রাইনার ভোলফার্ট বলেন, ‘‘সমালোচনার কারণ হলো, প্রাণী বা মানুষ কেউই ঠিকমতো প্রশিক্ষণ পায় না৷ অনেক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে প্রাণীর প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়া হয়৷ টিম সেখানে গুরুত্ব পায় না৷''
জার্মানির প্রাণী সুরক্ষা সংঘ থেরাপির ক্ষেত্রে বন্য প্রাণীর কল্যাণ নিয়ে চিন্তিত৷ যেমন ডলফিন নিয়ে থেরাপির ক্ষেত্রে অত্যন্ত ছোট জলাধার ব্যবহার করা হয়, যা সেই প্রাণীর জন্য উপযুক্ত নয়৷ সংঘের প্রতিনিধি ময়রা গেয়ারলাখ বলেন, ‘‘পশুপাখি নিয়ে থেরাপির ক্ষেত্রে বন্য প্রাণীর কল্যাণ একটা বড় সমস্যা৷ বিশেষ করে প্রকৃতির কোলে ডলফিনের বিশাল চারণক্ষেত্র রয়েছে৷ চিকিৎসার ক্ষেত্রে বন্যপ্রাণী কাজে লাগানোর প্রশিক্ষণের জন্য একাধিক সংস্থা সক্রিয় রয়েছে৷ সেটা একটা সমস্যা৷ এখনো প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কোনো একক মানদণ্ড নেই৷''
জার্মানিতে প্রায় ৩০০ সংস্থা ‘অ্যানিমাল অ্যাসিস্টেড থেরাপি' দিয়ে থাকে৷ রাইনার ভোলফার্টের মতে, তাঁর পরিচিত এমন সব পরিষেবার মধ্যে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বৈধ৷ ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে৷
অর্থাৎ রোগী ও থেরাপিতে ব্যবহৃত প্রাণীর কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে এখনো অনেক কাজ বাকি৷ ক্রিস্টিয়ানা আডাম ও আলেক্সান্ডার স্পানিয়ারের মতে, প্রাণীগুলি ছাড়া তাঁরা কাজ চালিয়ে যেতে পারতেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার জন্য এটা যে ভালো প্রভাব, সেটা টের পাই৷ ভবিষ্যতেও পশুর খামার বা অভয়ারণ্যে প্রাণীদের সঙ্গে কিছু করার ইচ্ছা আছে৷''
ডাগমার স্ট্যোকলে/এসবি