ভারতের টিকা রপ্তানিতে বাধা নেই, জানালেন সেরাম প্রধান
৫ জানুয়ারি ২০২১অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার করোনা ভাইরাসের টিকার উৎপাদন ও বিপননের দায়িত্বে রয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট৷ গত রোববার টিকাটির অনুমোদন দিয়েছে ভারতের কর্তৃপক্ষ৷ সেদিন সেরামের প্রধানের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছিল নিজেদের চাহিদা মেটাতে টিকা রপ্তানির উপর দেশটির সরকারের কয়েক মাসের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ এর ফলে টিকা পেতে সেরামের সঙ্গে বাংলাদেশের করা চুক্তি নিয়েও তৈরি হয় অনিশ্চয়তা৷ এই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার আদর পুনাওয়ালা তার টুইটে বিষয়টি পরিস্কার করেছেন৷ তিনি বলেছেন, সব দেশেই টিকা রপ্তানির অনুমোদন রয়েছে৷
এদিকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার করোনা ভাইরাসের টিকা আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর৷ সোমবারের এই অনুমোদনের ফলে ভারত থেকে টিকা আমদানির পথে বাংলাদেশের দিক থেকে আর কোনো বাধা থাকলো না৷
সেরামের কাছ থেকে তিন কোটি টিকা কিনতে চুক্তি করেছে বাংলাদেশের বেক্সিমকো৷ টিকা আমদানির অনুমতির জন্য প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র গত বৃহস্পতিবারই ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে জমা দিয়েছিল তারা৷ তার ভিত্তিতে সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন চাওয়া হয়৷
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘আমরা এই টিকা আমদানির জন্য একটা এনওসি দিয়েছি৷ এখন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি টিকা আমদানি করতে পারবে৷ এখন এই টিকা আমদানিতে আর কোনো বাধা নাই৷''
এরইমধ্যে যুক্তরাজ্য, আর্জেন্টিনা ও ভারত এই টিকার অনুমোদন দিয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এই টিকা এখন আমাদের দেশের মানুষের দরকার৷ এই টিকা এখন যুক্তরাজ্য ও ভারতে অনুমোদন পেয়েছে, সেসব জায়গায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের স্টাডি আছে৷ এছাড়া আমাদের এক্সপার্ট কমিটির দেওয়া সিদ্ধান্ত বিচার বিশ্লেষণ করেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷''
চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে টিকার ৫০ লাখ ডোজ পাওয়ার কথা বাংলাদেশের৷ তিন কোটি ডোজ টিকার জন্য অগ্রিম হিসেবে ৬০০ কোটি টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন৷ তবে ভারত টিকা রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, রোববার সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধানের বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বের হওয়ার পর বাংলাদেশের টিকা পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা৷ বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘এ বিষয় নিয়ে সকাল থেকে কাজ করছি৷ বেক্সিমকো, ফরেন মিনিস্ট্রি ও ভারতের মিশনের সাথে আলোচনা হয়েছে৷ তারা আশ্বস্ত করেছেন, আমাদের সাথে যে চুক্তি হয়েছে সেই চুক্তি ব্যাহত হবে না৷ কোনো সমস্যা হবে না, আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি৷''
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘‘যে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার কথা ভারত সরকার বলেছে শুধুমাত্র কর্মাশিয়াল অ্যাকটিভিটিজের ওপর, আমাদেরগুলোর ওপর না৷ কারণ, আমাদেরটা সরকার টু সরকার৷'' তিনি জানান, এ অনুমোদন পাওয়ার পর সেরাম ইনস্টিটিটিউট এখন ডব্লিউএইচওর কাছে অনুমোদনের জন্য যাবে, সেখানে তিন সপ্তারের মত সময় লাগবে৷ ‘‘আমাদের সময় বলা ছিল ফেব্রুয়ারিতে পাবো৷ এ তিন সপ্তাহ পর, অর্থাৎ ডিলে হওয়ার কোনো অবকাশ নেই৷ দুশ্চিন্তা হওয়ার মতো এখনো কিছু হয়নি৷''
টিকা পাওয়ার নিয়ে সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও৷ সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘ওরা (ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) বলেছেন যে, টিকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত যেহেতু সর্বোচ্চ পর্যায়ের ছিল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে আলাপ করেই এটা হয়েছে, বাংলাদেশ প্রথম টিকা পাবে৷ সুতরাং কোনো ধরনের ব্যান এটার উপরে হবে না৷ এটা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নাই৷ উনারা বলেছেন যে, বাংলাদেশ মাস্ট নট বি কনসার্নড৷''
রোববার সন্ধ্যায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসানও নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন৷ চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই' বাংলাদেশ টিকা পাবে বলে আশা করেনন তিনি৷ বলেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে কি, আমি বা আমরা এটা নিয়ে অতটা চিন্তিত না৷ কারণ, আমার এগ্রিমেন্টটা হয়ে গেছে৷ ওই চুক্তিতে ক্লিয়ারকাট বলা আছে, আমাদের দেশে অ্যাপ্রুভাল দেওয়ার এক মাসের মধ্যে তারা আমাদের টিকা পাঠাবে৷''
এফএস/এসিবি (বিডিনিউট টোয়েন্টিফোর ডটকম)