1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রামকিঙ্করের চিত্রকর্ম

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩

ভাস্কর রামকিঙ্কর বেজের বিরল কিছু স্কেচ, জল রং এবং দুষ্প্রাপ্য তেল রঙের কাজ দেখার সুযোগ একই প্রদর্শনীতে৷ কলকাতার গ্যালারি আকার-প্রকারে ১৩ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে ২ নভেম্বর পর্যন্ত৷

https://p.dw.com/p/19hVn
ছবি: Courtesy: Gallery Akar Prokar

ভাস্কর্য শিল্পের এক বিখ্যাত নাম রামকিঙ্কর বেজ৷ তাঁর সৃষ্ট সাঁওতাল পরিবার বা কলের বাঁশি-র মতো ভাস্কর্যগুলির সঙ্গে কমবেশি আমরা সবাই পরিচিত৷ আজীবন রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনেই সৃষ্টিতে মগ্ন রামকিঙ্কর নিজের কাজের স্থায়িত্ব সম্পর্কে আদৌ সচেতন ছিলেন না৷ অনেক সময় আর্থিক অস্বচ্ছলতাও হয়তো তার একটা কারণ, কিন্তু ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ওই ভাস্কর্যগুলি সময়ের আঁচড়ের থেকে আগলে রাখাটাই শান্তিনিকেতনের কলাভবনের কাছে চিরকালের একটা গুরুদায়িত্ব৷

এর বাইরেও থেকে গিয়েছেন এক রামকিঙ্কর, যদিও সেটাও একই রকম ছড়িয়ে ছিটিয়ে, তবে সেটা আত্মীয়, বন্ধু, ছাত্র-ছাত্রী এবং গুণমুগ্ধদের মধ্যে৷ কেউ হয়তো প্রিয় কিঙ্করদার একটা কাজ চেয়ে নিয়েছিলেন, কারও খাতায় রয়ে গিয়েছে মাস্টারমশাই রামকিঙ্করের হাতে আঁকা একখানি খসড়া অথবা কাউকে রামকিঙ্কর নিজে থেকে ভালবেসে উপহার দিয়েছিলেন নিজের আঁকা ছবি৷ মূলত শান্তিনিকেতনে এবং কলকাতায় ব্যক্তিগত সংগ্রহে রামকিঙ্করের আঁকা এরকম বেশ কিছু দুর্লভ ছবি নিয়ে প্রদর্শনী সাজিয়েছেন কিউরেটর দেবদত্ত গুপ্ত

দিল্লিতে ন্যাশনাল গ্যালারি অফ মডার্ন আর্ট-এর উদ্যোগে রামকিঙ্করকে নিয়ে সর্বশেষ যে বিরাট প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল, তার সঙ্গে কলকাতার প্রদর্শনীর এইটাই তফাৎ, বললেন দেবদত্ত যে, ন্যাশনাল গ্যালারির নিজের কাছে রয়েছে রামকিঙ্করের কাজের এক বিপুল সংগ্রহ৷ তা ছাড়া ওদের পরিকাঠামো, ব্যবস্থাপনা, সবই অনেক বেশি ভাল৷ সেই জায়গায় কলকাতার প্রদর্শনীতে থাকছে অনেক বেশি অন্তরঙ্গ রামকিঙ্কর৷

বিভিন্ন জনের সংগ্রহ থেকে ছবিগুলো সংগ্রহ করার সময় নানা টুকরো টুকরো গল্প এসে জমা হয়েছে কিউরেটর দেবদত্তর ঝুলিতে৷ যেমন, নন্দকিশোর মুখোপাধ্যায় ছিলেন বিশ্বভারতীর আলোকচিত্রী, রামকিঙ্করেরও অনেক ছবি তাঁর তোলা৷ রামকিঙ্কর একবার নিজে তাঁর বাড়ি বয়ে এসে বলেছিলেন, ‘‘সবাই আমার ছবি চেয়ে নিয়ে যায়, তুই তো কখনও কিছু নিস না৷ এই নে, তোর জন্যে একটা ছবি এনেছি৷''

মানুষ রামকিঙ্কর এবং সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর মতোই নির্মোহ এক শিল্পীর আদলটাও ধরা দেয় এই সব গল্প থেকে৷ কিছু উজ্জ্বল উদ্ধারও আছে এই প্রদর্শনীতে৷ যেমন রামকিঙ্করের আঁকা একটি তেল রঙের ছবি এর আগে কেবল দুভাবে দেখা গিয়েছে৷ চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের ছবিতে এবং আলোকচিত্রী নিমাই ঘোষের তোলা একটি ফটোগ্রাফে৷ লাঞ্চ নামে ১৯৪১ সালে আঁকা এই ছবিটি প্রথমবার সামনাসামনি দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে এই প্রদর্শনীতে৷

এছাড়াও, কলাভবনের কিউরেটর সুশোভন অধিকারীর উদ্যোগে এবং সক্রিয় সাহায্যে পাওয়া গিয়েছে অমূল্য কিছু নোটবই, যার একটিতে চুনার-এর এক পাথর ব্যবসায়ীর নাম-ঠিকানা লিখে রেখেছেন রামকিঙ্কর এবং কীভাবে, কোন ট্রেনে চুনার যাওয়া যাবে, তারও নোট নেওয়া আছে৷ এটা ঐতিহাসিক কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ দিল্লিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সদর ফটকের দুপাশে যে যক্ষ এবং যক্ষীর অতিকায় ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিলেন রামকিঙ্কর, তার পাথর চুনার থেকেই এসেছিল৷

ওই নোটবুকে যক্ষ ও যক্ষীর একটা খসড়াও পাওয়া গিয়েছে৷ পাওয়া গিয়েছে বিখ্যাত কলের বাঁশি-র লে আউট৷ আরও একটি অসাধারণ টেরাকোটার ভাস্কর্য পাওয়া গিয়েছে মাছমুখে বিড়ালের, যা অবধারিতভাবে কালীঘাটের পটের কথা মনে করায়৷ প্রতি বছর শান্তিনিকেতন কলাভবনের আগ্রহে যে নন্দনমেলা হয়, সেই মেলার দ্বিতীয় বছরে এই টেরাকোটার কাজটি রামকিঙ্কর করেছিলেন৷ একটি লোকের পিঠ চুলকানোর মজার এক টেরাকোটার কাজও দেখা যাবে৷

দেবদত্ত গুপ্ত এর আগে দুই বিখ্যাত শিল্পী নন্দলাল বসু এবং বিনোদবিহারীর দুটি প্রদর্শনী কিউরেট করেছিলেন৷ বলছিলেন, আচার্য নন্দলাল বসুর ক্ষেত্রে তাঁর দুই কন্যা গৌরী ভঞ্জ এবং যমুনা সেনের থেকেই অধিকাংশ ছবি পাওয়া গিয়েছিল৷ রামকিঙ্করের প্রদর্শনীর জন্য একটু বেশি খুঁজতে হয়েছে, বেশি ঘুরতে হয়েছে৷ কিন্তু তাঁর কাজ অনেকটাই সহজ করে দিয়েছেন বিশ্বভারতী কলাভবনের কিউরেটর সুশোভন অধিকারী৷ রামকিঙ্করকে চিনতেন, কলকাতা এবং শান্তিনিকেতনের এমন অনেকেই অকুণ্ঠ সাহায্য করেছেন, যা না পেলে হয়তো এই প্রদর্শনী হতো না, বললেন দেবদত্ত৷

ভাস্কর রামকিঙ্কর বেজের আঁকা ছবির এই দুর্লভ সংগ্রহ দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে ২রা নভেম্বর পর্যন্ত৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য