ভারতে ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ জন্য ডিটেনশন ক্যাম্প
আসামের নাগরিক তালিকা এনআরসি থেকে বাদ পড়াদের জন্য ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরির কাজ চলছে৷ ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যটির এক বনাঞ্চলে গড়ে উঠছে প্রথম ডিটেনশন ক্যাম্প৷ দেখুন ছবিঘরে...
যা চায় বিজেপি সরকার
নাগরিকপঞ্জি নিয়ে বিতর্ক, সমালোচনার শেষ নেই৷ তারপরও এনআরসি থেকে বাদ পড়া ১৯ লাখ মানুষের জন্য ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি শুরু করেছে বিজেপি সরকার৷সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, সবাইকে থাকতে হবে না, যারা নাগরিকত্ব প্রমাণ করার কাগজপত্র দেখাতে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হবেন শুধু তাদেরই রাখা হবে ডিটেনশন ক্যাম্পে৷
এনআরসির সমালোচনা
সমালোচকদের আশঙ্কা, হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি এনআরসির মাধ্যমে আসলে মুসলমানদের একাংশের নাগরিকত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়৷ ভারতের বিরোধীদলগুলো সরকারের এ উদ্যোগের সমালোচনায় মুখর৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বেশ কিছু মানবাধিকার সংগঠনও এনআরসি-র সমালোচনা করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷
বন সাফ করে ডিটেনশন ক্যাম্প
চা-শিল্পের জন্য বিখ্যাত আসাম রাজ্যের গোয়ালপাড়ার পাশের বিশাল বনাঞ্চলে গাছ কেটে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে৷ এনআরসি থেকে বাদ পড়া অনেক দরিদ্র মানুষ শ্রমিকের কাজ করছেন সেখানে৷ হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষই ডিটেনশন ক্যাম্প গড়ায় শ্রম দিচ্ছেন৷
কতজন থাকবেন ভারতের প্রথম ডিটেনশন ক্যাম্পে?
ডিটেনশন ক্যাম্পের শ্রমিক এবং ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে রয়টার্স জানিয়েছে, গোলাপাড়ার এই ক্যাম্পে থাকতে পারবেন তিন হাজার অবৈধ অভিবাসী৷ ইতিমধ্যে আসামের জেলে রাখা হয়েছে ৯০০ জনকে৷ প্রথমে তাদের নিয়ে আসা হবে এই ক্যাম্পে৷
ক্যাম্পে যা যা থাকবে
ক্যাম্পের চারপাশে থাকবে ১০ ফুট উঁচু দেয়াল৷ ভেতরে গড়ে তোলা হবে একটি স্কুল, একটি হাসপাতাল, একটি বিনোদনকেন্দ্র এবং অবৈধ অভিবাসী আর নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য আলাদা আবাসন৷ নারী এবং পুরুষ অবৈধ অভিবাসীদের জন্য গড়ে তোলা হবে আলাদা ঘর৷
কাজ করতে আগ্রহী অনেকে
গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্পে ঠিকাদারির কাজ পেয়েছেন শফিকুল হক৷ তিনি জানালেন, ক্যাম্প তৈরির কাজে লোকের অভাব হচ্ছে না, কারণ, ‘‘আশপাশের গ্রামগুলো থেকে প্রতিদিন অনেকে এসে কাজ চাইছেন৷’’
অনেকেই অশিক্ষা আর অসচেতনতার শিকার
দুই আদিবাসী নারী শেফালি হাজং এবং মালতি হাজংও সেখানে কাজ পেয়েছেন৷ এনআরসি থেকে দুজনই বাদ পড়েছেন৷ বাদ পড়ার কারণ তাঁরাও জানেন৷ দু’জনেরই জন্মনিবন্ধন হয়নি৷ নিজের বয়স বলতে পারেন না তাঁরা৷ নিজের বাড়ির দলিলও নেই তাঁদের কাছে৷ ফলে নিজেদের হাতে গড়া ডিটেনশন ক্যাম্পে তাঁদেরও ঠাঁই হতে পারে৷ তা জেনেই কাজ করছেন তাঁরা৷ কেন? শেফালি হাজংয়ের উত্তর, ‘‘পেট তো ভরতে হবে আমাকে!’’