ভার্চুয়াল আদালত কতটা সফল হবে?
১১ মে ২০২০এটা শুরু করতে গিয়ে অভিজ্ঞতা ও গ্যাজেট-এর সংকট তৈরি হয়েছে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন৷ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, ‘‘মামলা জট কমাতে কমাতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷’’
করোনায় আদালত বন্ধ থাকায় আরো বেড়ে যাচ্ছে মামলা জট৷ তাই ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে কিছুটা হলেও মামলা জট কমানো এবং বিচার প্রার্থীদের বিচার পাইয়ে দেয়ার জন্য এই উদ্যোগ বলে জানান তিনি৷ তিনি বলেন,‘‘প্রাথমিকভাবে জামিন শুনানি এবং দেওয়ানি আদালত চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ আর উচ্চ আদালতও ভার্চুয়াল বেঞ্চের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তবে ফৌজদারি বিচার চালাতে হলে সাক্ষ্য আইনের কিছু পরিবর্তন আনতে হবে৷ সেই আইন সংশোধনের উদ্যোগও আমরা নিচ্ছি৷’’
ভার্চুয়াল আদালত যেভাবে
ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্ট এরই মধ্যে ২১ দফা নির্দেশনা জারি করেছে৷ তিনটি বেঞ্চ ও আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে৷
সুপ্রিম কোর্ট অধস্তন আদালতকে ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে শুধুমাত্র জামিন শুনানির অনুমতি দিয়েছে৷
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভার্চুয়াল আদালত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পরিচালিত হবে৷ প্রত্যেক আদালত একটি ই-মেইল আইডি এবং মোবাইল ফোন নাম্বারের মাধ্যমে চিহ্নিত হবে৷ আইনজীবীরাও একইভাবে চিহ্নিত হবেন৷ জামিন আবেদন এবং শুনানির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অনলাইনে দাখিল করতে হবে৷ এই শুনানি এবং আদালতের কাজে অ্যাপ ব্যবহার করা হবে৷ আদালতের কাজ পরিচালনা হবে আদালতের প্রচলিত অফিস সময়ের মধ্যে৷ আর ভার্চুয়াল উপস্থিতি শারীরিক উপস্থিতি হিসেবে গ্রহণ করা হবে৷
এই ভার্চুয়াল আদালতের জন্য সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারকের অধীনে ইউএনডিপি প্রশিক্ষণ, অনলাইন টিউটোরিয়াল ও সফটওয়্যারের কাজ করছে৷ এই কাজে যুক্ত ইউএনডিপির একজন কর্মকর্তা জানান, উচ্চ আদালত প্রাথমিকভাবে অধস্তন আদালতের ৮৩ জন বিচারককে মনোনীত করেছে৷ তাদের প্রশিক্ষণ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে৷ এই প্রশিক্ষণে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকেও সংযুক্ত করা হয়েছে৷ তারা বার কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে৷ ধারাবাহিকভাবে বিচারকদের এই প্রশিক্ষণ চলবে৷ আর জেলার আইনজীবীদের বারের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলে জানান তিনি৷
এই পুরো কাজটিই হচ্ছে করেনার কারণে অনলাইনে৷ এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় ভিডিও টিউটেরিয়াল ও ম্যানুয়াল তৈরি করা হয়েছে৷ বিচার সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এটা অনলাইনে আপ করা হচ্ছে৷ ওই কর্মকর্তা জানান, বিচারকাজে আমরা মাইক্রোফসফট-এর মিটিং অ্যাপ টিমস্ ব্যবহারের সুপারিশ করছি৷
প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা
রংপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক জানান, ‘‘প্রথম দিনে আমাদের এখানে ভার্চুয়াল আদালত শুরু হয়নি৷ আদালত থেকে আমাদের শুধু জানানো হয়েছে৷ আমরা সুপ্রিম কোর্টের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পড়ে বোঝার চেষ্টা করছি৷ তবে এটা কিভাবে হবে তা আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারছি না৷’’
তিনি বলেন, ‘‘আমার একটি স্মার্ট ফোন আছে৷ কিন্তু এটা দিয়ে ফোন করা আর ফোন ধরা ছাড়া আমি আর কিছুই করতে পারি না৷ এখন কি অ্যাপ লাগবে, কিভাবে ডাউনলোড করবো তা কিছুই জানি না৷ এর জন্য আসলে প্রশিক্ষণ দরকার হবে৷এর মাধ্যমে জমিন শুনানি হয়তো হবে, কিন্তু বিচার কাজ কিভাবে হবে! উন্নত বিশ্বে হয় বলে শুনেছি৷ কিন্তু আমাদের তো সেই স্থাপনা, ল্যাপটপ, প্রশিক্ষণ কিছুই নাই৷’’
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেনও জানান সোমবার ঢাকায় ভার্চুয়াল আদালত শুরু সম্ভব হয়নি৷ তবে চারজন বিচারকের ইমেইল এবং মোবাইল ফোন নাম্বার জানিয়ে দেয়া হয়েছে৷ তারা মঙ্গলবার থেকে জামিন শুনানি করবেন৷
তবে তিনি মনে করেন, ‘‘প্রশিক্ষণ ছাড়া এটা নিয়ে এগোনো কঠিন৷ কারণ ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে ২৩ হাজার আইনজীবী আছেন৷ আদালতের সংখ্যা অনেক৷ তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরো অনেক কর্মকর্তা -কর্মচারী আছেন৷ তাদের কিভাবে ভার্চুয়াল কোর্টে সংযুক্ত করা হবে আমি জানি না৷ বড় জোর জামিন আর দেওয়ানি আদালতের ইনজাংশন-এর কাজ হতে পারে৷’’
সুপ্রিম কোর্ট
আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান আগামী ১৪ ও ২০ মে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমের শুনানি করবেন৷
হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান অতীব জরুরি সব ধরনের রিট ও দেওয়ানি মোশন এবং এ সংক্রান্ত আবেদন নেবেন৷ অতীব জরুরি সব ধরনের ফৌজদারি মোশন এবং এসংক্রান্ত আবেদনপত্র নেবেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন৷ বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার সাকসেশন আইন, অ্যাডমিরালিটি কোর্ট আইন, ব্যাংক কোম্পানি আইনসসহ কয়েকটি আইনের অধীনে আবেদনপত্র, আপিল শুনানি করবেন৷
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, ‘‘আজ (সোমবার) ই-মেইলে আইনজীবীরা তাদের আবেদন জমা দিয়েছেন৷ এখন আদালত যেভাবে তারিখ দেবেন সেভাবে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে শুনানি ও আদেশ হবে৷ শুনানির জন্য ভিডিও কনফারেন্স অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে৷’’
তিনি মনে করেন, ‘‘বিচার ব্যবস্থা যে করোনার মাধ্যমেও সচল আছে সেটা প্রমাণ করার জন্যই এই ব্যবস্থা৷ তবে এর মাধ্যমে খুব বেশি কিছু করা সম্ভব নয়৷ অনেক তাৎক্ষণিক ডকুমেন্ট বা প্রমাণ ভার্চুয়াল আদালতে উপস্থাপন সম্ভব হবে না৷ এর মাধ্যমে পুরো বিচার প্রক্রিয়া সম্ভব নয়৷’’
তিনি বলেন, কোনো আইনজীবী প্রশিক্ষণ নিতে চাইলে ইউএনডিপির সাথে যোগাযোগ করে নিতে পারেন৷
সাক্ষ্য আইন সংশোধন হচ্ছে
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, বিচার বিভাগকে ডিজিটাইজ করার জন্য আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা ছিলো৷ ই-জুডিশিয়ারি করার জন্য একটি পরিকল্পনা একনেকে আছে৷ একনেকে পাস হলেই এটার কাজ হবে৷ আগেই পরিকল্পনার কারণে কেরানীগঞ্জে যে নতুন জেলখানা তৈরি করা হয়েছে সেখানে ভার্চুয়াল কোর্টের স্থাপনা রাখা হয়েছে৷ আর এই করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটা বাস্তবায়নের একটা সুযোগ হয়েছে৷ আমরা ভার্চুয়াল আদালত আইনটি তাই করে ফেলেছি৷ ফলে জরুরি জামিন ও দেওয়ানি আদালতের জরুরি কিছু কাজ এই ভার্চুয়াল আদালতে করা যাবে৷
তিনি বলেন, ‘‘সাক্ষ্যগ্রহণসহ পুরো বিচারকাজ আপাতত এই ভার্চুয়াল আদালতে সম্ভব নয়৷ সেটা করতে হলে সাক্ষ্য আইন সংশোধন করতে হবে৷আরা সেটা তাড়াহুড়া করে করতে গেলে ত্রুটি থাকতে পারে৷ তাই আগামী বাজেট অধিবেশনে এই সংশোধনী আনা হবে৷’’
গত বছরের মে মাসের ছবিঘরটি দেখুন...