মোবাইল ব্যাংকিং
২৪ জুন ২০১৫বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং কতটা বিস্তার লাভ করেছে, তা নিয়ে বিশেষ কিছু লিখবো না৷ কত লোকের উপকার হচ্ছে, ফাঁকতালে কিছু লোক আবার নিজের ধান্দায় নেমে পড়ছে কিনা – এ সব নিয়ে নতুন কী বলবো? টাকার লেনদেন যেখানে, সেখানে ‘ইধারকা মাল উধার' করে কিছু মানুষ লাভবান হতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক৷ আর এক্ষেত্রে খুব সহজ একটা সত্যি কথা হলো, মোবাইল ব্যাংকিংকে ঘিরে অর্থ পাচার বা অন্য যে সমস্যাগুলো বড় হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে সেগুলো রোধ করার যথাযথ কর্তৃপক্ষ আছে, তাঁরা তাঁদের কাজটা ঠিকভাবে করলে অসৎ সুযোগসন্ধানীদের তৎপরতা কমবে৷
ব্যাংকিং নিয়ে দুটি প্রতিবেদন আমাকে চমকে দিয়েছে৷ এ মাসেই বাংলাদেশের এক দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর রঘুরাম রাজন জানিয়েছেন , বাংলাদেশকে কোনো পরামর্শ দিতে চান না, বরং বাংলাদেশ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অল্প সময়ে যে সাফল্য পেয়েছে তা থেকে তিনি শিখতে চান৷ খুব ভালো লেগেছে এ কথা জেনে৷ বাংলাদেশে খুব ভালো কিছু হচ্ছে এবং সেই ভালোটা অন্য কোনো দেশ গ্রহণ করতে চাচ্ছে – ভাবতেই তো ভালো লাগে!
অন্য প্রতিবেদনটিও ব্যাংকিং সংক্রান্ত৷ সেটা পড়ে জানলাম, থাইল্যান্ডে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ঋণ দেয়া হচ্ছে৷ প্রায় সুদহীন ঋণ৷ তবে শর্ত প্রযোজ্য৷ কী শর্ত? সেখানেই অভিনবত্ব৷ ঋণ তাঁদেরই দেয়া হচ্ছে যাঁরা বুদ্ধের বাণী মনে রাখেন, যাঁরা বৌদ্ধ ধর্মের নীতি-আদর্শ থেকে কখনোই বিচ্যুত হন না৷
শর্ত পূরণের ব্যাপারটি পুরোপুরি দেখা সম্ভব কিনা, তা দেখেই ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে কিনা জানি না৷ তবে ‘অধর্ম' থেকে দূরে রেখে যে ভিক্ষুদের ধর্মে রাখার চেষ্টা হচ্ছে এই ব্যাপারটিই চমৎকার লাগল৷
আজকাল ভিক্ষুদের কথা বললেই মিয়ানমারের ভিক্ষুদের কথা মনে পড়ে৷ তাঁদেরও অহিংসাই পরম ধর্ম হওয়ার কথা৷ অথচ কয়েক বছর ধরে মিয়ানমারের ভিক্ষুরা গৌতম বুদ্ধের অহিংসার বাণী ভুলে এমন অত্যাচার, নির্যাতন চালাচ্ছেন যে রোহিঙ্গা মুসলমানরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন৷ সরকারও রোহিঙ্গাবিমুখ৷ তো সহিংস ভিক্ষুদের বাঁধা দিয়ে কে বাঁচাবে রোহিঙ্গাদের?
থাইল্যান্ডও বেহেশত নয়৷ মানবপাচারকারীদের কারণে অনেক রোহিঙ্গা, অনেক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে সেখানেও৷ তারপরও মিয়ানমারের কিন্তু থাইল্যান্ড সরকার এবং ভিক্ষুদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে৷ থাইল্যান্ডেও সাম্প্রদায়িকতা আছে৷ মৌলবাদও আছে৷ দক্ষিণ থাইল্যান্ড থেকে অনেক দিন পর পর হলেও সেরকম কিছু খবর সত্যিই আসে৷ তবে সেই অঞ্চলের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কিন্তু অহিংসার বাণী ভুলে গিয়ে মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেনি৷ সেখানে বরং এমন ভিক্ষুও আছেন যাঁরা মানুষকে তো ভালোবাসেনই, বাঘকেও ভালোবাসেন৷ বাঘকে পোষ মানান৷ সেই ভিক্ষুরা মন্দিরে বাস করেন বাঘের সঙ্গে৷ বাঘের সঙ্গেই তাঁদের নাওয়া-খাওয়া-ঘুম-খেলাধুলা সব! বাঘকে ভালোবাসেন বলে অন্য প্রাণীদের প্রতিও তাঁরা এতটুকু নির্দয় নন৷ একটু আগে এই ইউটিউব লিংকেই দেখলাম, ভিক্ষুদের পোষা বাঘ হঠাৎ গরু-মহিষ কাছে পেয়ে তেড়ে যাচ্ছে আর ভিক্ষুরা কী কষ্ট করে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে তাদের বাঁচাচ্ছেন৷
এক দেশের ভিক্ষু মানুষ মারছে, পাশের দেশের ভিক্ষুরা আবার গরু-মহিষ বাঁচাতেও মরিয়া৷ থাইল্যান্ডের ভিক্ষুরা মানুষের তো বটেই, গরু-মহিষের প্রাণের দামও বোঝেন, অথচ মিয়ানমারের ভিক্ষুরা এতই স্বার্থান্ধ যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের দেশান্তরিত করতে গৌতম বুদ্ধের আদর্শকে ভুলুণ্ঠিত করতেও তাঁদের বাধছে না৷
ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বাংলাদেশের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের খুঁটিনাটি শিখতে চেয়েছিলেন৷ মিয়ানমারের সরকার এবং ভিক্ষুরা যদি থাইল্যান্ডের ওই ভিক্ষুদের কাছ থেকে গৌতম বুদ্ধের আদর্শের পাঠটা নতুন করে নিতেন! যদি তাঁরা মানুষের সঙ্গে মানুষের মতো আচরণ করতে আবার শিখতেন নতুন করে! রোহিঙ্গাদের খুব, খু-উ-উ-ব, খু-উ-উ-উ-ব উপকার হতো!