সারোগেসি শিল্প
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩অন্যের জন্য সন্তান গর্ভে ধারণ তথা সারোগেসি প্রথা ভারতে বৈধতা পেয়েছে এক দশকেরও বেশি সময় আগে৷ তবে এমন প্রথা সম্পর্কে ভারতের মানুষ সচেতন হয় ২০০৪ সালে, যখন গুজরাটের ৪৭ বছর বয়সি এক নারী তাঁর নিজের মেয়ের জন্য যমজ সন্তান প্রসব করেন৷
অবশ্য ভারতে আইনগতভাবে সারোগেসি প্রথা বৈধ হলেও ইউরোপের অধিকাংশ দেশেই তা অবৈধ৷ আর জার্মানি তো এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক৷ তাই ভিসা রেগুলেশনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘‘যদি তুমি ভারতে সারোগেট মাতার মাধ্যমে সন্তান লাভের পরিকল্পনা করে থাকো, তাহলে জেনে রাখো যে, জার্মানিতে সারোগেসি নিষিদ্ধ৷ তাই সারোগেট মাতার গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশুর জার্মান পাসপোর্ট পাওয়ার কোন অধিকার নেই৷''
২০১০ সালে ভারতে সারোগেট মাতার গর্ভে জন্ম নেওয়া যমজ শিশুকে এক দম্পতি জার্মানিতে আনার অনুমতি চাইলে তা প্রত্যাখ্যান করে জার্মানি৷ তবুও অনেক দেশের মানুষের জন্যেই অল্প খরচে সারোগেট মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশু পাওয়ার লোভনীয় ঠিকানা ভারত৷ ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে সারোগেসি ক্লিনিক পরিচালক ডা. শিবানী সচদেব গৌর বলেন, ‘‘অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, স্পেন, জাপান, নরওয়ে, সুইডেন, ইসরায়েল, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইকুয়েডর এবং কিউবা থেকে আমাদের এখানে ক্লায়েন্ট আসেন৷''
তাদের এমনই এক ক্লায়েন্ট হলেন অস্ট্রেলিয়ার নাথান সি, যিনি অতি সম্প্রতি ভারতে সারোগেট মায়ের মাধ্যমে যমজ শিশুর পিতা হতে পেরেছেন৷ একটি ছেলে ও একটি মেয়ে শিশুর এই আনন্দিত বাবা তাই বলেন, ‘‘আমরা প্রতিদিন আমাদের বাচ্চাদের দিকে হাসিমুখে তাকাই এবং ভারতকে ধন্যবাদ জানাই৷'' তবে সন্তান পাওয়ার এই সুখের জন্য ৪৪ বছর বয়সি এই পিতাকে গুনতে হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার মার্কিন ডলার৷ এই কথা জানান তিনি৷ সমকামী নাথান সি প্রায় ছয় বছর ধরে তাঁর ছেলেবন্ধুর সাথে বসবাস করার পর সন্তান লাভের সিদ্ধান্ত নেন৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ায় দত্তক নেয়ার জন্য বাচ্চা পাওয়া সহজ নয়৷ সেখানে এমন শিশু পাওয়া যায় না বললেই চলে৷ আর সারোগেসি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার আইন বেশ জটিল৷ তাছাড়া খরচও অনেক৷''
নতুন দিল্লির সারোগেসি সেন্টার ইন্ডিয়া, এসসিআই-এর প্রধান ডা. বিশাল দত্ত গৌর ২০০৮ সাল থেকে সারোগেট মায়েদের নিয়ে কাজ করছেন৷ তিনি জানালেন, এ পর্যন্ত তাঁর তত্ত্বাবধানে প্রায় ৫০০ ডেলিভারি হয়েছে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের অধিকাংশ ক্লায়েন্ট ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন৷ প্রতিমাসে আমরা ৪০০ থেকে ৫০০ আবেদন পাই৷''