ভারতীয় মুসলিম নারীদের নিলামে তুলল অ্যাপ
৫ জানুয়ারি ২০২২অ্যাপ খুললেই দেখা যাচ্ছে পরিচিত মুসলিম নারীদের মুখ। সেখানে সাংবাদিক থেকে শুরু করে জনপ্রিয় অভিনেত্রী সকলেই আছেন। ছবির নীচে লেখা রয়েছে নিলাম দর। এই নারীরা না কি বিক্রি হওয়ার জন্য তৈরি। চরম অবমাননাকর এই অ্যাপ ঘুরছিল নেট দুনিয়ায়। সম্প্রতি পুলিশ তা বন্ধ করেছে। অ্যাপটি এখন আর নেট মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে না। তবে স্ক্রিন শট এখনো আছে ইন্টারনেটে।
অ্যাপে অসংখ্য প্রগতিশীল মুসলিম নারীদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। নিজ নিজ ক্ষেত্রে তারা সকলেই প্রতিষ্ঠিত। বলিউডের পরিচিত অভিনেত্রী যেমন সেখানে আছেন, তেমনই আছে বিশিষ্ট নারী সাংবাদিকের ছবি। একাধিক অ্যাক্টিভিস্টের ছবিও সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১৬ সালে দিল্লির একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ছাত্রের মায়ের ছবিও সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে। দিল্লির এক সাংবাদিক এ বিষয়ে পুলিশের কাছে এফআইআর করার পর অ্যাপটি ট্র্যাক করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। অ্যাপের নাম বুল্লি বাই।
পুলিশ কী বলছে
ডয়চে ভেলেকে দিল্লি পুলিশের এক অফিসার জানিয়েছেন, ''অ্যাপটির সঙ্গে কারা যুক্ত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কয়েকজনকে ট্র্যাকও করা গেছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে এখনই কারো নাম প্রকাশ করা হবে না।''
মুম্বই পুলিশ অবশ্য এখনো পর্যন্ত ২১ বছরের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তার পরিচিত এক নারীকেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তবে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি।
পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও, অ্যাক্টিভিস্টদের একটি অংশ বিতর্ক তৈরি করেছে। সাংবাদিক ইসমাত আরা দিল্লি পুলিশের কাছে প্রথম এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। ইসমাতের নামও ওই অ্যাপে আছে। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, ''এর আগেও এমন একটি অ্যাপ তৈরি হয়েছিল। পুলিশ সেই অ্যাপটি বন্ধ করলেও সংশ্লিষ্ট কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ফলে পুলিশের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখা যাচ্ছে না।'' ইসমাত যখন এ কথা বলেছেন, মুম্বই পুলিশ তখনো কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।
বিতর্কের নানা দিক
এর আগে ৮০ জন মুসলিম নারীকে নিয়ে সুল্লি ডিলস নামে একটি অ্যাপ তৈরি হয়েছিল। সেখানেও একইভাবে মুসলিম নারীদের নিলামের কথা বলা হয়েছিল। সুল্লি একটি অপমানজনক শব্দ।
মুম্বইয়েও বুল্লি বাই নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। মুম্বইয়ের একাধিক নারীর নাম সেখানে আছে। সাংবাদিক এবং অ্যাক্টিভিস্ট মিলন দত্ত ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''দীর্ঘদিন ধরে অতি দক্ষিণপন্থি কিছু সংগঠন ভারতের মুসলিম প্রগতিশীল নারীদের বিরুদ্ধে নানা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। সুল্লি শব্দটিও তারা বিভিন্ন সময় ব্যবহার করেছে। ফলে এই ঘটনার পিছনে কারা আছে, তা স্পষ্ট। পুলিশ চাইলে দ্রুত এর সমাধান করতে পারে। এই ঘটনার পিছনে যে মাথারা আছে, তাদের গ্রেপ্তার করা দরকার।''
বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এ বিষয়ে তার স্পষ্ট অভিমত জানিয়েছেন ডয়চে ভেলেকে। তার বক্তব্য, ''যারাই এ কাজ করুক, তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এর চেয়ে লজ্জাজনক কিছু আর হতে পারে না। নারীদের পণ্য মনে করার মনোভাব থেকেই এমন ঘটনা ঘটে। তীব্র নিন্দা করছি।''
মনসমাজবিদ এবং অ্যাক্টিভিস্ট মোহিত রণদীপ এ বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, অতি দক্ষিণপন্থি মনোভাব থেকেই যে এ ঘটনা ঘটেছে, তা স্পষ্ট। এখানে নারীর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ তাদের ধর্মীয় পরিচয়। কারা এ কাজ করছে, তা ট্র্যাক করা কঠিন কিছু নয়। কিন্তু ট্র্যাক করে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত প্রশাসনকে নিতে হবে। ব্যবস্থা না নিলে এমন অ্যাপ ব্যাঙের ছাতার মতো গজাতেই থাকবে।
এসজি/জিএইচ (আল জাজিরা, বিবিসি)