1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক তীব্র হুমকির মুখে

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১২ এপ্রিল ২০১৭

চরবৃত্তির অভিযোগে ভারতের প্রাক্তন নৌ-সেনা অফিসার কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় পাকিস্তানকে তার পরিণাম ভুগতে হবে – এই মর্মে হুঁশিয়ারি দিল্লির৷ পাকিস্তানের সামরিক আদালতের অভিযোগ ‘সাজানো', এমনটাই মনে করছে ভারত৷

https://p.dw.com/p/2b8O4
কুলভূষণ যাদব
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Naveed

ভারতীয় নৌ-সেনার প্রাক্তন অফিসার কুলভূষণ যাদবকে পাকিস্তানের সামরিক আদালত মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ভারতে৷ সংসদের ভেতরে এবং বাইরে দলমত নির্বিশেষে এই নিয়ে তুমুল আলোড়ন৷ এ বছর জানুয়ারিতে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতের সার্জিক্যাল স্টাইকের পর, দু'দেশের মধ্যে যে উত্তেজনা শুরু হয়, এখন তা তুঙ্গে৷ সরকারকে চেপে ধরে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির দাবি – রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক যেভাবেই হোক, কুলভূষণকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে৷ তাই ইসলামাবাদের ওপর পাল্টা চাপ তৈরিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তান যদি কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে তাহলে তার পরিণাম ভুগতে হবে পাকিস্তানকে৷ ভারত মনে করে, কুলভূষের বিরুদ্ধে অভিযোগের যথেষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেনি পাকিস্তান৷ পুরো অভিযোগই সাজানো এবং পূর্ব-পরিকল্পিত৷ এমনকি গোটা বিচার প্রক্রিয়ায় বিশ্বকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে, বলে মন্তব্য করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তাঁর কথায়, ‘‘এটা বিচার নয়, বিচারের প্রহসন৷'' কারণ বিচার প্রক্রিয়ার প্রথম শর্ত, অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া৷ এক্ষেত্রে সেটা দেওয়া হয়নি৷ পাকিস্তানে ভারতীয় দূতাবাসের বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও, তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি৷ কুলভূষণ ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে গিয়েছিলেন ইরানে৷ সেখান থেকে অপহরণ করে পাকিস্তানের আইএসআই তাঁকে নিয়ে যায় বালুচিস্তানে, এমনটাই দাবি ভারতের৷ দিল্লির পাকিস্তানি হাই-কমিশনারকে তলব করে পররাষ্ট্র সচিব জয় শংকর এ বিষয়ে ভারতের ক্ষোভের কথা জানিয়ে কড়া বার্তা দেন৷

ওদিকে দিল্লির দাবি অগ্রাহ্য করে পাকিস্তনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা হাসিফ বলেন, গত বছর বালুচিস্তানে এবং করাচিতে গুপ্তচরবৃ্ত্তি এবং নাশকতামূলক কার্যকলাপ চালানোর অভিযোগে কুলভূষণ যাদবকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তাঁর পাসপোর্টে ছিল অন্য নামে৷ তাতে ছিল, তাঁর নাম হোসেন মুবারক পযাটেল৷ তিনি মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা৷ তিন মাস ধরে তাঁর বিচারপর্ব চলে৷ পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা দপ্তর থেকে জাননো হয়, কূলভূষণ যাদব তাঁর অপরাধ কবুল করেছে৷ তবুও তাঁকে উচ্চতর সামরিক আদালতে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণদণ্ড মকুবের আবেদন করার জন্য ৬০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে৷

প্রশ্ন হলো, পাকিস্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে ভারতের হাতে এই মুহূর্তে কী আছে? এ মাসেই ১২ জন পাকিস্তানি কয়েদিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল৷ কিন্ত এ অবস্থায় আপাতত সেটা হচ্ছে না৷ ফাঁসির আদেশ প্রত্যাহারের জন্য দ্বিপাক্ষিক স্তরে প্রবল চাপ তৈরি করা এবং তাতে কাজ না হলে আন্তর্জাতিক আদালতে এই রায়ের উপরে স্থগিতাদেশ চাওয়া৷ বলা হবে, পাকিস্তানে বছরের পর বছর ধরে মসুদ আজাহার এবং সঈদ হাফিজের মতো সন্ত্রাসবাদীরাঅবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ অথচ পাকিস্তান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের মদত দিয়ে এসেছে৷ এটা গোটা দুনিয়া জানে৷ তাই কুলভূষণের ফাঁসির আদেশকে ক্যাঙ্গারু আদালতের রায় বলেই মানবে বিশ্ব, মনে করে ভারত৷

পাশাপাশি ভারতের কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, কুলভূষণের ভাগ্য সম্ভবত সরবজিৎ সিং-এর মতোই হবে৷ ২০১৩ সালে পাকিস্তানি জেলে তাঁর মৃত্যু হয়৷ সন্দেহ, জেলে প্রচণ্ড অত্যাচারেই মৃত্যু হয়েছিল সরবজিতের৷ কুলভূষণ যাদবকেও হয়ত ফাঁসি না দিয়ে এইভাবেই মেরে ফেলা হতে পারে, এমন আশঙ্কাও রয়েছে৷ তাই ভারত-পাকিস্তানের সুশীল সমাজ মনে করে, চরবৃত্তি বিশ্বে অলিখিত এক রীতি রেওয়াজ৷ ঠান্ডা লড়াইয়ের সময়েও সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ধরা পড়া গুপ্তচরদের একে-অপরকে ফিরিয়ে দিয়েছিল৷ কাশ্মীরে ধরা পড়া জঙ্গিদের যদি ভারত ফাঁসি দিতে শুরু করে, তাহলে বিষয়টা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ এখানে স্মরণ করা যেতে পারে, ২০০০ সালে লালকেল্লার উপর সন্ত্রাসী হামলা মামলায় দোষী সাব্যস্ত পাকিস্তানি নাগরিককে কিন্তু ফাঁসি দেয়নি ভারত৷