1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযোদ্ধাদের কবর

৩১ জুলাই ২০১২

বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পর এক মহান অভিযানে নেমেছেন অবসরপ্রাপ্ত লেঃ কর্নেল সাজ্জাত আলি জাহির বীর প্রতীক৷ মুক্তিযুদ্ধে যেসব শহীদকে ভারতের মাটিতে কবরস্থ করা হয়, সেইসব কবরের সন্ধান করে চলেছেন তিনি নিভৃতে এককভাবে৷

https://p.dw.com/p/15guZ
ছবি: AP

‘‘তরুণ-কিশোর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সামনে থেকে যুদ্ধ করেছি৷ সে সময় অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হয়েছেন৷ তাঁদের মনে আকুতি ছিল, তাঁদের মরদেহ যেন বাংলাদেশের মাটিতে সমাধিস্থ করা হয়৷ যুদ্ধক্ষেত্রের আশেপাশে পাকিস্তানি সেনারা যখনই কোনো মুক্তিযোদ্ধার মৃতদেহ পেত, সেগুলো বিকৃত করতো৷ কবরগুলোর অসম্মান করতো৷ তাই মুক্তিযোদ্ধাদের নো-ম্যানস ল্যান্ডে বা ভারতের কবরস্থানে কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের শিবিরের আশপাশে কবরস্থ করতাম৷'' ডয়চে ভেলেকে এভাবেই কথাগুলি বললেন মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত লেঃ কর্নেল সাজ্জাদ আলি জাহির বীর প্রতীক৷

চার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের পাঁচটি রাজ্য৷ পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয় ও মিজোরাম৷ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেসব শহীদকে ভারতের মাটিতে কবরস্থ করা হয়, সেইসব কবর খুঁজে বের করা, শহীদদের দেহাবশেষ উদ্ধার করা এবং স্বদেশের মাটিতে যথোচিত মর্যাদার সঙ্গে তাঁদের স্মৃতিরক্ষা করা - এই দুরূহ কাজটা কীভাবে শুরু করলেন? সাজ্জাদ আলি জাহিরের কথায়, ‘‘ভারতের বিভিন্ন জায়গায় গেছি৷ সীমান্ত এলাকার গ্রামবাসীদের সঙ্গে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের যাঁরা সাহায্য করেছিল তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি৷ তাঁরা অনেক তথ্য দিয়েছে৷ ভারতের বিভিন্ন সরকারি অফিস, বিএসএফ, জেলা শাসক আর থানা থেকেও অনেক তথ্য পাই৷ ঐসব তথ্যের ভিত্তিতে কবরস্থানগুলিতে গিয়ে মোতয়ালি, ইমাম সাহেব, গ্রেভ ডিগারদের কাছ থেকে জানতে পারি কোথায় কতগুলি কবর আছে৷ মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় মিত্র সেনাদের কাছ থেকেও অনেক তথ্য পাই৷ এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া৷''

Bangladesch Monument Jatiyo Smriti Soudho
দেশকে স্বাধীন করা অনেক মুক্তিযোদ্ধার কবর ভারতে রয়েছেছবি: National Monument of Savar

লেঃ কর্নেল সাজ্জাদের অবিচল নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম দেখে তাতে সামিল হয়েছে শেখ হাসিনা সরকার এবং  সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতও৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর ঢাকা সফরে দু'দেশের কূটনৈতিক প্রোটোকলে মুক্তিযোদ্ধাদের মরদেহ সম্মানের সঙ্গে স্থানান্তরিত করার ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত ছিল৷

গতমাসে কর্নেল সাজ্জাদ ভারতে আসেন চার সদস্যের এক প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে৷ দেখা করেন ভারতের স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে৷ কর্নেল সাজ্জাদের দেয়া রিপোর্টের সত্যতা রাজ্য সরকার বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা সরকারের রিপোর্টের সঙ্গে যাচাই করার পর, ভারত তা মেনে নেয়৷ কর্নেল সাজ্জাদের কথায়, ‘‘সবাই যখন বুঝলেন এটা একটা জাতীয় কর্তব্য, মুক্তিযুদ্ধ ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব ও বন্ধনের একটা টার্নিং পয়েন্ট, তখন কাজ হলো৷ আজ অনেকের মধ্যে সেই উদ্দীপনা দেখছি৷ অনেক সহযোগিতা পাচ্ছি৷''

প্রসঙ্গত, প্রতিনিধিদলটি পরে যায় পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম ও মেঘালয়ে৷ কর্নেল সাজ্জাদ জানান, ‘‘চারটি রাজ্য থেকে সিনিয়ার নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হচ্ছে৷ তাঁরা দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করবেন৷ কবরগুলো চিহ্নিত করার এবং দেহাবশেষ স্থানান্তরিত করার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করবেন৷''

লেঃ কর্নেল নিজে যেহেতু যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন, তাই কিছু কবর তিনি নিজেই চিহ্নিত করে তার তালিকা ভারতকে দিয়েছেন৷ উল্লেখ্য, তিনি স্বয়ং বীর শ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের কবর চিহ্নিত করে তাঁর দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে গেছেন৷

বলা বাহুল্য, এর সঙ্গে দু'দেশের বাঙ্গালি আবেগই শুধু নয়, জড়িয়ে আছে দেশপ্রেম এবং মানবিক অনুভূতি, যা হবে মুক্তিযুদ্ধে ভারত-বাংলাদেশের সহযোগিতার এক ঐতিহাসিক দলিল৷

প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য