ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার ২৬ তম বার্ষিকী
৩ ডিসেম্বর ২০১০ভোপাল গ্যাস বিপর্যয়ের ২৬ বছর পরেও বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে৷ এবছরের জুন মাসে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা মামলার রায়ে কোন সুরাহা না হওয়ায় দোষীদের শাস্তি না হওয়ায় পীড়িতরা সবাই ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায়, জনরোষ দেখা দেয়৷ তা দেখে সরকার ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়াতে এক কমিটি গঠন করেন৷ তারপরেও পেরিয়ে গেছে ৬মাস৷ কোন কিছুই হয়নি৷ এমন কী বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ কারখানা চত্বরেই পড়ে আছে৷ সরানো হয়নি৷ ইতিমধ্যে হাত বদল হয়েছে ইউনিয়ন কার্বাইডের৷ মালিকানা কিনেছে মার্কিন সংস্থা ডাও কেমিক্যালস৷ তারা সাফ জানিয়েছে আগের কোম্পানির কোন দায়ভার তারা নিতে বাধ্য নয়৷ ফলে ঐ অভিশপ্ত কারখানার আশপাশ এলাকার ভূগর্ভস্থ বিষাক্ত জল খেতে হচ্ছে স্থানীয় মানুষদের৷ সরকার নির্বিকার, উদাসীন, এই অনুযোগ অনেকের৷ তাই বাধ্য হয়ে আবার পথে নেমেছে পীড়িতরা এবং তাদের আন্দোলনে সামিল হয়েছে এনজিওগুলি৷ আওয়াজ উঠেছে যতদিন তারা ন্যায় বিচার না পাচ্ছে ততদিন এই লড়াই চলবে৷ তা সত্ত্বেও সরকারের ঘুম কী ভাঙবে ? ভাঙলে কবে ? প্রশ্নটা সেখানেই৷
১৯৮৪-এর ডিসেম্বরে বহুজাতিক সংস্থা ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানার ভয়ঙ্করতম শিল্প দুর্ঘটনায় বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়নেট গ্যাস লীক করে সরকারি মতে মারা যায় ১৫ হাজার, বেসরকারি হিসেবে ২৫ হাজার৷ তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম নানা দুরারোগ্য ব্যাধির শিকার৷ জড় বুদ্ধি, মানসিক বৈকল্য, শারীরিক পঙ্গুত্বের জীবন কাটাচ্ছে তারা৷ সাত বছরের মেয়ে খুশি৷ মাবাবা মারা গেছে কারখানার বিষাক্ত গ্যাসে৷ আজ সে হাঁটতে পারেনা৷ রোজ তাকে নিয়ে যেতে হয় চিঙ্গারি ট্রাস্ট পুনর্বাসন কেন্দ্রে৷ দৈহিক প্রতিবন্ধী হলেও স্মৃতিশক্তি তাঁর প্রখর৷ সে পুনর্বাসন কেন্দ্রে কম্পিউটর শিখছে৷ ওর ইচ্ছা আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, বলেন খুশির ইনস্ট্রাক্টর তারিখ আহমেদ৷
আন্দোলনে সামিল জনৈক এনজিও কর্মী সতীনাথ সারাঙ্গি জানান, যাঁরা নিহত ও অসুস্থ তাঁদের মাত্র ৯ শতাংশ ক্ষতিপূরণ পেয়েছে৷ ৯১ শতাংশ পাননি৷ ইউনিয়ন কার্বাইডের প্রধান ওয়ারেন এন্ডারসন সরকারি আনুকুল্যে ভারত ছেড়ে পালিয়ে গেলেন৷ তাঁকে ফিরিয়ে আনা তো দুর অস্ত৷ উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং পীড়িতদের পুনর্বাসনটুকু পর্যন্ত করে দিলেন না কোন সরকার৷
প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুনদিল্লি
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক