1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভোটের লড়াইয়ে গৃহকর্মী আর চা শ্রমিক

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৫ মার্চ ২০২১

বিধানসভা ভোটের প্রার্থী তালিকায় এবার চমক শুধু তারকায় আটকে নেই৷ প্রার্থী করা হয়েছে প্রান্তিক মানুষকেও৷ উত্তরে ভোটের লড়াইতে চা শ্রমিকের কন্যা৷ দক্ষিণে লড়ছেন এত গৃহকর্মী৷

https://p.dw.com/p/3r7Zd
প্রার্থী কলিতা
পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম কেন্দ্রের প্রার্থী কলিতা মাঝি কয়েকটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন ছবি: Payel Samanta/DW

একুশের বিধানসভা নির্বাচনে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে তারকার গ্ল্যামারে৷ এটা বাংলার রাজনীতিতে নতুন বিষয় নয়৷ কিন্তু কবে একজন পরিচারিকা প্রার্থী হয়েছেন? তা-ও আবার দেশের ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী৷

পরিচারিকা যখন প্রার্থী

সব তারকাকে ছাপিয়ে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম কেন্দ্রের প্রার্থী কলিতা মাঝি এই নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক৷ কয়েকটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন কলিতা৷ স্বামী পাইপলাইনের কাজ করেন৷ কিশোর পুত্রকে নিয়ে অভাবের সংসার৷ সামান্য রোজগারে কায়ক্লেশে জীবনধারণ৷ সেই কলিতা কয়েকবছর যুক্ত বিজেপির সঙ্গে৷ তাঁকেই প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছে মোদী-শাহের দল৷ ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটেও লড়েছেন তিনি৷ আপাতত গৃহস্থের কাছ থেকে এক মাসের ছুটি নিয়েছেন কলিতা৷ নেমে পড়েছেন প্রচারে৷ যাচ্ছেন দোরে দোরে৷

প্রচারের ফাঁকে কলিতা উচ্ছ্বসিত কন্ঠে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মোদীজির প্রকল্প মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমার লক্ষ্য৷ নির্বাচনে জিতে সেই কাজ করতে চাই৷ দল আমাকে লড়াইয়ের জন্য বেছে নেওয়ায় খুব খুশি হয়েছি৷’’ নিজে দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করেন৷ তাই সচেতনভাবে প্রার্থী বলেন, ‘‘গরিবের খুব কষ্ট৷ তাদের দুঃখ দূর করতে হবে৷’’ তবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর কাছে ভগবান৷ কলিতা বলেন, ‘‘ওঁকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা জানা নেই৷’’

গরিবের খুব কষ্ট, তাদের দুঃখ দূর করতে হবে: কলিতা মাঝি

উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দল হিসেবে অনেকে চিহ্নিত করেন বিজেপিকে৷ সেই ধারণা গত লোকসভা নির্বাচনে তারা অনেকটাই ভেঙেছে৷ জঙ্গলমহল ও উত্তরবঙ্গের তফসিলি জাতি, উপজাতি ছাড়াও মতুয়া নমশূদ্রদের সমর্থন পেয়েছে পদ্ম শিবির৷ সেই ধারাতেই কলিতার চয়ন বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকদের একাংশ৷ কলিতা প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা বি এল সন্তোষ সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘বিজেপি বরাবর প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রমকে স্বীকৃতি দেয়৷’’ শুধু তিনি নন, বাঁকুড়ার শালতোড়ায় তফসিলি জাতির চন্দনা বাউড়িকে প্রার্থী করেছে বিজেপি৷ দিনমজুর বিজেপি কর্মীর স্ত্রী চন্দনাও নেমে পড়েছেন প্রচারে৷      

চা শ্রমিকের মেয়ে যখন প্রার্থী   

বামেরা এবার অনেক তরুণ নেতাকে প্রার্থী করেছে৷ সংযুক্ত মোর্চার সমর্থনে তারা লড়ছেন৷ তবে এই মোর্চার বাইরে থাকা বাম শক্তির এক তরুণ প্রার্থী নজর কাড়ছেন৷ সিপিআই (এমএল) লিবারেশন ভোটে টিকিট দিয়েছে চা শ্রমিক সুমন্তী এক্কাকে৷ দার্জিলিংয়ের ফাঁসিদেওয়া কেন্দ্রে লড়ছেন তিনি৷ অনেকদিন ধরে চা শ্রমিকদের আন্দোলনে যুক্ত এক্কা পরিবার৷ এই তরুণীর ঠাকুরদা যুক্ত ছিলেন নকশালবাড়ি আন্দোলনে৷ সেই উত্তরাধিকার বহন করে চলেছেন এই আদিবাসী তরুণী৷ ১২ বছর বয়স থেকেই বাবা সিরিল এক্কার কাছ থেকে রাজনীতির পাঠ৷ আজ তাই রাজনৈতিক দর্শন পরিষ্কার তাঁর কাছে৷ ২৬ বছরের সুমন্তী এক্কা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কেন্দ্রের সরকার তো মহামারী৷ নকশাল আন্দোলন হয়েছিল জমিদার-জোতদারদের বিরুদ্ধে৷ এখনও সেই লড়াই চলছে৷ সেটাই মানুষকে বোঝাচ্ছি৷’’ তবে কি রাজ্যের উন্নয়ন চোখে পড়েনি? সুমন্তী বলেন, ‘‘রাস্তা, স্কুল-কলেজ হয়েছে৷ কিন্তু আরো বড় অনেক সমস্যার সমাধান হয়নি৷ চা বাগানের শ্রমিক বা কৃষকদের জন্য সরকার কী করেছে? ভোট আসতেই দুয়ারে সরকার চালু করতে হলো কেন? ১০ বছর ধরে এগুলো করা গেল না কেন?’’ সুমন্তী যুক্তি খাড়া করেন, ‘‘সাইকেল দশম শ্রেণিতে না দিয়ে নীচু ক্লাসে দিলে পড়াশুনো চালাতে গরিবদের আরো সুবিধা হতো৷ নীচু ক্লাসেই পড়া বন্ধ হলে উঁচু ক্লাসে সাইকেল পাবে? তাছাড়া ততদিনে তারা যাতায়াতের উপায়গুলো শিখে যায় নিজেরাই৷’’    

আরো বড় অনেক সমস্যার সমাধান হয়নি: সুমন্তী এক্কা

কেন সুমন্তী এক্কাকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া? লিবারেশনের পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আন্দোলনের মুখকে আমরা তুলে এনেছি৷ চা শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সুমন্তী৷ তাদের সমস্যার কথা জানেন৷ এই এলাকায় বড় সংখ্যায় চা শ্রমিকদের বাস৷ তাই এক্কাকে প্রার্থী করা হয়েছে৷ শুধু তিনি তরুণ বলে প্রার্থী করা হয়নি৷’’ উত্তরবঙ্গে গত লোকসভায় নজরকাড়া ফল করেছিল বিজেপি৷ কার্তিকের বক্তব্য, ‘‘বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ নকশালবাড়িকে মডেল গ্রাম করার কথা বলেছিলেন৷ আদিবাসীদের বাড়িতে এসেছেন অমিত শাহ৷ কিন্তু এলাকার উন্নয়ন হয়নি৷ এক্কা তার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদের মুখ৷’’