ভারতে সেনার কমান্ডে মেয়েরাও
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০কেন্দ্রীয় সরকার চায়নি৷ তাদের রায় ছিল, মূলত পুরুষদের বাহিনীতে কমান্ড দেওয়ার ক্ষমতা মেয়েদের দেওয়া উচিত হবে না৷ বিশেষ করে বাহিনীর সদস্যরা যেখানে মূলত গ্রাম থেকে আসেন এবং বিশেষ সামাজিক ধ্যান-ধারণা নিয়ে আসেন, সেখানে মহিলা অফিসারের হাতে কমান্ড থাকা ঠিক হবে না। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছিল, মেয়েদের শারীরিক সক্ষমতাও পুরুষদের থেকে কম৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের এই যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, এরকম বস্তাপচা ধ্যান-ধারণার কোনও অর্থ হয় না৷ সংবিধান ছেলে ও মেয়েদের সমানাধিকার দিয়েছে৷ কোনওরকম লিঙ্গ বৈষম্য করা যাবে না৷ বিচারপতি চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি অজয় রাস্তোগিরের রায়, ''সেনাতে মহিলারাও পুরুষদের মতো কমান্ড করতে পারবেন৷ তাঁদের প্রতি কোনওরকম বিভেদ করা যাবে না৷ তিন মাসের মধ্যে এই রায় কার্যকর করতে হবে৷''
সহজ কথায়, কোনও মহিলা অফিসার কর্নেল বা তার ওপরের পদে যেতে পারবেন। তিনি ৮৫০ জন জওয়ানদের ব্যাটেলিয়ানকে কমান্ড করতে পারবেন বা নেতৃত্ব দিতে পারবেন৷ সেই ব্যাটেলিয়ানে তাঁর নির্দেশে চলবে৷ মহিলাদের এই অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা ছিল, তাদের স্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয় না৷ তাদের জন্য শর্ট সার্ভিস কমিশন আছে। তারা খুব বেশি হলে ১৪ বছর কাজ করতে পারতেন, সেটাও নির্দিষ্ট দশটি বিভাগে৷ সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, মহিলাদের জন্য স্থায়ী কমিশন গঠন করতে হবে। আর যাঁরা ১৪ বছর শর্ট সার্ভিস কমিশনে কাজ করেছেন, তাঁরা যদি সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে থাকেন, তা হলে তাঁদেরও পদোন্নতি হতে পারে৷
তবে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পরেও মহিলারা যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে বাহিনীকে কমান্ড করতে পারবেন কি? অবসরপ্রাপ্ত লেফটানান্ট কমান্ডার উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''জওযানদের মধ্যে এখনও মেযেরা আসেননি৷ তারা শুধু অফিসার পর্যায়ে আছেন৷ সেনার ফাইটিং ব্রাঞ্চ আছে পাঁচটি৷ পদাতিক, গোলন্দাজ, সাঁজোয়া, ইঞ্জিনিয়ারিং ও সিগন্যাল৷ পদাতিক, গোলন্দাজ, সাঁজোয়া তো বটেই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যাঁরা ওয়ারজোনে কাজ করেন, সেখানে মেয়েদের নেওয়া হয় না৷ আমি জানি ইসরায়েলি বাহিনীতে মেয়েরা এই সব জায়গায় আছেন। আমাদের দেশেও হবে৷ তবে সময় লাগবে৷ দেশকে সেভাবে এগোতে হবে৷ হয়তো তিরিশ বছর লাগবে৷ সব কিছুতেই আমরা কিছুটা পিছিয়ে। এই অবস্থায় মেয়েরা যুদ্ধক্ষেত্রে কমান্ড করছে, এটা মিসম্যাচ হয়ে যেতে পারে। আর্মি সার্ভিস কোর, অর্ডনান্স কোর, মিলিটারি পুলিশ, এডুকেশন কোর, যাকে বলে সেনার সার্ভিস সেক্টর সেখানে মেয়েরা কমান্ড করতেই পারেন৷''
বিচারপতিরা রায়ে বলেছেন, মহিলাদের শারীরিক ক্ষমতা, তাদের ভূমিকা ও কৃতিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করাটা শুধু মহিলাদের অপমান করা নয়, ভারতীয় সেনারও অপমান৷ লে, উধমনগরে ক্যাপ্টেন তানিয়া শেরগিল, ক্যাপ্টেন মধুমিতার মতো মহিলা অফিসারদের কৃতিত্বের কথা তুলে ধরে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, মহিলারাও পুরুষদের মতো সমানভাবে সক্রিয় ও দক্ষ সেনা হতে পারেন৷
বিশিষ্ট চিকিৎসক সুব্রত কুণ্ডুও সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে একমত। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''এখন উন্নত প্রযুক্তির যুগ। যুদ্ধক্ষেত্রে যে কামান ব্যবহার করা হয়, যে ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, তা মেয়েরা অনায়াসে চালাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শারীরিক দিক দিয়ে তাঁরা পুরুষদের থেকে পিছিয়ে থাকবেন না৷ লড়াইয়ের ময়দানে মেয়েদের সফল হওয়ার পথে কোনও শারীরিক বাধা আসবে না৷ তা ছাড়া সেনাতে তো শুধু ফিট পুরুষ ও মেয়েদেরই নেওয়া হয়৷''
সেনাতে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ তাতে পরিবর্তন কতটা হয়, কত দিনের মধ্যে হয় সেটাই দেখার৷
জিএইচ/এসজি (এনডিটিভি, নিউজ ১৮)