ক্যান্সারের ওষুধ
২৩ মার্চ ২০১২চিকিৎসাবিজ্ঞানে দ্রুত উন্নতি ঘটে চললেও ওষুধের লাগামছাড়া দামের কারণে তার সুফল সব সময়ে সবার কাছে পৌঁছতে পারে না৷ ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের পর রশ্ কোম্পানি সেদেশে সস্তায় ক্যান্সারের ওষুধ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের রশ্ কোম্পানির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, যে ভারতের বাজারে ক্যান্সারের দুটি ওষুধ অনেক কম দামে বিক্রি করা হবে৷ ওষুধ দু'টির নাম হারসেপটিন, যা ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং ম্যাবথেরা, যা রক্ত ও লিম্ফ ক্যান্সারের চিকিৎসায় প্রয়োজন হয়৷ খোলা বাজারে এগুলির দাম ৩ থেকে সাড়ে চার হাজার মার্কিন ডলার৷ তবে ভারতের বাজারে রশ্ কত দামে এই ওষুধ বিক্রি করতে চায়, তা এখনো জানা যায় নি৷
ভারতের এমকিওর ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আগামী বছর থেকে বাজারে এই ওষুধ বিক্রি করবে রশ্৷ তবে বিদেশে তৈরি এই ওষুধ ভারতে শুধু মোড়কে পোরা হবে৷ ভারতের বাজারের জন্য ওষুধগুলির আলাদা নামও রাখা হবে, যাতে করে সেই ওষুধ সহজে অন্য দেশে বিক্রি করা সম্ভব না হয়৷ সুইজারল্যান্ড'এর বাসেল শহর থেকে রয়টার্সকে টেলিফোনে এই তথ্য দিয়েছেন কোম্পানির এক মুখপাত্র৷ তিনি বলেন, ভারতের রোগীদের একটা বড় অংশের কাছে রশ্ তার ওষুধ পৌঁছে দিতে চায়৷ যারা নিজেরাই নিজেদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করে তারা তো বটেই, সেইসঙ্গে সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে বাকিদের কাছেও ক্যান্সার চিকিৎসার সুযোগ করে দিতে চায় এই কোম্পানি৷
ভারত সরকার কয়েকদিন আগেই ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যয় কমাতে হস্তক্ষেপ করেছিল৷ জার্মানির বায়ার কোম্পানি ‘নেক্সাভার' ওষুধের উপর একচেটিয়া অধিকার দাবি করা সত্ত্বেও সরকার ন্যাটকো ফার্মা নামের এক স্থানীয় কোম্পানিকে ওষুধটি সস্তায় তৈরি করার ছাড়পত্র দিয়েছে৷ ভারতের যুক্তি, এমনটা না করলে ক্যান্সার চিকিৎসা সাধারণ মানুষের আওতায় আনা যাবে না৷ এই ঘটনার সঙ্গে শুক্রবারের সিদ্ধান্তের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, রশ্ কোম্পানি সেবিষয়ে কিছু বলতে নারাজ৷ উল্লেখ্য, এর আগে রশ্ কোনো বিশেষ বাজারের জন্য এমন ছাড় দেওয়ার বিপক্ষে ছিল৷
ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভারতের এই মনোভাব বিচ্ছিন্ন নয়৷ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী জীবনদায়ী চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো দেশ সস্তার ওষুধ বিক্রির আলাদা লাইসেন্স দিতে পারে৷ এইচআইভি এইডস চিকিৎসার ক্ষেত্রে আফ্রিকা মহাদেশে সস্তায় ওষুধ সরবরাহ করে চলেছে বিভিন্ন বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি৷ তবে বিশ্ব বাণিজ্য ক্রমশঃ উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে এক দেশের বাজারে সস্তায় ওষুধ বিক্রি করলে অন্য দেশে তা সহজে পৌঁছে যেতে পারে বলে ওষুধ কোম্পানিগুলির আশঙ্কা রয়েছে৷ যেমন রশ্ কোম্পানিরই অ্যাভাস্টিন নামের এক ওষুধ মধ্যপ্রাচ্য থেকে চোরাপথে ইউরোপ হয়ে অ্যামেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছিল৷ অথচ স্থানীয় বাজারে মূল ওষুধের দাম অনেক বেশি৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়