ভারত সফরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
১৫ নভেম্বর ২০১৩ক্রিকেটপ্রেমী ব্রিটেনের রক্ষণশীল দলের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বেশ ভালোই জানেন যে খারাপ উইকেটে কীভাবে খেলতে হয়৷ কতটা সতর্ক পদক্ষেপ ফেলতে হয়৷ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বার ভারত সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর সঙ্গে বৈঠকে সব থেকে বড় যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় ক্যামেরনকে, তা হলো ভারতের প্রেক্ষিতে রক্ষণশীল সরকারের অভিবাসন নীতি যেখানে ভিসা পেতে গেলে তিন হাজার পাউন্ডের বন্ড দিতে হবে৷ এই নিয়ে ভারত সরকার এবং ভারতের মানুষের মনে ব্রিটেনের প্রতি যে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে, তা দূর করে তিনি বোঝাতে চেষ্টা করেন যে ভারতীয় অভিবাসীদের জন্য ব্রিটেনের দরজা বন্ধ নয়, তবে নিয়ন্ত্রিত৷ তাঁর সরকার অভিবাসন-বিরোধি নয়৷ তাই ভারতীয় অভিবাসীদের প্রতি উদারতা দেখাতে তিন হাজার পাউন্ডের বন্ড স্কিম রদ করা হয়েছে৷
ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ব্রিটেনের বাজার খোলা৷ বাণিজ্য প্রতিনিধি, ছাত্র, পর্যটকদের জন্য ব্রিটেনের দরজা খোলা৷ ভারতে ১২টি কেন্দ্রে চার লাখ তিরিশ হাজার ভিসা আবেদনপত্র বিবেচনা করা হয়ে থাকে৷ তার মধ্যে ৯৯ শতাংশ ভিসা মঞ্জুর করা হয়ে থাকে সাধারণত৷ সম্প্রতি মুম্বই, দিল্লি ও চেন্নাইতে একই দিনে ভিসা সার্ভিসের সুবিধা আছে, সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেন ক্যামেরন৷
কী ধরণের অভিবাসীদের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আছে? ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ব্রিটেনে শুধু তাঁদেরকেই স্বাগত জানানো হবে যাঁদের মেধাবি এবং প্রতিভশালী বোলে মনে করা হবে৷ ব্রিটেনে তাঁরা কাজও করতে পারবেন৷ শুধু মেধাবি অভিবাসীদের অবাধ প্রবেশাধিকার দেবার পেছনে ব্রিটেনের নিজের স্বার্থ আছে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এখন আর্থিক দিক থেকে চলছে ভাটা৷ বিদেশি অভিবাসী শিক্ষার্থীদের দিতে হয় মোটা অঙ্কের ফি, স্থানীয় ছাত্রছাত্রিদের চেয়ে অনেক বেশি৷
পাশ করে বের হবার পর তাঁদের কাজের সুযোগ দেয়া হয়, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রযুক্তি-ভিত্তিক শিল্পে এবং আর্থিক পরিষেবায়৷ তাই কার্পেন্টার, প্লামবার এবং নির্মাণ শ্রমিকদের মত নীচু তলার শ্রমিকদের স্থান হবে না৷ অথচ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অবাধ বিদেশি বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যে গতি আনতে প্রতিবন্ধকতাগুলি দূর করতে প্রধানমন্ত্রী ড. সিং-কে আহ্বান জানিয়েছেন৷ প্রসঙ্গক্রমে, ভারতে ভোডাফোনের কর সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে ড. সিং-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি৷ পর্যবেক্ষকদের মতে, অবাধ বাণিজ্যে শ্রমিকদের গমনাগমনের ক্ষেত্রেও কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকা উচিত নয়৷ ভারতের বিরাট শ্রমশক্তিকে উপেক্ষা করতে পারে না দিল্লি৷
বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ না করার প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে ক্যামেরন বলেন, তাঁর এই সফর খুবই সংক্ষিপ্ত৷ তাঁকে কলকাতায় যেতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করতে৷ তবে গুজরাটের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকার যোগাযোগ রেখেছে৷ মোদীর সঙ্গে দেখা করা বা না করা ভারতের সাধারণ নির্বাচনের পরই সম্ভব হতে পারে৷ ভারতের সঙ্গে বন্দি হস্তান্তর চুক্তি অনুসারে ব্রিটেনের জেলে বন্দিদের কী ভারতে পাঠানো হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে ক্যামেরন জানান, ব্রিটেনের নীতি বিদেশি বন্দি অপরাধীদের তাঁদের নিজেদের দেশে ফেরৎ পাঠানো৷