ভারতের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের বাজারে আগুন
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯মজুত ঠেকাতে গঠন করা হয়েছে মনিটরিং টিম৷
বাংলাদেশে পেঁয়াজের ঘাটতি আছে৷ মোট চাহিদার দুই তৃতীয়াংশ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় স্থানীয়ভাবে৷ বাকিটা আমদানি করতে হয়৷ প্রধানত ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ দিয়েই ওই ঘাটতি মেটানো হয়৷ তাই ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়লে বাংলাদেশেও বাড়ে৷ ভারত পেঁয়াজের দাম প্রতি টন ৩৫০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করায় গত দু'মাস ধরে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা চলছিল৷ এবার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার সিদ্ধন্ত নিয়েছে ভারত সরকার৷ ফলে এক রাতেই বাংলাদেশে পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা হয়েছে৷ দু'মাস আগে স্বাভাবিক সময়ে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪০ টাকা৷ ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিস্থিতি যা তাতে পেঁয়াজের দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় বলা মুশকিল৷
কলাবাগানের খুচরা বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, ‘‘ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে এই খবরের পর রবিবার রাত থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে৷ কয়েক ঘণ্টায় দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা থেকে কেজি ১২০টাকা হয় আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকা থেকে হয়ে যায় ১১০টাকা৷ তবে আগস্ট মাসে দেশি পেঁয়াজ ছিল প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ছিল ৩৫ টাকা কেজি৷''
হিলির ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ যত পেঁয়াজ আমাদনি করে তার ৭০ ভাগই আসে ভারত থেকে৷ আমরা অতি মাত্রায় ভারতনির্ভর৷ তাই ভারতে পেঁয়াজের সংকট হলে আমাদের এখানেও সংকট হয়৷ এই বছর তারা পেঁয়াজের দাম দুই দফা বাড়িয়েছে৷ আর শেষ পর্যন্ত রপ্তানিই বন্ধ করে দিলো৷ আবার কবে রপ্তানি শুরু করবে তার ঠিক নেই, কারণ, ভারতেই এখন পেঁয়াজের সংকট৷ তাদের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে৷ ভারতে যে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৫টাকা, তা হয়ে গেছে ৩৫ টাকা৷''
পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়৷ ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫ টাকা দরে টিসিবি'র মাধ্যমে ঢাকায় ৩৫টি স্থানে, চট্টগ্রামে ১০টি স্থানে আর বাকি ছয়টি বিভাগীয় শহরের পাঁচটি করে স্থানে বিক্রি হবে মঙ্গলবার থেকে৷
আর পেঁয়াজ যাতে ব্যবসায়ীরা মজুদ করতে না পারে সেজন্য ১০টি টিম গঠন করে দেশের ১০টি এলাকায় পাঠানো হয়েছে৷ মিশর, তুরস্ক এবং মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমাদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ মিশর থেকে দুটি পেঁয়াজবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে৷
বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আগামী দেড় মাসের মধ্যে বাজারে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজ উঠবে৷ আমদানির পাইপ লাইনে যা আছে তা মিলিয়ে আমাদের দুই মাসের পেঁয়াজ মজুদ আছে৷ তাই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই৷ যাতে কেউ মজুদ করতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা৷ এজন্য ১০টি টিম ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কাজ শুরু করেছে৷ পেঁয়াজ পচনশীল ভোগ্যপণ্য, এটা যারা মজুদ করবেন, তারা ক্ষতির মুখে পড়বেন৷''
তিনি জানান, ‘‘খোলাবাজারে আগেও পেঁয়াজ বিক্রি হতো৷ এখন আমরা দ্বিগুণ করে দিয়েছি৷ ঢাকার বাইরে প্রয়োজন হলে আরো বাড়াবো৷ তাছাড়া তুরস্ক, মিশর ও মিয়ানমার থেকে আমরা পেঁয়াজ আনছি৷ মজুদ ঠেকানোর ওপর আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি৷ এটা ঠেকাতে পারলেই কোনো সংকট হবে না৷''
বাণিজ্য মন্ত্রনালয় জানায়, বাংলাদেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন৷ এবছর উৎপাদন হয়েছে ২৩ লাখ ৭৪ হাজার টন৷ তাহলে পেঁয়াজের এত ঘাটতি কেন? মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, প্রায় ৮ লাখ টন পেঁয়াজ পচে যায় বা নানা কারণে নষ্ট হয়ে যায়, সেজন্যই প্রতিবছর ৮-১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমাদানি করতে হয়৷
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পেঁয়াজ নিয়ে যে সংকট হবে তার আভাস কয়েক মাস আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছিলো৷ তখন থেকেই বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করলে এই সংকট হতো না৷ আর একটি দেশের ওপর নির্ভর করাও সঠিক নীতি নয় বলে মনে করেন তারা৷
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের শেষ দিকেও বাংলাদেশে পেঁয়াজের সংকট দেখা দিয়েছিল৷ ভারত তখন পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য ৪৩০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করে৷ তার প্রভাবে বাংলাদেশে ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ৭৫ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা হয়েছিল৷ এবার সংকট অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে৷