‘ভোক্তার স্বার্থে আইন’
১ জুন ২০১৬অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও তাদের আন্দোলন৷ এই প্রতিষ্ঠানটির কারণেই সরকার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইন, নিরাপদ খাদ্য আইন, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইনসহ বহু আইন করেছে৷ এত আইন হলেও এগুলোর বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এখনো গড়ে উঠেনি৷ এখনই দরকার এই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে এ কথাগুলোই বলছিলেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান৷কিছুদিন আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি৷ সেখান থেকে অবসর নিয়ে ভোক্তাদের অধিকারের আন্দোলনে মাঠে নেমেছেন৷
ডয়চে ভেলে: ক্যাব দীর্ঘদিন ধরে ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করে আসছে৷ আপনাদের এই আন্দোলনের কারণে জনগণ কতটা উপকৃত হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
গোলাম রহমান: ক্যাব প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৮ সালে৷ তারপর থেকে নিরাপদ খাদ্য, ভেজালমুক্ত খাদ্য, দ্রব্যমূল্যসহ নানা বিষয়ে ক্যাব কাজ করে আসছে৷ ভোক্তার স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ক্যাব সরকারি পর্যায়ে কাজ করে, তেমনি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সাধারণের মাঝেও কাজ করে৷ সারাদেশে ক্যাবের কমিটি আছে৷ ক্যাবের প্রচেষ্টার ফলেই বেশ কয়েকটি আইন হয়েছে৷ সেগুলো ভোক্তা বান্ধব ও ভোক্তাদের অধিকার সুরক্ষায় যথেষ্ট অবদান রাখছে বলে আমাদের ধারণা৷ সাম্প্রতিক সময়ে যেসব আইন হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, যেটাতে বাণিজ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটা কাউন্সিল আছে৷ সেখানে ক্যাব ভোক্তাদের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান৷ এছাড়া আরো কিছু আইন হয়েছে, যেমন নিরাপদ খাদ্য আইন, কম্পিটিশন আইন-২০১২৷ এখন আসলে একটা আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ এছাড়া অ্যান্টি টোবাকো আন্দোলনেও ক্যাব-এর যথেষ্ট ভুমিকা আছে৷ বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য আন্দোলনসহ এমন অনেক আন্দোলনে ক্যাব অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে৷ সীমিত শক্তি থাকার পরও ভোক্তা বা ক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষিত হয় তার জন্য জনসচেতনতা ও সরকারের উপর পেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করছে ক্যাব৷
ক্যাব এ সব আন্দোলনে সাধারণ ভোক্তাদের কতটা সম্পৃক্ত করতে পেরেছে?
ক্যাবের মেম্বার যে বেশি, তা নয়৷ প্রতি জেলায় কয়েকশ' করে লোক ক্যাবের সঙ্গে জড়িত৷ তবে ক্যাব-এর প্রতি মানুষের সমর্থন আছে৷ এবং সরকারেরও অনুমোদন আছে৷ ক্যাব যে সাধারণ মানুষের কথা বলে এ জন্য আমার ধারণা সাধারণ মানুষও এটাকে সমর্থন করে৷ এটি স্বেচ্ছাসেবা এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠান৷ ক্যাব ভোক্তা সাধারণের পক্ষে কাজ করছে এবং তাদের একটা সমর্থন নিয়েই কাজ করছে৷ সরকারও তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বলেই আমার বিশ্বাস৷
বাংলাদেশে খাদ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা ভেজাল৷ এই ভেজাল প্রতিরোধে ক্যাব কতটা সফল বলে আপনি মনে করেন?
ক্যাব-এর তো নিজস্ব কোনো আইনগত ক্ষমতা নেই৷ যে মোবাইল কোর্ট চলে সেখানে ক্যাব সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করে৷ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যখন বাজারে কাজ করে বা মোবাইল কোর্ট চালায়, তখন ক্যাব কিন্তু তাদের সঙ্গে থাকে৷ অনৈতিক লাভের জন্য ব্যবসায়ীরা যেটা করে, সেটা এক দিনের সমস্যা না৷ দিন দিন নানা কেমিক্যালের ব্যবহার বেড়েছে৷ এটা অ্যালার্মিং৷ ক্যাব সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে এবং ক্যাবের উদ্যোগেই ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইনটা হয়েছে৷
সামনেই রমজান৷ ভোক্তাদের স্বার্থে এই রমজান উপলক্ষ্যে ক্যাব কী করতে চায়?
আমরা সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছি৷ পাশাপাশি সরকারের প্রতি আমাদের আহবান যেন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে, ভেজালমুক্ত থাকে এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে৷ এর জন্য দেনদরবার প্রচেষ্টা অব্যহত আছে৷
ক্যাব তো অনেক গবেষণাও করে৷ এমন কী কোনো গবেষণা আছে যা থেকে বোঝা যাবে আমরা যা যা খাচ্ছি তার কোনটাতে কতটা ভেজাল?
এসব নিয়ে গবেষণার দরকার আছে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু আমাদের যে রিসোর্স তাতে বড় ধরনের কোনো গবেষণা আমরা করতে পারি না৷ ক্যাব-এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের অর্থায়নের আমরা কিছু প্রজেক্ট নিয়ে থাকি৷ নিরাপদ খাদ্যের জন্য একটা প্রজেক্ট করেছি জেলা পর্যায়ে৷
যাদের বিরুদ্ধে খাদ্যে ভেজাল বা অনৈতিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ, তাদের অনেকেই ক্যাব-এর মেম্বার হয়েছে এমন অভিযোগ শোনা যায়...
এ ধরনের অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা৷ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বা যারা ব্যবসা করে তাদের সঙ্গে ক্যাব-এর কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই৷
ক্যাব-এর সঙ্গে থাকলে ভ্রাম্যমান আদালত থেকে রেহাই পাওয়া যায়৷ এ কারণে নাকি অনেকেই ক্যাবের সদস্য হতে আগ্রহ দেখায়?
এসব কারণেই আমরা সদস্যপদ দেয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করি৷
ক্যাবের সদস্যসংখ্যা কত?
ঢাকাতে সদস্য দু'শর মতো৷ জেলা পর্যায়েও দু-আড়াইশ' হবে৷ প্রত্যেক জেলাতেই আমাদের সদস্য আছে৷
ক্যাবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আমরা নিরাপদ খাদ্য, ভেজালমুক্ত খাদ্য, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, সেবামূল্য স্থিতিশীল রাখা, বিশেষ করে ওষুধ নকলমুক্ত রাখার জন্য আরো বেশি কাজ করব৷
সাধারণ মানুষ নিরাপদ খাদ্যের জন্য অনেকাংশেই ক্যাবের উপর নির্ভরশীল৷ এক্ষেত্রে ক্যাব কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে বলে আপনার মনে হয়?
আমরা চেষ্টা করছি৷ আমাদের সফলতা যে শতভাগ, আমি সেটা বলব না৷ আমাদের আন্দোলন, প্রচেষ্টার ফলে সচেতনতা যে বাড়ছে সেটা বলাই যায়৷ সরকারও যেমন ভোক্তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় সে ব্যাপারে যত্নবান৷ গত কয়েক বছরে যেসব আইন হয়েছে যেমন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯, প্রতিযোগিতা আইন ২০১২, নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৫সহ একটা আইন কাঠামো কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠার পেছনে ক্যাবের যথেষ্ট প্রচেষ্টা আছে৷ এই আইনগুলো বাস্তবায়নের জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দরকার তা কিন্তু গড়ে ওঠেনি৷ অনেক ক্ষেত্রে যা-ও গড়ে উঠেছে তা কিন্তু খুবই দুর্বল৷ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গড়ে উঠেছে৷ কিন্তু জেলার অফিসগুলোতে এর জনবল অত্যন্ত কম৷ আমরা বলে আসছি, এই আইনগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো যেন সৃষ্টি করা হয়, জনবল দিয়ে এই আইনগুলির কার্যক্রম বাড়ানো হয় এবং জনগণের দোড়গোড়ায় আইনগুলির সুফল পৌঁছে দেয়া হয়৷
সাধারণ ভোক্তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য আপনারা কী করছেন?
আমরা সভা করি, সেমিনার করি, সিম্পোজিয়াম করি, র্যালি করি৷ স্কুল কলেজে বাচ্চাদের সচেতন করার চেষ্টা করি৷ প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের কার্যক্রম খুবই সীমিত৷ আমরা গণমাধ্যমের সহায়তা পাই৷ তবে গণমাধ্যম যদি আরো এগিয়ে আসে তাহলে এই আন্দোলনটা আরো বিস্তৃতি লাভ করবে৷ মানুষ উপকৃত হবে৷
সাধারণ মানুষের কাছে আপনার চাওয়া কী?
মানুষ নিজের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হোক৷ অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার হোক- এটাই আমাদের চাওয়া৷ এর অতিরিক্ত কিছু না৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷