ভারতে পেঁচা বলি: অশুভ বাণিজ্য
৯ অক্টোবর ২০১৬ভারতের রাজধানী দিল্লির বিখ্যাত লাল কেল্লার বিপরীত দিকে একটি পাখি বাজার আছে৷ স্থানীয়ভাবে এটি ‘কবুতর বাজার' নামে পরিচিত৷ কিন্তু কবুতরের বদলে সেখানে অন্য পাখিই বেশি৷ এদের রাখা হয়েছে ছোট ছোট খাঁচায়, ভীষণ নোংরা পরিবেশে৷ চারপাশে খাবার ছড়ানো৷ রঙিন পাখিদের টকটকে লাল বা উজ্জ্বল হলুদ রঙ এই নোংরা পরিবেশে হালকা হতে চলেছে৷ এ সবের মধ্যে হঠাৎ আপনার চোখে পড়বে কতগুলো পেঁচা৷
ভারতে ৩২ ধরনের পেঁচা আছে৷ ১৯৭২ সালের ওয়াইল্ডলআইফ প্রটেকশন আইনের আওতায় এদের রক্ষার কথা বলা হয়েছে৷ অথচ টাকা দিলে ভারতের যে কোনো প্রান্তে আপনি পেয়ে যাবেন এই পাখিদের৷ ভারতে পেঁচা পূজ্য হিসেবে বিবেচিত এবং ধারণা করা হয় এরা অতিপ্রাকৃত শক্তির অধিকারী৷
ধর্মীয় কুসংস্কারের কারণে নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে বা আর্থিক উন্নতির আশায় অনেকে পেঁচা বলি দেয়৷ অনেকে পাখিটিকে হত্যা করার পর তার দেহের বিভিন্ন অংশ তাবিজে করে গলায় পরে৷ পুরো বছর ধরে পেঁচা বেচাকেনা চলে৷ তবে পেঁচা সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় দীপাবলীর সময়৷ আগামী ৩০ অক্টোবর ভারতে পালিত হবে দীপাবলী৷ সেদিন হিন্দুদের ঘরে ঘরে লক্ষ্মী পূজা হবে৷ পেঁচা লক্ষ্মীর বাহন৷ আর লক্ষ্মী ধন-সম্পদের দেবী৷ এ কারণে দীপাবলী বা দেওয়ালির সময় সবচেয়ে বেশি পেঁচা বলি দেয়া হয়৷
ছোট পেঁচার দাম আট হাজার রূপি আর বড় পেঁচাগুলো বিক্রি হয় ২০ হাজার রূপিতে৷ এসব পেঁচাকে বলি দেয় ওঝারা৷ পাখি ব্যবসায়ীরাই এসব ওঝা সরবরাহ করে থাকে৷ এমন এক ওঝার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন ডয়চে ভেলের প্রতিবেদকরা৷ ওঝাকে এই বলির বিশেষত্ব জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, যিনি বলি দেন তার সমৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী৷ আর মৃত পেঁচার নখ এবং চোখ তাবিজ বানিয়ে গলায় পরা হয়৷ তিনি আরও জানালেন, ভারতের অনেক রাজনীতিবিদ নির্বাচনের আগে পেঁচার নখ বা চোখের তাবিজ পরেন৷
ন্যাশনাল ওয়াইল্ড ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো ডব্লিউসিসিবি দীপাবলির সময় পুলিশ নিয়োগ করে, যাতে তারা পাখির মার্কেটগুলোতে হানা দিতে পারে৷ কিন্তু পুলিশ স্বীকার করেছে, এসময় পেঁচাসহ দোকানিদের ধরা খুব মুশকিল৷ তারা পাখিগুলো গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখে৷ আর যথারীতি কালো জাদু আর ধর্মীয় কুসংস্কারের কারণে রমরমা হয় এই ব্যবসা৷
আলেত্তা আন্দ্রে, অভিমন্যু কুমার/এপিবি
আশীষ চক্রবর্ত্তী