জার্মানদের ভ্রমণে বাধানিষেধ
২৯ এপ্রিল ২০২০ইস্টারের ছুটি মাটি হয়েছে, জুন মাসে কয়েক দিনের ছুটিও বাসায় বসে কাটাতে হবে৷ গ্রীষ্মের ছুটির আশাও হয়ত ত্যাগ করতে হবে৷ করোনা সংকট এই কারণেও জার্মানির ভ্রমণপাগল মানুষের পথের কাঁটা হয়ে উঠছে৷ দেশের মধ্যে কোনোমতে এদিক-ওদিক যেতে পারলেও বিদেশ ভ্রমণের স্বপ্ন আপাতত জলাঞ্জলি দিতে হবে৷ কারণ, বুধবার জার্মানির মন্ত্রিসভা বিদেশ ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ১৪ই জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ মেনেই সরকার করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি যতটা সম্ভব এড়াতে চায়৷
জার্মানিতে স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি রাজ্য অনুযায়ী আগে-পরে শুরু এবং শেষ হয়৷ চলতি বছর ২২শে জুন থেকে ছুটির মওসুম শুরু হবার কথা৷ ততদিন পর্যন্ত করোনা সংকট কী আকার ধারণ করবে, তা কারো জানা নেই৷ তাই আপাতত গ্রীষ্মের ছুটির সময়কাল নিয়ে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না৷ তবে এ বিষয়ে অনিশ্চয়তা থেকে যাওয়ায় গ্রীষ্মের ছুটিতে বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা সহজ হবে না৷ তাছাড়া সরকার ভ্রমণের অনুমতি দিলেও বিদেশে কোন গন্তব্যের পরিস্থিতি কেমন থাকবে, সেটাই বা কার জানা আছে?
জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঠিক কোন তথ্যের ভিত্তিতে এমন মূল্যায়ন করছে? আন্তর্জাতিক স্তরে বেসরকারি বিমান চলাচল কার্যত স্তব্ধ হয়ে রয়েছে৷ নানা বিধিনিষেধের কারণে ভ্রমণের অন্যান্য পথও খোলা নেই৷ একাধিক দেশ বিদেশ থেকে আগমনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে৷ কোনোভাবে সে সব দেশে পৌঁছলেও পড়লেও কোয়ারেন্টাইনের শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে৷ তার পরেও সেই দেশে প্রবেশ করলে অনেক ক্ষেত্রে জনজীবন স্তব্ধ হয়ে রয়েছে৷ এমন পরিস্থিতিতে ছুটির আনন্দ উপভোগ করার উপায় নেই৷ বিপদে পড়লে স্থানীয় জার্মান দূতাবাসের সহায়তার ক্ষমতাও সীমিত হয়ে উঠেছে৷ বিদেশ থেকে জার্মানিতে প্রবেশ করলেও ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনের ধাক্কা তো রয়েছেই৷
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস গত ১৭ই মার্চ বিদেশে পর্যটনের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন৷ এতকাল শুধু আফগানিস্তান বা সিরিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে প্রাণভয়ের কারণে এমন কড়া সতর্কতা জারি করা হয়েছে৷ জার্মানির সরকার এমন সতর্কতা জারি করলে পরিকল্পিত ভ্রমণযাত্রার টিকিট বা হোটেল বুকিং বিনামূল্যে বাতিল করা সম্ভব৷ প্রথমে এপ্রিল মাসের শেষ, তারপর ৩রা মে এবং এখন ১৪ই জুন পর্যন্ত সতর্কতার মেয়াদ বাড়ানো হলো৷ মাস বলেন, গ্রীষ্মকালেও স্বাভাবিক পরিস্থিতির কোনো আশা তিনি দেখছেন না৷
এমন প্রেক্ষাপটে ২০১৯ ও ২০২০ সালের মধ্যে পার্থক্য প্রকট হয়ে উঠছে৷ এক গবেষণার ফল অনুযায়ী ২০১৯ সালে প্রায় আট কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশ জার্মানির মানুষ প্রায় সাত কোটি আট লাখ ভ্রমণযাত্রা করেছিলেন৷ এর মধ্যে প্রায় ৭৪ শতাংশই ছিল বিদেশযাত্রা৷ তা সত্ত্বেও বেশিরভাগ মানুষই সরকারের বর্তমান বিধিনিষেধের কারণ বুঝতে পারছেন৷ ইউগভ সংস্থার এক জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী ৪৮ শতাংশ মানুষ গ্রীষ্মকালেও এমন বাধানিষেধ চালু রাখার পক্ষে সওয়াল করেছেন৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)