ভারতে নাগরিক ‘অ্যাক্টিভিজম' নিয়ে শূন্য বাজেটের ছবি
২১ নভেম্বর ২০১১চলচ্চিত্র মানেই আজকাল আকাশছোঁয়া বাজেট, কোটি কোটি টাকার লেনদেন৷ আধুনিক মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলেও টিকিটের দাম অনেকেরই সামর্থ্যের বাইরে৷ কিন্তু একেবারে শূন্য বাজেটের ছবি তৈরি করা কি সম্ভব? এমনই অসাধ্য সাধন করেছেন ভারতের তরুণ পরিচালক গৌরব ছাবড়া৷ স্বল্পদৈর্ঘ্যের এই ছবির নাম ‘ইনকিলাব' বা বিপ্লব৷ বিষয়বস্তুও অত্যন্ত অভিনব৷ আজ ভারতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে আন্দোলন ও তার প্রতি যে জনসমর্থন দেখা যাচ্ছে, সেই ‘অ্যাক্টিভিজম' বা সক্রিয় প্রতিরোধের উৎস খুঁজতে গিয়ে গৌরব পৌঁছে গেছেন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে ভারতীয় উপমহাদেশের সংগ্রামের যুগে৷ ১৯২৯ সালের ৮ই এপ্রিল দিল্লির ‘সেন্ট্রাল অ্যাসেমব্লি'র ভিতর এক বোমা বিস্ফোরণ ঘটে৷ প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতির উদ্দেশ্যে এই বিস্ফোরণ ঘটান নি ভগত সিং৷ সেরকম কিছু ঘটেও নি৷ লক্ষ্য ছিল আলোড়ন তোলা, বধিরকেও শব্দ শুনতে বাধ্য করা৷ গৌরব মনে করেন, মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলন বা ভগত সিং'এর তথাকথিত হিংসাত্মক প্রতিরোধের মূলমন্ত্র আমরা আসলে আজও বুঝি নি৷ তাঁর মতে, দুইয়েরই উদ্দেশ্য ছিল, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনা৷ অহিংসা মানে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা নয়, আবার বিপ্লব মানেই দীর্ঘমেয়াদী অস্থিরতা নয়৷
‘ইনকিলাব' ছবির মাধ্যমে পরিচালক বলতে চেয়েছেন, যে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হলেই সমস্যা দেখা দেয়৷ অন্যদিকে ‘অ্যাক্টিভিজম' বা নাগরিকদের সক্রিয় প্রতিরোধেরও কেন্দ্রীয় কাঠামো থাকা উচিত নয়৷ তাদের বুঝতে হবে, যে তারা যে ব্যবস্থার সংস্কার চাইছে, তারা নিজেরাই সেই ব্যবস্থার অংশ – সেই কাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ সরকার নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করলে সমাজের জন্যও তার পরিণাম মোটেই ভালো হয় না৷ দেশের এলিট বা উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণী যে দৃষ্টিতে এই ‘অ্যাক্টিভিজম'কে গণ্য করে, সেই ধারণও ছবির মাধ্যমে ভাঙতে চেয়েছেন গৌরব৷
‘ইনকিলাব' মুক্তি পেয়েছে ২০১১ সালের ৮ই এপ্রিল৷ সংসদে ভগত সিং'এর হামলার দিনটিকেই গৌরব বেছে নিয়েছিলেন৷ অর্থাৎ আন্না হাজারের নেতৃত্বে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের আগেই ছবিটি তৈরি হয়ে যায়৷ এবার গোয়ার রাজধানী পানাজিতে আসন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হবে ‘ইনকিলাব'৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক