ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধ
১২ মে ২০১৩চীনের নতুন প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন দিল্লি সফরে তারই সূত্র ধরে একটা বৃহত্তর সমঝোতার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে৷
চীনের নতুন প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং তাঁর প্রথম বিদেশ সফরে ভারতকে বেছে নেয়ায় দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে একটা সহযোগিতার আবহ গড়ে উঠবে বলে মনে করছেন উভয় দেশের বিশেষজ্ঞরা৷ তবে ১৫ই এপ্রিল লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘনের ঘটনায় সেই আশাবাদ ধূলিসাৎ হবার জোগাড় হয়েছিল৷ দেখা দিয়েছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমন খুরশিদের বেইজিং সফর এবং চীনা প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর বাতিলের সম্ভাবনা৷ শেষপর্যন্ত চীনের সেনা তার পুরনো অবস্থানে সরে যাওয়ায় আপাতত উত্তেজনা প্রশমিত হয়েছে৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বেইজিং-এ চীনের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে চীনের তরফে তাঁকে দেয়া হয় ১৬-দফা সমাধান প্রস্তাব৷ বলা হয়, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি'র ভারত সফরের আগে দিল্লি যেন ঐসব প্রস্তাব অনুমোদন করে৷ যার অন্যতম হলো, সীমান্ত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি৷ লি দিল্লি আসছেন ২০শে মে৷ ভারতের তরফেও একগুচ্ছ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে৷ লি'র ভারত সফরে প্রত্যাশা পূরণ হবে কিনা তা নির্ভর করবে কতগুলি চুক্তি সই হয় এবং কী কী বিষয়ে, বলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায় সীমান্ত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি বেশ জটিল, তাই এর অনুমোদন সময়সাপেক্ষ৷ তবে দেখা হবে ভবিষ্যতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেজন্য চলতি মেকানিজমকে কীভাবে আরো সক্রিয় করে তোলা যায়৷ স্রেফ দোষারোপ পাল্টা দোষারোপ করে লাভ নেই৷
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীন-ভারত সীমান্ত বিরোধ সহজে মেটবার নয়৷ আস্থার ঘাটতি থেকেই যাবে৷ সেটা পূরণের জন্য আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি৷ যেমন, সীমান্ত বিরোধের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া অবধি উভয় দেশের সেনাবাহিনী অচিহ্নিত সীমারেখা থেকে দূরে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব যেন বজায় রাখে৷ বড় রকম সেনা চলাচলের আগে দুদেশের সেনা কমান্ডার যেন একে অপরকে অবহিত করে৷ এতে ভবিষ্যতে সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকবে না৷
চীন ও ভারতের সম্পর্ক দ্বিমুখী৷ চীন চায় সীমান্ত বিতর্কের সমাধান আর ভারত চায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রসার৷ সীমান্ত বিতর্কে যেন অন্য সব ক্ষেত্রগুলির সহযোগিতা ব্যাহত না করে৷ দেশবিদেশের গণমাধ্যম এবং বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, জাপান, ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ চীন সমুদ্র নিয়ে যখন চীনের সঙ্গে অন্য দেশগুলির বিরোধ তুঙ্গে, ঠিক সেই সময় ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ উস্কে দিয়ে চীন ভুল করেছে৷ এই সব দেশ ভারতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চীনের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদের অভিযোগ তোলার সুযোগ পাবে৷
তবে খুরশিদকে চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এশিয়ার সমৃদ্ধি হবেনা, যদি না চীন ও ভারতের অগ্রগতি হয়৷ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সীমান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি৷