1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারত এখন ডিজিটাল, তবে স্মার্ট নয়

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড়
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ভারতে ডিজিটাল-যুগ চলছে৷ প্রায় সবকিছুই ডিজিটালি পাওয়া যায়৷ তবে শহরগুলি এখনো স্মার্ট সিটি হতে পারেনি৷

https://p.dw.com/p/4Nw1i
কলকাতায় মুদির দোকানে কিউআর কোড স্ক্যান করে মূল্য পরিশোধ করা যায়৷
ভারতে কিউআর কোড স্ক্যান করে দোকানের মূল্য পরিশোধ করা এখন অনেকটাই সাধারণ ব্যাপার৷ছবি: Payel Samanta/DW

সম্প্রতি পুরুলিয়া বেড়াতে গিয়েছিলাম৷ পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী-প্রধান গরিব জেলা৷ ছোট ছোট পাহাড়, বন, জলাশয়, বাঁধ, পলাশ, শিমুল নিয়ে পুরুলিয়া অপরূপা৷ সেখানে প্রত্যন্ত জায়গায় ছোট ছোট দোকান৷ চা এবং সামান্য কিছু খাবার বিক্রি করছে অথবা পান, চিপস, চানাচুর বিক্রেতা৷ তাদের দোকানের সামনে ইউপিআইয়ের কিউআর কোড রাখা৷ জিনিস কিনে মোবাইলে ফোন পে, গুগল পে, পেটিএম, অ্যামাজন পে-র অ্যাপে গিয়ে কোড স্ক্যান করে পয়সা দিয়ে দিলেই হলো৷ সঙ্গে করে টাকা-পয়সা নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই৷

ইউপিআই মানে ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস, যা একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্য়াকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে নিমেষে৷ দিল্লিতে ঠেলায় করে ডাব বিক্রেতাও ইউপিআই রাখে৷ দুধ কিনুন, সবজি, মাছ, চপ তা সে ঠেলাওয়ালাই হোক বা ছোট বা বড় দোকান, সেখানে ইউপিআই পাবেনই৷ একটু বড় দোকান হলে পাবেন ক্রেডিট বা ডেবিড কার্ডের সুবিধা৷ ক্রমশ পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে টাকা দেয়ার পদ্ধতি আউটডেটেড হয়ে যাচ্ছে৷ এখন মোবাইল অ্যাপ খুলে ইউপিআই পেমেন্ট করাটাই দস্তুর৷ এটা ফ্যাশন নয়, ভারতজীবনের অঙ্গ৷

ভারতের উত্তরপ্রদেশে রিকশায় কিউআর কোড৷
ভারতের উত্তরপ্রদেশে কিউআর কোড ব্যবহার করে রিকশাভাড়া দেয়া যায়৷ছবি: Aamir Ansari/DW

ইউপিআই অ্যাপের মাধ্যমে পেমেন্ট করলে ক্যাশব্য়াক পাওয়া যায়৷ পাওয়া যায় নানান সুবিধা৷ ফলে মানুষও তাতে আকৃষ্ট হয়ে ইউপিআই অ্যাপের মাধ্যমেই টাকা দিচ্ছে৷ আমি আগে যে সংবাদ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতাম, সেখানে বেতন থেকেই কয়েক হাজার টাকা ইউপিআই অ্যাপে চলে যেতো৷

এখন প্রায় সবকিছুই ডিজিটালি হচ্ছে৷ ট্রেনের টিকিট, বাসের টিকিট, সিনেমার টিকিট এমনকি মেলা দেখার টিকিটও ডিজিটাল৷ ভারতের অধিকাংশ পুরাতাত্ত্বিক সৌধে ঢোকার টিকিট ডিজিটালি কিনতে পাওয়া যায়৷ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, পরীক্ষা দেয়া, বেতন সবকিছুই এখন ডিজিটাল৷ এমনকি  দিল্লিতে লার্নার্স ড্রাইভিং লাইসেন্সও ডিজিটালি পাওয়া যায়৷ চিকিৎসকের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট থেকে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার সুয়োগও ডিজিটালি হয়ে যায়৷

কলকাতায় মুদির দোকানে গুগল পে দিয়ে মূল্য পরিশোধ করা যায়৷
কলকাতার এক মুদির দোকানে গুগল পে দিয়ে মূল্য পরিশোধ করা যাবে বলে নোটিশ ঝুলছে৷ ছবি: Payel Samanta/DW

ছেলেবেলায় দেখতাম সবকিছুতেই লাইন৷ সকালে দুধ নিতে লাইন, মাংস কেনার লাইন, রেশন তুলতে লাইন, বাসে চড়তে লাইন, সিনেমার টিকিট কাটতে লাইন, কলেজের ফি দেয়ার লাইন, ডাক্তার দেখাতে লাইন, কেরোসিন কেনার লাইন৷ সর্বত্র লাইন৷ এখন ডিজিটাল-যুগে লাইন প্রায় অদৃশ্য৷ সবই হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন অ্যাপের মধ্যমে৷দরকার হলে টাইম স্লট নিয়ে নাও৷ তারপর নির্দিষ্ট সময় চলে যাও৷ আগে ট্রেনের টিকিট কাটতে ছুটতে হত স্টেশনে, প্লেনের টিকিট কাটার ঝক্কি কম ছিল না৷ বেড়াতে যাবেন তো হোটেল বুক করা ছিল রীতিমতো কষ্টকর কাজ৷ বাড়ি থেকে উজিয়ে তাদের অফিসে যাও৷ বুক করো৷ এখন সবই স্মার্ট ফোনের ভিতরে আছে৷ অ্যাপ ডাউনলোড করো৷ বুকিং করো৷ কোথাও যেতে হবে না৷ জীবন অনেক সহজ করে দিয়েছে স্মার্ট ফোন৷ সঙ্গে শুধু ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই হলো৷ আর ভারতে ইন্টারনেট পরিষেবা ও দাম বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় ভালো ও সস্তা৷ আমি পুরুলিয়ার গ্রামে যেমন ইন্টারনেট পেয়েছি, হিমাচলের পাহাড়ে পেয়েছি, চিলায় রাজাজি ন্যাশনাল পার্কের পাশে রিসর্টেও পেয়েছি, রাজস্তানের মরু এলাকাতেও পেয়েছি৷

ফলে দিনের সবজি থেকে শুরু করে প্রয়োজনের যে কোনো জিনিসই ডিজিটালি বুক করে দিন৷ খুব কম সময়ে তা আপনার দরজায় পৌঁছে যাবে৷ কোথাও যাওয়ার দরকার হবে না৷ ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার থেকে ওয়াটার পিউরিফায়ার সারাবার মিস্তিরি এসে যাবে অ্যাপের মাধ্যমে৷ এখন অ্যাপের ফাঁদ পাতা ভুবনে৷ এমনকি বাথরুম, রান্নাধর, পুরো ঘরবাড়ি পরিস্কার করারও অ্যাপ আছে৷ খোলো অ্যাপ, দাও টাকা,, পাও সুবিধা৷ ঘড়ি ধরে তারা এসে পুরো সাফ করে দেবে৷

কলকাতায় ‘ফোন পে’ দিয়ে স্ট্রিটফুডের দোকানের মূল্য পরিশোধ করা যায়৷
কলকাতায় ‘ফোন পে’ দিয়ে স্ট্রিটফুডের দোকানের মূল্য পরিশোধ করা যায়৷ ছবি: Payel Samanta/DW

ভারতে এখন ১৫১ কোটিরও বেশি মোবাইল ফোন আছে৷ তার মধ্যে প্রায় ৬৬ কোটি স্মার্ট ফোন৷ ২০২২ সালে ভারতে প্রতি সেকেন্ডে দুই হাজার ৩৪৮টি ইউপিআই লেনদেন হয়েছে৷ ২০২২ সালে ইউপিআইয়ের মাধ্যমে ১২৫ লাখ কোটি টাকার বিনিময় হয়েছে৷  এই অঙ্কই বলে দিচ্ছে, কীভাবে ভারত ডিজিটাল যুগে পৌঁছে গেছে৷ এখন পরীক্ষা দেয়ার পরেই খাতা স্ক্যান করে খুব কম সময়ে বলে দেয়া হচ্ছে নম্বর কত পেয়েছে বাচ্চারা৷ প্রতিয়োগিতামূলক পরীক্ষা সব কম্পিউটারে হচ্ছে৷

করোনার সময় থেকে ডিজিটাল পেমেন্টের চল বাড়তে থাকে৷ তখন ডিজিটালি সবকিছু করার দিকে মানুষ ঝুঁকে পড়ে৷ এখন এসে তার ফল দেখা যাচ্ছে৷  ভারতের বড় শহরগুলি ডিজিটাল যুগে ভালোরকম ঢুকে পড়েছে৷ গ্রামও ঢুকছে ক্রমশ৷ এখন ব্যস্ত সময়ে সকলেই দৌড়াচ্ছে৷ ফলে ডিজিটাল ছাড়া উপায় কী? আমার এক বন্ধু এমনিতে পুরোপুরি ডিজিটালনির্ভর জীবন যাপন করে৷ কিন্তু সে এখনো বাজারে গিয়ে মাছ, মাংস, সবজি দেখে কেনে৷ সেখানে সে অ্যাপকে ঢুকতে দেয়নি৷ শুধু টাকাটা দেয় অ্যাপ ব্যবহার করে৷ আবার আমার মতো অনেকে আছে, য়ারা ক্রমশ অ্যাপনির্ভর জীবনে প্রবেশ করে গেছে৷ কোনো কিছু করতে হলে আগে দেখে নিই, অনলাইনে হবে কি না৷ তা ভারতে এখন প্রায় সবকিছুই অনলাইন৷ এর ফলে মানুষ কতটা অসামাজিক হচ্ছে, আত্মকেন্দ্রিক হচ্ছে, সে প্রশ্ন অন্য, ঘটনা হলো, সহজ জীবনে ঢোকার প্রলোভনের মধ্য়ে আমরা ঢুকে পড়েছি৷

গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে, নতুন দিল্লি
গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে, নতুন দিল্লিছবি: privat

স্টেশন, ট্রেন, রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে বহু জায়গায় আছে ফ্রি ওয়াইফাইয়ের সুবিধা৷ এই সুবিধার বিস্তার ঘটছে ক্রমশ৷

তবে ডিজিটালে না থেমে ভারতের ১০০টি শহরকে স্মার্ট সিটি করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল সরকার৷ একমাত্র পশ্চিমবঙ্গ বাদে সব রাজ্যই তার শহরগুলিকে স্মার্ট করার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল৷ স্মার্ট সিটি মানে শুধু ডিজিটাল সিটি নয়, এই সব শহরে সব মূল পরিষেবা থাকবে এবং তা বাসিন্দারা সহজে পাবে৷ শহর হবে পরিচ্ছন্ন, পরিবেশ সুন্দর৷ বাসিন্দাদের জীবন হবে ভালো মানের৷ আর তারা সব সমস্যার স্মার্ট বিকল্প খুঁজে পাবেন৷ সরকারি  ও বেসরকারি সব জায়গায় ডিজিটাল পরিষেবা পুরোদস্তুর পাওয়া যাবে৷  ঠিক ছিল ২০২২ সালের মধ্যে এই শহরগুলি স্মার্ট হবে৷ এখন বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে৷ কিন্তু সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী কাজ অনেক বাকি৷ বরাদ্দ অর্থের অনেকটা খরচ হয়নি৷ তাই কবে ভারতে একশটি শহর স্মার্ট হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না৷

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷