1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মজুরি সমন্বয়ের পরও চলছে বিক্ষোভ

১৪ জানুয়ারি ২০১৯

আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের মজুরি সমন্বয় করা হয়েছে৷ তারপরও সোমবার আশুলিয়া এলাকায় শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেছেন৷ একজন শ্রমিকের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ায় সংঘর্ষও হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3BWVI
Bangladesch - Proteste für mehr Lohn für Textilarbeit
ছবি: bdnews24

টানা ১০ দিন আন্দোলন এবং বিক্ষোভের মুখে শনিবার পোশাক শ্রমিকদের মজুরি সমন্বয় করা হয় শ্রমিক, মালিক এবং সরকারের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে৷ আর সেই অনুযায়ী

প্রথম গ্রেডের একজন পোশাক কর্মী সব মিলিয়ে ১৮ হাজার ২৫৭ টাকা বেতন পাবেন৷ ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে এই গ্রেডের মজুরি ছিল ১৩ হাজার টাকা৷ ২০১৮ সালে নতুন মজুরি কাঠামোর গেজেটে তা ১৭ হাজার ৫১০ টাকা করা হয়েছিল৷ দ্বিতীয় গ্রেডের মোট বেতন ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৪১৬ টাকা৷ ২০১৩ সালের কাঠামোতে এই গ্রেডের বেতন ১০ হাজার ৯০০ টাকা এবং ২০১৮ সালের গেজেটে তা ১৪ হাজার ৬৩০ টাকা করা হয়েছিল৷ তৃতীয় গ্রেডের সর্বমোট বেতন ঠিক হয়েছে ৯ হাজার ৮৪৫ টাকা, যা ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে ছয় হাজার ৮০৫ টাকা এবং ২০১৮ সালের গেজেটে ৯ হাজার ৫৯০ টাকা করা হয়৷ চতুর্থ গ্রেডের সর্বমোট বেতন ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৩৪৭ টাকা৷ ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে এই গ্রেডের বেতন ছয় হাজার ৪২০ টাকা এবং ২০১৮ সালে ৯ হাজার ২৪৫ টাকা করা হয়৷ পঞ্চম গ্রেডে সর্বমোট বেতন ঠিক হয়েছে আট হাজার ৮৭৫ টাকা, যা ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে ছয় হাজার ৪২ টাকা এবং ২০১৮ সালের গেজেটে আট হাজার ৮৫৫ টাকা ছিল৷ ষষ্ঠ গ্রেডের সর্বমোট বেতন ধরা হয়েছে আট হাজার ৪২০ টাকা, ২০১৩ সালের কাঠামোতে তা ছিল পাঁচ হাজার ৬৭৮ এবং ২০১৮ সালে করা হয় আট হাজার ৪০৫ টাকা৷ সপ্তম গ্রেডের মজুরি সব মিলিয়ে আট হাজার টাকাই রাখা হয়েছে৷ ২০১৮ সালের গেজেটেও তাই ছিল৷ ২০১৩ সালের কাঠামোতে সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতন ছিল পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা৷

‘সরকার মজুরী সম্বয়ের নামে যা করেছ তা প্রতারণা’

এবার হিসেব মিলিয়ে দেখা যায়,  ২০১৮ সালের গেজেটের তুলনায় প্রথম গ্রেডে ৭৪৭ টাকা, দ্বিতীয় গ্রেযে৭৮৬ টাকা, তৃতীয় গ্রেডে ২৫৫ টাকা, চতুর্থ গ্রেডে ১০২ টাকা, পঞ্চম গ্রেডে ২০ টাকা এবং ষষ্ঠ গ্রেডে ১৫ টাকা বেতন বেড়েছে৷ আর সপ্তম গ্রেডে একই আছে৷

এ নিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন,  ‘‘এত আন্দোলন এবং একজন শ্রমিকের প্রাণহানির পর সরকারমজুরি সম্বনয়ের নামে যা করেছে, তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ একমাত্র সপ্তম গ্রেড ছাড়া আর কোনো গ্রেডে আসলে সেই অর্থে বেতন বাড়েনি৷ শুধুমাত্র সপ্তম গ্রেডে (শিক্ষানবিশ) দুই হাজার ৭০০ টাকা বেতন বেড়েছে৷ আর অন্যান্য গ্রেডে বেড়েছে সামান্য ২০ টাকা, ১৫ টাকা বা কারো আরো একটু বেশি৷ কারণ গত ৫ বছরে তাঁরা ইনক্রিমেন্ট পেয়ে বেতনের ওই পর্যায়ে চলে এনেছেন৷ আমরা দাবি করেছিলাম, সপ্তম গ্রেডে যে বেতন বেরেছে তার সমানুপাতিক হারে অন্যান্য গ্রেডেও বেতন যেন বাড়ে৷ কিন্তু তা হয়নি, যা ছিল তা-ই আছে৷ সরকার ও পোশাক শিল্পের মালিকরা মজুরির সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘আর এই গ্রেডের মধ্যেও অনেক ফাঁকি আছে৷ এই গ্রেড করেই শ্রমিকদের ঠকানোর কৌশল করা হয়৷  বেশি বেতনের গ্রেডে মালিকপক্ষের লোকজন কাজকরেন৷''

‘শুধু আশুলিয়ায় ২০-২৫টি গার্মেন্টস-এর শ্রমিরা কাজে না গিয়ে বিক্ষোভ করেছে’

তবে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তা আমরা  মেনে নিয়েছি৷ তবে কয়েকটি গ্রেডে বেতন বেড়েছে সামান্য৷ আমাদের দাবি, প্রতিবছর যে মূল বেতনের সঙ্গে শতকরা ৫ ভাগ ইনক্রিমেন্ট দেয়া হয় তা-ও যেন এই বেতনের সঙ্গে যোগ করে দেয়া হয়৷ আর বেতনটা যদি ভাতায় না বেড়ে মূল বেতনে বাড়তো তাহলে আমাদের বোনাস এবং ওভারটাইমসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়তো৷''

শ্রমিকের মৃত্যুর গুজবে সংঘর্ষ

এদিকে আশুলিয়া এলাকায় সোমবারও শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে৷ সকালে ৫০টির বেশি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আশুলিয়ায় মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করে৷ এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়৷

সকাল ১০টার দিকে আমিন বাজার এলাকায় একজন শ্রমিকের মৃত্যুর গুজবে শ্রমিকদের ভেতর উত্তেজনা দেখা দেয়৷ তাঁরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷ গাজীপুরেও বিক্ষোভের খবর পাওয় গেছে৷

‘আমাদের কথা হল মজুরি সমন্বয়ে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই’

গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের আমিরুল ইসলাম আমীন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আজও (সোমবার) আশুলিয়ার কিছু পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দেননি৷ আমাদের কথা হলো, মজুরি সমন্বয়ে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই৷ তবে প্রধানমন্ত্রী একটি উদ্যোগ নিয়েছেন৷ হস্তক্ষেপ করেছেন৷ কিছুটা সমন্বয় করা হয়েছে৷ তাই প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রেখে আমরা সবাই কাজে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাই৷ আর তা না হলে তা আমাদের সবার জন্যই ক্ষতির কারণ হবে৷''

এদিকে বিজিএমইএ ঘোষণা করেছিল, শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখলে পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে৷ আশুলিয়াসহ যেসব এলাকার শ্রমিকরা সোমবারও কাজে যোগ দেননি, তাঁদের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুধু আশুলিয়া এলাকার ২০-২৫টি গার্মেন্টস-এর শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়নি৷ বিক্ষোভ করেছে৷ আর সারাদেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে৷ তাই আমরা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছি না৷ আশা করছি তারাও কাজে যোগ দেবেন৷ আমরা তাদের আরো একদিন সময় দিতে চাই৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আগেই মজুরি ৪১ থেকে ৫১ ভাগ বাড়ানো হয়েছিল৷ এবার বিভিন্ন গ্রেডের সাথে সমন্বয় করা হয়েছে৷ তাতেও বেতন কিছুটা বেড়েছে৷ যারা বলে, বাড়েনি, তারা অনুমানের ওপর কথা বলছেন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য