ভ্রূণ বাছাই করতে পারবেন জার্মান চিকিৎসকরা
১১ জুলাই ২০১০ভ্রূণ পরীক্ষা করেই এখন জানা যায়, একটি শিশু সুস্থ হয়ে জন্মাবে, না বংশগত কোনো রোগ সে বহন করবে৷ এতে নীরোগ শিশু জন্মের সম্ভাবনা বেড়ে গেছে বলে পরীক্ষার সপক্ষের সবাই বলছেন৷ জার্মানির মধ্যবয়সি এক চিকিৎসক সেটাই করতে গিয়েছিলেন৷ তাঁর রোগী ছিলো তিন দম্পতি৷ যাদের সবাই বংশগত রোগে আক্রান্ত৷ তিনি বাছাই করে তিন নারীর গর্ভে সুস্থ ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করতে চাইলেন৷ আপত্তি এলে চিকিৎসক তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল রোগীদের দেখান৷ এরপর অসুস্থ ভ্রূণ বাদ দিয়ে সুস্থ ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা হলো জরায়ুতে৷ তাঁর এই কাজ আইনসম্মত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে৷ আদালতে শুনানির জন্যও তা ওঠে৷ গত বছরের মে মাসে ওই চিকিৎসককে ছয় মাস নজরদারিতে রাখার সিদ্ধান্ত হয়৷ তবে শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার উচ্চ আদালতের রায় ওই চিকিৎসকের পক্ষেই গেলো৷
জার্মানিতে ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া বৈধ নয়৷ যদি কোনো দম্পতির একটি সন্তানের ক্ষেত্রে জীনগত বড় ধরনের সমস্যার ঝুঁকি থাকে, ক্রোমজোমের কোনো ধরনের সমস্যার কারণে ভ্রূণটিকে বাঁচিয়ে রাখা জটিল হয়ে পড়ে কিংবা কোনো নারী যদি গর্ভ ধারণে অক্ষম হন- তবেই এই সংক্রান্ত পরীক্ষার ছাড়পত্র মেলে৷
ভ্রূণ রক্ষা আইন নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে বহুদিন৷ পরীক্ষার বিপক্ষ দলের মত, ভ্রূণ নীরোগ হোক বা না হোক, প্রতিটিরই বাঁচার অধিকার রয়েছে৷ চিকিৎসা স্বাস্থ্যে নৈতিকতা নিয়ে কাজ করেন এমনই একজন জোভান্নি মায়ো সাংবাদিকদের বলেন, ভ্রূণ পরীক্ষা সব মানুষের বাঁচার অধিকার খর্ব করে৷ তিনি বলেন, ‘‘কেউ অসুস্থ হলে তার বেঁচে থাকার অধিকার থাকবে না, তা আমি মেনে নিতে পারছি না৷ ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে, আমরা যারা সবল আছি, তারা বলছি দুর্বলদের বেঁচে থাকার দরকার নেই৷ আমরা তো অন্য একটি জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারি না৷''
অনেকে বলছেন, বর্তমানে যে বিধি-নিষেধ রয়েছে, তা তেমন কাজেরই নয়৷ বার্লিনের শারিটে হাসপাতালের চিকিৎসক ইউলিয়া বার্টলে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ভ্রূণ নীরোগ কি না, তা গবেষণাগারে না গিয়েও পরীক্ষা করা হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা অনেকগুলো ভ্রূণ নিয়ে একসঙ্গে কাজ শুরু করি৷ তিন দিন পর দেখি, কোনগুলো সুস্থ, কোনগুলো সুস্থ নয়৷'' ডাক্তার ইউলিয়া এবং অনেকেই মনে করেন, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ভ্রূণের ওপর পরীক্ষা চালানোরও যে প্রয়োজন হয়, তা অস্বীকার করার উপায় নেই৷
প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক