1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভ্যাকসিনে কূটনীতিও মাথায় রাখছে ভারত

৮ জানুয়ারি ২০২১

ভারতে করোনার ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরু হওয়া সময়ের অপেক্ষা৷ এখন নয়াদিল্লির সামনে চ্যালেঞ্জ হলো, ভ্যাকসিন কূটনীতিতে সফল হওয়া৷

https://p.dw.com/p/3ng6V
Covid-19 Ttest, Delhi
ছবি: Imtiyaz Khan/Anadolu Agency/picture-alliance

সমস্যা একটাই, দেশের মানুষকে আগে করোনা ভ্যাকসিন দেয়া হবে, নাকি টিকা পাঠানো হবে প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন বন্ধু দেশের কাছে, যাতে সেখানকার মানুষ একই সঙ্গে টিকা নিতে পারেন৷ এখনো পর্যন্ত সরকারিভাবে স্বাস্থ্য বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই বিষয়ে কোনো স্পষ্ট নীতি ঘোষণা করা হয়নি৷ তবে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত বুধবার কলম্বোয় বলেছেন, ‘‘আমরা এখন কোভিড পরবর্তী সহযোগিতার দিকে তাকিয়ে৷ এখানে আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মনোভাবের কথা জানাতে চাই৷ তিনি বলেছেন, ভারত মনে করে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা তার কর্তব্য৷’’

কোনো সন্দেহ নেই, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, মায়ানমারের মতো প্রতিবেশী দেশগুলি করোনার ভ্যাকসিনের জন্য ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে৷ সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলির সম্পর্ক কিছুটা খারাপ হয়েছে বা সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে৷ এই অবস্থায় ভ্যাকসিন-কূটনীতিকে হাতিয়ার করে আবার সেই সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করার সুযোগ ভারতের সামনে এসে পড়েছে৷ আর তারই সদ্ব্যবহার করতে চাইছে মোদী সরকার৷ আর এই কারণেই ভ্যাকসিন-কূটনীতি এতটা গুরুত্বপূর্ণ৷

তবে এ ক্ষেত্রে একটি ব্যালেন্সের খেলা দেখাতে হবে মোদী সরকারকে৷ কারণ, তাদের সামনে এখন দেশের ১৩০ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যতটা জরুরি, ততটাই প্রয়োজনীয় মানবিক কারণে ও কূটনীতির স্বার্থে প্রতিবেশীসহ বন্ধু দেশগুলির কাছে ভ্যাকসিন দ্রুত পৌঁছে দেওয়া৷

ভারতের হাতে এই মুহূর্তে দুইটি করোনার ভ্যাকসিন আছে৷ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, যা উৎপাদন করছে পুণের সেরাম ইনস্টিটিউট৷ আর দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ভারত বায়োটেক ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের উদ্যোগে তৈরি কোভ্যাকসিন৷ এর মধ্যে সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রচুর সংখ্যায় ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষমতা আছে৷ ইতিমধ্যেই তারা পাঁচ কোটির বেশি ভ্যাকসিন বানিয়ে ফেলেছে৷ অদূর ভবিষ্যতে তারা দশ কোটি ভ্যাকসিন তৈরি করে ফেলবে বলে জানিয়েছে৷ ভারত বায়োটেকের পরিকল্পনা হলো, প্রতি বছর ৭০ কোটি ভ্যাকসিন তৈরি করা, যার ২০ কোটি তৈরি হবে হায়দরাবাদে, বাকি ৫০ কোটি ভারতের অন্য চারটি শহরে, যেখানে তারা উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করছে৷ আর এখনই তাদের হাতে দুই কোটি ভ্যাকসিন আছে৷ ফলে ভারতের হাতে এখনই সাত-আট কোটি ভ্যাকসিন এসে গেছে৷ সেরাম এবং ভারত বায়োটেক তাদের পরিকল্পনা মতো চললে একুশের মধ্যে ভারতের হাতে বেশ কয়েক কোটি ভ্যাকসিন চলে আসবে৷

ভারতের কাছে কারা ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা করছে? অবশ্যই প্রতিবেশী দেশগুলি৷ ব্রাজিল থেকে দিন কয়েক আগেই ভারতের কাছ থেকে অবিলম্বে ভ্যাকসিন চাওয়া হয়েছে৷ দক্ষিণ আফ্রিকাও চাইছে৷ তাছাড়া আফ্রিকার গরিব দেশগুলি আছে৷ এশিয়ার দেশগুলিও আছে৷ এশিয়ায় দুইটি দেশ এখন ভ্যাকসিন হাতে পেয়ে গেছে৷ ভারত ও চীন৷ সে কারণেই ভ্যাকসিন কূটনীতিও গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় হয়ে উঠতে পারে৷ কারণ, এখানেও প্রধাণত চীনের সঙ্গেই লড়াইয়ে নামতে হবে ভারতকে৷

ভারতে খুব সম্ভবত আগামী সপ্তাহে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হবে৷ প্রথমে পাবেন এক কোটি চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ তারপর পুলিশ, পুরসভার কর্মীসহ করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুরোভাগে থাকা মানুষরা৷ সেই সঙ্গে সিনিয়র সিটিজেন ও গুরুতর অসুখে ভোগা মানুষেরা৷ সবমিলিয়ে তাদের যদি দুইটি করে ডোজ দিতে হয়, তা হলে দশ কোটি ভ্যাকসিন অবিলম্বে লাগবে৷ তবে প্রথম ডোজের পর দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার মধ্যে কিছুটা সময় হাতে থাকবে৷ সেই সময়ে নতুন করে আরো ভ্যাকসিন উৎপাদন হবে৷ ফলে পরিকল্পনা করে চললে, দেশের মানুষের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশের মানুষের কাছেও ভ্যাকসিন পৌঁছনো সম্ভব৷ প্রথমেই বিপুল পরিমাণে না হলেও কিছুটা করে তো বটেই৷

সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, ভারত সরকার এভাবেই চিন্তাভাবনা করছে৷ তারা খুব দূরের দেশে এখনই ভ্যাকসিন পাঠাবার কথা ভাবছে না৷ তবে দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের মানুষও যাতে তাড়াতাড়ি করোনার ভ্যাকসিন পান, সে কথা মাথায় রাখা হচ্ছে এবং সেই মতোই চলা হচ্ছে৷ আর অবশ্যই খেয়াল রাখা হচ্ছে, দেশের মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়৷

সে জন্যই বলছিলাম, মোদী সরকারকে ব্যালেন্সের খেলা দেখাতে হবে৷ একটা সরু দড়ির উপর দিয়ে হাঁটতে হবে৷ ভ্যাকসিন কূটনীতিও সহজ নয়৷ প্রতিটি দেশের চাহিদা বিশাল৷ তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি বজায় রেখে, দেশের মানুষকে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিন দেয়ার কাজ মোদী সরকার কতটা সুচারু রূপে করতে পারে সেটাই দেখার৷ আর এতে সফল হলে অন্তত প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নতির ষোলো আনা সম্ভাবনা থাকবে৷

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য