‘‘ব্লু কার্ড’’
৯ সেপ্টেম্বর ২০১২গেরহার্ড সেল্স'এর বয়স ১৯ বছর, অ্যালাস্কার এই ছেলেটির বহু বছর ধরে একটি স্বপ্ন আছে৷ তিনি জার্মানিতে থাকবেন এবং কাজ করবেন৷ একেবারে ছোটবেলা থেকেই গেরহার্ড জার্মানিতে আসছে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য৷ এবং এখন সে এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চায়৷ ব্লু কার্ডের ফলে তার এই স্বপ্ন এখন তার হাতের কাছে এসে গেছে:
‘‘আমার এখানে পড়ার এবং কাজ করার ইচ্ছে আছে৷ এমএ পাস করার পর আমি এখানে একটা চাকরি খুঁজতে চাই৷ এখানে বহু মানুষ আছে, অ্যালাস্কার মতো জনশূন্য নয়৷ আমি এখানে নতুন মানুষজনের সঙ্গে আলাপ করতে চাই, নতুন ধ্যানধারণার সঙ্গে পরিচিত হতে চাই৷ আমার জার্মানিতে আসার সেটাই প্রধান কারণ৷''
বন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউরোপ-বহির্ভূত দেশ থেকে আগত বহু ছাত্রছাত্রী গেরহার্ডের মতোই জার্মানিতে থাকতে চায়৷ কিন্তু ভিসা সংক্রান্ত আমলাতন্ত্রের ফলে তারা প্রায়শই হতাশ হয়ে পড়ে৷ ‘‘ব্লু কার্ডের'' ফলে সবকিছু আরো সহজ হওয়ার কথা৷ প্রথম শর্ত: স্নাতক পর্যায়ের একটি জার্মান, অথবা জার্মানিতে স্বীকৃত বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি থাকতে হবে৷ দ্বিতীয়ত, বছরে গড়ে ৪৪,৮০০ ইউরো বেতনের চাকরি থাকা চাই৷ তাহলে আবেদনকারী চার বছর অবধি মেয়াদের ভিসা পেতে পারে৷ এই হল ব্লু কার্ড৷ প্রযুক্তিবিদ বা বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে মাইনে আরো কম হলেও চলবে, কেননা জার্মানিতে এ'ধরণের কর্মী প্রয়োজন৷ ব্লু কার্ড সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের যথেষ্ট কৌতূহল, বলেন উলরিশ গ্রোথুস, যিনি ডিএএডি বা জার্মান শিক্ষায়তনিক বিনিময় সেবার সচিব:
‘‘বিশেষ করে দু'টি দিক থেকে খোঁজখবর করা হয়: যারা এখানে পড়াশুনো শেষ করে এখন এখানে কাজ করার রাস্তা খুঁজছেন৷ তবে আমাদের কাছে আরো গুরুত্বপূর্ণ হল যারা এখানে পড়াশুনা করতে চায়, অর্থাৎ যারা বিদেশে স্কুল কিংবা কলেজ শেষ করে এবার জার্মানিতে আসার কথা ভাবছে৷ তাদের কাছে এটা জানা খুবই জরুরি, তারা পড়াশুনো শেষ করার পর জার্মানিতে থেকে এখানে কাজ করতে পারবে কিনা৷''
পড়াশুনা শেষ করার পর জার্মানিতে থাকার জন্য এক বছরের মধ্যে একটি চাকুরি খুঁজে পেতে হবে৷ তারপর আবেদনকারী ১৮ মাস সময় পাবে যেখানে ইচ্ছে কাজ করে অর্থোপার্জন করার৷ যাদের ব্লু কার্ড আছে, তারা দু'তিন বছরের মধ্যেই দীর্ঘমেয়াদি ভিসা পেতে পারে৷ এর কারণ, আগে আমলাদের খোঁজখবর নিয়ে দেখতে হতো, আবেদনকারী যে কাজটি করেন, তার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো সুযোগ্য নাগরিক পাওয়া যায় কিনা৷ সেটা যেমন সমস্যাকর, তেমনই সময়সাপেক্ষ ছিল৷ এখন এই ‘অগ্রাধিকার পরীক্ষা' তুলে নেওয়া হয়েছে৷
ব্লু কার্ড বস্তুত যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ডের একটি ইউরোপীয় সংস্করণ৷ যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা থেকে আগত ভ্যানেসা ভ্যানলারেন খুবই খুশি যে, এবার তাঁর প্রিয় দেশ জার্মানিতেও গ্রিন কার্ডের মতো একটি কার্ড চালু হয়েছে৷ স্কুলে পড়ার সময়েই ভ্যানেসা এক বছর জার্মানিতে কাটিয়েছে৷ পরে স্বদেশেই জার্মান শিখেছে৷ তার মুশকিল হল:
‘‘মিনেসোটার স্কুল-কলেজে জার্মান শেখানো হয় না, কাজেই আমার জার্মানে বিএ নিয়ে আমি সেখানে কিছুই করতে পারব না৷ কিন্তু ব্লু কার্ড নিয়ে আমি হয়তো জার্মানিতে এসে এখানে কাজ করতে পারব৷''
উলরিশ গ্রোথুসেরও আশা যে, ব্লু কার্ডের ফলে জার্মানিতে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের সংখ্যা বর্তমানে বছরে দশ থেকে পনেরো হাজার থেকে আরো বাড়বে৷ যদিও জার্মানিতে দক্ষ কর্মীর অভাব দূর করার জন্য ব্লু কার্ড একাই যথেষ্ট নয় বলে তাঁর ধারণা৷ তবে ব্লু কার্ডের ফলে জার্মানি বিদেশিদের পক্ষে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বৈকি:
‘‘ব্লু কার্ড নিয়ে এখানে যারা আসবেন, তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল, জার্মান রাজনীতির তরফ থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, জার্মানরা মুক্তমনা, তারা বিভিন্ন দেশ-জাতি-ধর্মের মানুষদের সঙ্গে একসঙ্গে বাস ও কাজ করতে আগ্রহী৷''
প্রতিবেদন: নিনা ট্রয়ডে / এসি
সম্পাদনা: জাহিদুল হক