ভার্চুয়াল সমুদ্রযাত্রার রোমাঞ্চ
৩০ নভেম্বর ২০১৩বাতাসের জোর হয়তো ফোর্স টেন, পনেরো মিটার উঁচু সব ঢেউ৷ উত্তর অ্যাটলান্টিকে গ্রিনল্যান্ডের কাছে অবস্থা মাঝেমধ্যে এ রকমই দাঁড়ায় বটে৷ আবার অন্য কোনো জাহাজ বিপদে পড়ল নাকি, তাও দেখতে হয়৷
হয়তো অন্য একটি জাহাজ থেকে বেতারে কার কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে:
‘‘সুইডিশ স্পিরিট, সুইডিশ স্পিরিট, এক দশমিক ছয় মিটার থেকে আমরা আলফা গ্লোরি বলছি...''
‘‘হ্যালো, আলফা গ্লোরি৷ সুইডিশ স্পিরিট জবাব দিচ্ছি৷ ওভার৷''
‘‘আমরা নড়াচড়া করতে পারছি না৷ ঢেউ বড্ড বেশি৷ জাহাজ চালাতে পারছি না৷ বেশি কাছে আসবেন না...''
‘‘আনেবল টু ম্যান্যোভার? বুঝলাম৷ আমরা কোর্স বদলাচ্ছি৷ ওভার৷''
গ্যোটেবর্গের চ্যালমার্স কলেজের ছাত্র হেনরিক গ্যোরেনসেন বলেন: ‘‘কনটেনার জাহাজ যদি বেশি দোল খায়, তাহলে কনটেনারগুলো ছিটকে পানিতে পড়ে যাবার ভয় থাকে৷ অর্থাৎ দুটো বড় বিপদ হচ্ছে: অন্য জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়া, বা জাহাজ বেশি রোল করার ফলে কার্গো পানিতে পড়া যাওয়া৷''
২০০৬ সাল যাবৎ একটি সিমিউলেটর কলেজে রয়েছে৷ সাতটি প্রোজেক্টর দিয়ে একটি বাস্তবধর্মী ছবি তিনশো-ষাট ডিগ্রির স্ক্রিনটিতে প্রোজেক্ট করা হয়৷ যারা নতুন দেখছে তাদের পক্ষে সি-সিক হয়ে পড়া, অর্থাৎ গা গুলনো আশ্চর্য কিছু নয়৷
প্রশিক্ষক লার্স আক্সভি বলেন: ‘‘আমরা এখানে সিমিউলেটর দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার নানা পন্থা খুঁজছি৷ দেখতেই পাচ্ছেন, আমরা এক ধরনের গতিবিধি পাচ্ছি, কিন্তু তার বাস্তব অনুভূতিটা নয়৷ এগুলো হচ্ছে খারাপ আবহাওয়া মোকাবিলা করার, সেরকম পরিস্থিতিতে কী করতে হয়, সেগুলোর নানা প্রোসিডিওর৷''
কলেজে চার বছরের পাঠ্যক্রম চলাকালীন ছাত্ররা মোট বারো মাস সময় কাটায় জাহাজে – প্রধানত কনটেনারবাহী জাহাজ কিংবা তেলের ট্যাঙ্কারে৷ এই ধরনের জাহাজে কোটি কোটি ডলার মূল্যের পণ্য থাকে; সেগুলিকে নির্দিষ্ট বন্দরে পৌঁছে দিতে হবে, আবহাওয়া যেমনই থাকুক না কেন৷ দেরি হলে বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে৷ ছাত্রদের তার জন্যও তৈরি করা হয়৷ সব প্রতিকূল অবস্থায় একটা উপায় জানা থাকা চাই - এই হল লক্ষ্য৷ হেনরিক গ্যোরেনসেন-এর ভাষায়: ‘‘জাহাজ যদি তীরের কাছে থাকে আর বাতাস সাগর থেকে কূলের দিকে বয়; জাহাজ যদি ড্রিফট করতে শুরু করে অথচ স্টিয়ার করা যাচ্ছে না – তাহলে সমূহ বিপদ৷ আমার তো ভয় করবেই – অবশ্য আমি এ যাবৎ এমন পরিস্থিতি দেখিনি৷''