1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মথুরা: বড় বৈপরীত্য মন্দির-মসজিদে

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

উত্তরপ্রদেশের ভোটে বড় বেশি করে শোনা যাচ্ছে মন্দির-মসজিদ বিতর্ক৷ মথুরা ঘুরে সেই বিতর্কের খোঁজে ডিডাব্লিউ৷

https://p.dw.com/p/474u5
মথুরায় ঔরঙ্গজেব প্রতিষ্ঠিত মসজিদছবি: Goutam Hore/DW

শ্রীকৃষ্ণজন্মস্থানের সামনে দিয়ে যে রাস্তাটা চলে গেছে, তার থেকেই সরু একটা গলি নেমে গেছে রেললাইনের দিকে৷ এই লাইন দিয়ে মথুরা থেকে বৃন্দাবন ট্রেন যায়৷ এমন পুতিগন্ধময় রেললাইন সম্ভবত খুব কমই আছে৷ 

রেললাইনের উপরে মোষের বাচ্চার কাটা শরীর পচছে৷ একটা মরা কুকুরের পচা শরীর থেকে বের হওয়া দুর্গন্ধে বাতাস ভারি৷ রেললাইনের দুই পাশে স্তূপীকৃত ঘুঁটে৷ দেওয়ালেও বিশাল বিশাল গোবরচিহ্ন৷ এর মধ্যে দিয়ে উঠে গেছে সিঁড়ি৷ শ্রীকৃষ্ণজন্মস্থানের লাগোয়া শাহি ইদগা মসজিদের দিকে৷

শ্রীকৃষ্ণজন্মস্থানের পাশে এই মসজিদটি ঔরঙ্গজেব তৈরি করেছিলেন ১৬৭০ সালে৷ সাড়ে তিনশ বছর পরেও যা নিয়ে বিজেপি, সঙ্ঘ পরিবার ও হিন্দু সংগঠনগুলির আপত্তির শেষ নেই৷

শ্রীকৃষ্ণজন্মস্থানের গাইড বিবেক শর্মার মতো অনেকেই বিশ্বাস করেন, যোগী আরো পাঁচ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকলে, ওই মসজিদও  সরে যাবে৷ আবার শ্রীকৃষ্ণজন্মভূমির পুরোহিতের ছেলে কমলেশের দাবি, মসজিদ নিয়ে হইচই কেবল ভোটের সময়ই হয়৷ মথুরার মানুষের এনিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই৷ সাড়ে চার লাখ মানুষের এই শহরে একমাত্র মাথাব্যথা হলো, শ্রীকৃষ্ণজন্মস্থানে ভক্তদের যাতায়াত যেন বাড়ে৷ কারণ শহরের ৬৫ ভাগ মানুষের রুটি-রুজি, ব্যবসা-বাণিজ্য সবই নির্ভর করছে জন্মস্থান ভিড় করে আসা মানুষদের উপর৷

Indien | Moschee in Mathura
শ্রীকৃষ্ণজন্মভূমির নতুন প্রবেশদ্বার তৈরি হচ্ছেছবি: Goutam Hore/DW

ওই পুতিগন্ধময় রেললাইন টপকে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে মসজিদের দিকে যেতে গেলেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা চিৎকার কানে আসবে, হল্ট৷ ভিতরে যাওয়ার অনুমতি নেই৷ মসজিদ চত্বরে ৩৫টি পরিবার থাকেন৷ তারাই যাতায়াত করতে পারেন৷ নামাজ পড়তে পারেন। বাইরের মানুষদের কাছে মসজিদ অগম্য৷ চারদিকে উঁচু পাঁচিল৷ কাঁটাতারের বেড়া৷ একটু দূরে দূরে ওয়াচ টাওয়ার। প্রচুর সশস্ত্র জওয়ান। কিছুদিন হলো, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ঘেরাটোপে ঢাকা পড়েছে মসজিদ৷

আসলে ভোটের আগে কিছু হিন্দু সংগঠন মসজিদ সরিয়ে নেয়ার দাবি তুলে মিছিল করেছে৷ তখন থেকেই প্রশাসন এই ব্যবস্থা নিয়েছে৷ শ্রীকৃষ্ণজন্মস্থানেও প্রচুর পুলিশ, কিন্তু সেখানে ভক্তদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়নি‌৷

মসজিদ চত্বরেই থাকেন পিল্টু৷ বলছিলেন, মথুরায় হিন্দু-মুসলিমদের কোনো ঝামেলা নেই৷ এখানে কখনো দাঙ্গা হয় না৷ এ হলো রাজনীতির কারবারিদের ভোট কুড়ানোর কৌশল৷ যোগীর পরমভক্ত বালকিষেণও মনে করেন, মন্দির-মসজিদ যেমন আছে, তেমনই থাকবে। অযোধ্যায় মন্দির ভেঙে মসজিদ হয়েছিল বলে সমস্যা হয়েছিল৷ এখানে তো মন্দির-মসজিদ আলাদা জায়গায়৷ তাই সমস্যা হওয়ার কথা নয়৷

কিন্তু এসব কথার পরেও কোথাও যেন একটা আশঙ্কার কালো মেঘ থাকে৷ যত দিন যাচ্ছে, ততই দাবি জোরালো হতে শুরু করছে। ভোট এলেই দাবি উঠছে। মামলা চলছে স্থানীয় আদালতে৷ এগুলোই তো সিঁদুরে মেঘ, যা দেখে ভয় হওয়া স্বাভাবিক৷ ১৯৯২ সালের পর ওঠা স্লোগান এখনও কান পাতলে শোনা যায়, ইয়ে তো সির্ফ ঝাঁকি হ্যায়, কাশী-মথুরা বাকি হ্যায়৷

Indien | Moschee in Mathura
মন্দিরের প্রধান প্রবেশদ্বারছবি: Goutam Hore/DW

ভোটের কিছুদিন আগে থেকেই শ্রীকৃষ্ণজন্মস্থান সাজানো হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে গোলাপি পাথরের নতুন গেট। ফুটপাথ তৈরি হচ্ছে নতুন ভাবে। যমুনার তীরও সাজানো হবে। মথুরার বিধায়ক ও যোগী সরকারের মন্ত্রী শ্রীকান্ত শর্মা ঘোষণা করেই দিয়েছেন, বিজেপি-ই পারে শ্রীকৃষ্ণজন্মস্থানকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলতে। কাশী বিশ্বনাথের মতো মথুরাও নতুনভাবে সেজে উঠবে।

মথুরার মানুষের জীবন যেমন মন্দির-মসজিদ ঘিরেই আবর্তিত হয়, এখানকার রাজনীতিও তাই। ভোটের আগে যোগী এখানে আমিষ বন্ধ করে দেন। সাজতে থাকে মথুরা, শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি। আর তার মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা সাড়ে তিনশ বছরের পুরনো একটা মসজিদ ঘিরে সংখ্যালঘু মুসলিমরা প্রত্যাশা নিয়ে বসে থাকেন, উত্তেজনা কমবে। মসজিদের দরজা খুলে যাবে সকলের প্রার্থনার জন্য।  রাজনীতির বাইরে গিয়ে সহাবস্থানের উদাহরণ তৈরি করবে মথুরা।

কিন্তু উত্তরপ্রদেশের এবারের ভোট তো কাশী, মথুরা, অযোধ্যাকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। তাই উত্তেজনা, থাকে, থেকেই যায়।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷