ভারতে পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে বিতর্ক
সন্তান জন্মের পর তাকে সুস্থভাবে বড় করে তোলায় মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি৷ কিন্তু সন্তান লালন-পালনে বাবার ভূমিকাও কোনো অংশে কম নয়৷ তাই সরকারি চাকরিতে মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হলে পিতৃত্বকালীন ছুটি নয় কেন? উঠেছে প্রশ্ন৷
শিপ্রা দাস (চিত্র সাংবাদিক)
ষাটোর্ধ শিপ্রা নিজে বিয়ে করেননি৷ তবে সম্প্রতি ভারত সরকারের অধীনে কর্মরতা মহিলাদের মাতৃত্বকালীন ছুটি-সংক্রান্ত আইন পাস হওয়ায় বেজায় খুশি তিনি৷ তাঁর দাবি, একই ভাবে বিবাহিত পুরুষদের জন্যেও ছুটির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন৷ কারণ সন্তান জন্মের পর বাবা-মা উভয়ের দেখভাল অত্যন্ত জরুরি৷
অরিন্দম বাগ (কলেজ শিক্ষক)
ইনি কিছুদিন আগেই বাবা হয়েছেন৷ স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে সঙ্গে নিয়ে ছবি তুললেন তিনি৷ বললেন, ‘‘শিশুকন্যার জন্ম নার্সিংহোমে৷ সেখান থেকে বাড়ি ফেরা এবং পরবর্তীকালে শিশু ও মায়ের দেখভাল করতে হিমশিম খেতে হয়েছে আমাদের৷ অফিসে কাজের চাপ সামলানোর চেয়ে ঢের বেশি জরুরি সদ্যোজাতকে দেখভাল করা৷ তাই পুরুষদেরও কিছুদিন ছুটি চাই৷’’
দীপাঞ্জনা বসু মজুমদার (অধ্যাপিকা)
একটি সরকারি কলেজের সাংবাদিকতা বিভাগে প্রধানের দায়িত্ব সামলান দীপাঞ্জনা৷ বাড়িতে ছয় বছরের মেয়ে রয়েছে৷ তাঁর বক্তব্য, সন্তানকে বড়ো করতে মা ও বাবার সমান দায়িত্ব৷ তাই মা যদি তাঁর চাকরিতে ছ’মাস ছুটি পেতে পারেন, তবে একই ভাবে বাবাকেও ছুটি দেওয়া উচিত৷
সোনম চৌহান (সরকারি কর্মী)
বেশ চটপটে এক সরকারি কর্মী সোনম৷ তাঁর কথায়, ‘‘সরকার মাতৃত্বকালীন ছুটির নতুন আইন করার আগে একটা বিষয় ভেবে দেখেনি৷ সন্তান জন্মের পর মা একাই সদ্যোজাতের দেখাশোনা করবেন আর বাবা দপ্তরে ছুটবেন? এমনটা হলে তো ঘুরিয়ে মায়ের ওপরেই চাপ সৃষ্টি হবে৷ তাই বাবা-ও যাতে ছুটি পান সেটা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই৷’’
শৌভিক ভট্টাচার্য (ব্যবসায়ী)
এক মেয়ের বাবা শৌভিক বিষয়টাকে অন্য ভাবে দেখেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘পিতৃত্ব শুধুমাত্র একটা অনুভূতি নয়৷ ‘বাবা হওয়া’ পুরুষকে দায়িত্ববান করে তোলে৷ সন্তান পালনের জন্য পুরুষদের পিতৃত্বকালীন ছুটি পাওয়ার অধিকার তাই খুবই স্বাভাবিক একটা দাবি৷ এই দাবি সমর্থনযোগ্য৷’’
মাকন সিং (বেসরকারি সংস্থার কর্মী)
সংসদে সদ্য মাতৃত্বকালীন ছুটির বিলটি পাস হওয়ার খবর পেয়েছেন মাকন সিং৷ নারী-পুরুষ ভেদাভেদে উনি বিশ্বাসী নন৷ ওঁর মতে, সন্তানের জন্মে যেমন নারী-পুরুষ উভয়ের ভূমিকা সমান, ঠিক তেমনই তাকে সুস্থভাবে বড় করে তোলার ক্ষেত্রেও দু’জনের থাকে সমান কর্তব্য৷ তাহলে কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ কেন?
যোগীতা শর্মা (চাকুরিজীবী)
একটি বেসরকারি সংস্থায় সহায়ক পদে চাকরি করেন যোগীতা৷ এখনও মা হননি তিনি৷ উনি মনে করেন, শুধু সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নয়, সমস্ত চাকরির ক্ষেত্রেই সন্তান জন্মের পর মা ও বাবাকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সবেতন ছুটি দেওয়া উচিত৷
মান সিং (মুদির দোকানি)
ভারত সরকারের নতুন আইন সম্পর্কে কিছুই জানেন না এই দোকানদার৷ তবে তিনি মনে করেন, ঘরে সন্তান এলে সরকার ছুটি দিক অথবা না দিক, বাবাকে ক’দিন বাড়িতে থাকতেই হয়৷ ফলে মায়ের মতো বাবার জন্যও ছুটি চালু হোক৷
প্রদীপ কুমার (সবজি বিক্রেতা)
লোকের মুখে এমন আইনের কথা শুনেছেন বটে, তবে বিশদ কিছুই জানেন না৷ চার সন্তানের বাবা এই সবজি ব্যবসায়ীর মতে, সন্তান জন্মের পর মায়েদের যদি ছ’মাস ছুটি দেওয়া হয়, তাহলে বাবাদের সন্তান লালন-পালনের জন্য অন্তত একমাস ছুটি দেওয়া উচিত৷