ভিড় সামলাতে প্রযুক্তি
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩বার বার এমনটা ঘটে৷ মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়৷ তখন এমনকি জীবন বিপন্ন হতে পারে৷ অনেক সময় ভিড়ের চাপে মানুষ পদপিষ্ট হয়ে যায়৷ এমন বিপর্যয় এড়ানোর চেষ্টা করছেন জার্মানির ইয়ুলিশ গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা৷ ইয়ুলিশ গবেষণা কেন্দ্রের আর্মিন সাইফ্রিড বললেন, ‘‘বাসিগো প্রকল্পের আওতায় আমরা দমকল, পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলির সঙ্গে কাজ করছি৷ বড় কোনো অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা আরও উন্নত করাই আমাদের লক্ষ্য৷''
‘বাসিগো' প্রকল্পের এক পরীক্ষায় অংশ নিতে ড্যুসেলডর্ফ শহরে মেলা প্রাঙ্গণে ৭০০-রও বেশি স্বেচ্ছাসেবী আনা হয়েছিল৷ ছাদে লাগানো ৩০টি ক্যামেরায় ভিড়ের গতিবিধির প্রতিটি ছবি তোলা হয়েছে৷ প্রত্যেকের মাথার টুপিতে আলাদা ‘বারকোড' ছিল, যাতে তাদের আলাদা করে চেনা যায়৷
অ্যামবুলেন্স-এর কর্মীদের ভিড় ঠেলে এক দিক থেকে অন্য দিকে যেতে কত সময় লাগে – গুরুত্বপূর্ণ এই এক্সপেরিমেন্ট-এর মাধ্যমে সেটাই দেখা হয়েছে৷ গোটা বিশ্বে ইয়ুলিশ কেন্দ্রের গবেষকদের সুনাম রয়েছে৷ সবাই তাঁদের সাফল্যের সুফল পায়৷ আর্মিন সাইফ্রিড বললেন, ‘‘আমরা আমাদের তথ্য আন্তর্জাতিক স্তরে বাকি গবেষকদের সঙ্গে ভাগ করে নেই৷ ওয়েবসাইটেই সবার জন্য তথ্য জমা থাকে৷ সেখান থেকে ভিড়ের গতিবিধির ভিডিও ডাউনলোড করা যায়৷ যত বেশি গবেষক এই তথ্য কাজে লাগিয়ে নিজেদের কাজে উন্নতি আনবেন, আমি ততই খুশি হবো৷''
ফুটবল স্টেডিয়াম, মেলা প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে শহরের মাঝে বিজ্ঞানীরা তাঁদের পরীক্ষা চালিয়ে গেছেন৷ আসল ছবি থেকে কম্পিউটারে অ্যানিমেশন সৃষ্টি করা হয়েছে৷ তাতে দেখা গেছে, লাল জায়গাগুলিতে ভিড়ের চাপ বেশি৷ এই সিমুলেশন থেকে গবেষকরা গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করেছেন৷ যেমন তাঁরা দেখেছেন, ভিড় যত বেশি হয়, মানুষ তাদের নিজস্ব ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে৷ আতঙ্ক দেখা দিলে তারা দিশাহারা হয়ে পড়ে৷ স্পষ্ট নির্দেশিকা থাকলে তবেই এমন অরাজকতা এড়ানো সম্ভব৷ সিগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গেবহার্ড রুশ বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি মানুষই স্বতন্ত্র, সে অন্যদের সঙ্গে এখনো সমন্বয় করেনি৷ সবাই নিজেকে গড্ডালিকা প্রবাহে ভাসিয়ে দেয়৷ এখন হয় সমষ্টি হিসেবে ভিড়ের মধ্যে মানুষ তার বুদ্ধি খেলিয়ে সমস্যার সমাধান করবে, অথবা বাইরে থেকে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে৷''
পরীক্ষার মধ্যেই গবেষকরা আচমকা একটা আবিষ্কার করে বসলেন৷ তাঁরা বিশেষ কিছু না ভেবেই মাঝে একটি ছোট থাম বসিয়েছিলেন৷ তার ফলে যা ঘটলো, তা দেখে বেশ অবাক হয়েছেন তাঁরা৷ ইয়ুলিশ গবেষণা কেন্দ্রের আর্মিন সাইফ্রিড বলেন, ‘‘এটা দেখে আমরা বেশ অবাক হলাম যে থাম বসালে সত্যি কাজ হয়৷ মানুষের চলাফেরার পথে কিছু জায়গার দখল নিলে কিন্তু আর জ্যাম এড়ানো যায়৷ এই ফল আমরা স্পষ্ট দেখতে পেলাম৷ এবার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে, কোন গতিবেগে বা কতটা ভিড় হলে বাস্তবে কী ঘটে৷ তার জন্য প্রায় ৬ মাস লাগবে৷ কিন্তু খালি চোখে যা দেখলাম, তা সত্যি অবাক করার মতো৷''
ইয়ুলিশ গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা প্রায় এক দশক ধরে মানুষের ভিড় নিয়ে কাজ করছেন৷ তাঁরা সেই কাজ চালিয়ে যাবেন৷ বড় আকারে অনুষ্ঠানে আজকাল যে বিপর্যয় এড়ানো যাচ্ছে, তার পিছনে তাঁদেরও কিছুটা অবদান রয়েছে৷