ভারতের কৃষক আন্দোলন নিয়ে টুইটযুদ্ধ
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ভারতের কৃষক আন্দোলন নিয়ে টুইট-যুদ্ধ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। কার্যত দ্বিধাবিভক্ত দেশের অভিনয় এবং ক্রীড়াজগৎ। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।
দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ভারতে কৃষক আন্দোলন চলছে। দিল্লির সীমানায় এখনো বসে আছেন কৃষকরা। তারই মধ্যে মঙ্গল এবং বুধবার একাধিক ক্রীড়া এবং অভিনয় জগতের তারকা কৃষক বিদ্রোহকে সমর্থন জানিয়ে টুইট করেন। যার মধ্যে দীপিকা পাড়ুকোন, তাপসী পান্নু যেমন আছেন, তেমনই আছেন সাবেক ক্রিকেটার হরভজন সিংহ, অলিম্পিকে দেশকে মেডেল এনে দেওয়া বীজেন্দ্র সিংরা। কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র। প্রীতি জিন্টাও সমর্থনের কথা গোপন করেননি।
তবে বুধবার শোরগোল ফেলে দেন বিশিষ্ট হলিউড গায়িকা এবং অভিনেত্রী রিহানা। নিজের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে তিনি লেখেন, আন্দোলনরত কৃষকদের কেন সমর্থন করবে না গোটা বিশ্ব?
এখানেই শেষ নয়। রিহানার টুইটের কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম মুখ গ্রেটা থনবার্গ কৃষকদের সমর্থনে টুইট করেন।
আন্তর্জাতিক দুই ব্যক্তিত্বের টুইটের পরেই তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। বুধবার রাতেই ভারতের বিদেশমন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে জানায়, রিহানাদের টুইট 'অতিরঞ্জিত' বা 'সেনসেশনাল'। বিদেশ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, দেশের একাংশের কৃষক নতুন কৃষি আইন নিয়ে আন্দোলন করছে। এতে সকলের সমর্থন নেই। পুরো বিষয়টি না জেনে এ ধরনের টুইট করা উচিত নয়।
বস্তুত, বিদেশমন্ত্রকের ওই বিবৃতির পরেই সরকারের সমর্থনে ক্রীড়া এবং অভিনয় জগতের আরেকটি অংশকে দাঁড়াতে দেখা যায়। পর পর টুইট করতে থাকেন সচিন তেন্ডুলকর, বিরাট কোহলি, অনিল কুম্বলে সহ একাধিক বর্তমান এবং সাবেক ক্রিকেটাররা। তাঁদের বক্তব্য, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা জরুরি। বিদেশ শক্তি যেন সার্বভৌমত্বে আঘাত হানতে না পারে।
অক্ষয় কুমার, অজয় দেবগনের মতো অভিনেতারাও সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের টুইটের ভাষাও কার্যত একইরকম। বৃহস্পতিবার সকালে টুইট করেছেন প্বীণ গায়িকা লতা মঙ্গশকর। তিনিও সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
সিএএ বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই অভিনয় জগতে টুইটি ভাগ স্পষ্ট তৈরি হয়েছিল। দীপিকা, তাপসীরা শুধু সরকারবিরোধী টুইট করেননি, বিভিন্ন আন্দোলনেও সামিল হয়েছেন। জেএনইউয়ে আহত ছাত্রদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন দীপিকা। সে জন্য তাঁকে অ্যান্টি ন্যাশনাল বা জাতীয়তাবিরোধী তকমাও পেতে হয়েছে। তবে বুধ এবং বৃহস্পতিবার কৃষক আন্দোলন ঘিরে তারকার টুইট যুদ্ধ স্পষ্ট মেরুকরণ তৈরি করে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, রিহানার টুইটকে এতটা গুরুত্ব দিয়ে সরকার নিজেই নিজের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। এর ফলে পুরো বিষয়টি লাইম লাইট পেয়ে গিয়েছে।
এ দিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতেও বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গণতন্ত্রের লক্ষণ। পরক্ষে তারাও কৃষক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বলে কোনো কোনো কূটনীতিকের বক্তব্য। যদিও এর আগে অ্যামেরিকা জানিয়েছিল, ভারতের নতুন কৃষি আইন বাজার খুলে দেবে।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টেও ভারতের কৃষক আন্দোলন নিয়ে একটি বিতর্কসভা আহ্বান করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যে বেশ কিছু শিখ সাংসদ আছেন। প্রথম থেকেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তাঁরা কৃষক আন্দোলন নিয়ে সরব। এর আগেও এ বিষয়ে তাঁরা বিতর্ক চেয়েছিলেন।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই, এএনআই)