ভিন্ন এক স্বাধীনতা দিবস
২৬ মার্চ ২০২০পাকিস্তানের শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নেওয়ার ৪৯তম বার্ষিকীতে স্বাধীনতা দিবস ভিন্ন আঙ্গিকে এসেছে বাংলাদেশে৷ অথচ কত পরিকল্পনাই নেওয়া হয়েছিল৷ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বছরে এবার স্বাধীনতা দিবসের উদযাপন আরো আড়ম্বরভাবে পালন হওয়ার কথা ছিল৷
কিন্তু ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের পর দ্রুত পালটায় পরিস্থিতি, বদলাতে হয় পরিকল্পনা৷ উৎসব আয়োজনের পরিবর্তে শুরু হয় অন্যরকম যুদ্ধ প্রস্তুতি৷
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধের একমাত্র উপায় জনসমাগম এড়িয়ে চলা৷ প্রায় এক বছর ধরে নানা পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণের পরও তাই শেষ মুহূর্তে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষের উদযাপন অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করেন, স্থগিত করা হয় মুজিব শতবর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠান৷
ভয়াবহ সংক্রামক ব্যাধি কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে একে একে আসা নানা ঘোষণার মধ্যে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আকার সীমিত করার ঘোষণাও আসে৷
গত ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করে জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তায় স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বঙ্গভবনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বাতিল ঘোষণা করেন৷ স্বাধীনতা পদক বিতরণ অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়৷
২৫ মার্চের ভয়াল কালরাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ বাঙ্গালির ওপর অস্ত্রহাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে৷ বুধবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত শহীদদের স্মরণ করেন শেখ হাসিনা৷
একই সঙ্গে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘‘জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আমরা এবার স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ভিন্নভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷''
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘জনসমাগম হয় এমন সব ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি৷ এই মুহূর্তে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা৷''
গত ৪৯ বছরে এবারই প্রথম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে এমন কাটছাঁট করতে হলো৷
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআর এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বুধবার পর্যন্ত ৩৯ জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে৷ যাদের মধ্যে পাঁচজন মারা গেছেন এবং সাতজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন৷
সারাবিশ্বে ১৭৩টি দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে৷ এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা প্রায় ২১ হাজার, আক্রান্ত সাড়ে চার লাখের বেশি মানুষ৷ প্রতিদিনই নতুন আক্রান্তের সংখ্যা যেমন দ্রুত গতিতে বাড়ছে, তেমনি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও৷
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার পরই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়৷ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর অসংখ্য বলিদানের পর আসে স্বাধীনতা, হার মানে পাকিস্তানি বাহিনী৷ বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে নতুন এক দেশের জন্ম হয়৷
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে বর্তমান পরিস্থিতিকেও যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেন প্রধানমন্ত্রী৷
বুধবারে ভাষণে তিনি বলেন, ‘‘করোনা ভাইরাস মোকাবিলাও একটি যুদ্ধ৷ এ যুদ্ধে আপনারা ঘরে থাকুন৷ এখন আপনাদের দায়িত্ব ঘরে থাকা৷ আমরা সকল প্রচেষ্টায় এ যুদ্ধে জয়ী হব৷''
‘‘আপনারা স্বাস্থ্য উপদেশ মেনে চলুন৷ ভিড় এড়ান, বিদেশ থেকে যারা এসেছেন তারা হোম কোয়ারান্টিনে থাকুন, নির্দেশনা মেনে চলুন৷ ঘরে নামাজ পড়ুন, অন্য ধর্মের মানুষরাও ঘরে থেকে প্রার্থনা করুন৷''
করোনার বিস্তার রোধে বৃহস্পতিবার থেকে বাংলাদেশে ১০ দিনের ছুটি শুরু হয়েছে৷ জনগণকে ঘরে রাখতে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসের ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে পাঁচ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন৷ যদিও হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিসসহ জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান এই ছুটির আওতায় পড়বে না৷ সীমিত আকারে ব্যাংকও খোলা থাকবে৷
২৬ মার্চ থেকে দেশজুড়ে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে৷ স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করতে গত মঙ্গলবার বিকাল থেকে সারা দেশে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে৷
শোষকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিতে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনা বাঙালি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধেও একদিন জয় ছিনিয়ে আনবে৷
এসএনএল/এডিকে