ব্লাসফেমির জেরে অবরুদ্ধ ইসলামাবাদ
১৪ নভেম্বর ২০১৭পাকিস্তানের কট্টরপন্থি দল তাহরিক-ই-লাবাইকের নেতা হাফিজ উল্লাহ আলভি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের একমাত্র দাবি, সংসদের সেইসব সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, যারা সংবিধান সংশোধন করে নবি মোহাম্মদ (সা.)-এর চূড়ান্ত অবস্থানকে বিতর্কিত করেছেন৷'' গত অক্টোবরে নির্বাচনি আইনে কিছু সংশোধন আনা হয়, যার মধ্যে সংসদ সদস্যদের শপথবাক্যে মহানবিকে নিয়ে উল্লেখিত বাক্যাংশে পরিবর্তন আসে৷ অবশ্য প্রতিবাদের মুখে সেই পরিবর্তন প্রত্যাহার করা হয়৷
হাফিজ উল্লাহ আলভি বলেন, ‘‘সরকার বলছে, ওটা ভুলবশত হয়েছিল৷ আমরা তা মনে করি না৷ পশ্চিমের দালালরা ইচ্ছা করে এটা করেছে, তাদের অনেকে এমনকি সংসদেও আছে৷'' আইনমন্ত্রী এ বিকৃতির শামিল হয়ে ধর্মের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন– এমন অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেন প্রতিবাদকারীরা৷ আলভি বলেন, ‘‘ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাস্তা ছাড়বো না৷''
এদিকে প্রতিবাদকারীরা দ্রুত তাদের অবরোধ উঠিয়ে নেবেন, এমন আশা প্রকাশ করে সংসদের উচ্চকক্ষের সদস্য রাজা মোহাম্মদ জাফর উল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা পুরো সংসদকে এর জন্য শাস্তি দিতে পারি না৷ প্রতিবাদকারীরা যে সংশোধনের কথা বলছেন, তা মেনে নেয়া হয়েছে৷ বিলটি এখন সচিবালয়ে রয়েছে, খুব শিগগিরই ওটা পাশ হবে৷'
ওদিকে প্রতিবাদকারীরা ইসলামাবাদের সরকারি অফিসগুলোতে হামলা চালাতে পারে, এমন আশংকায় কর্তৃ্পক্ষ অনেক রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে৷ গত সপ্তাহ থেকে চলমান এ অবরোধে রাওয়ালাপিন্ডির সাথে ইসলামাবাদের যোগাযোগ বন্ধ থাকায় ভোগান্তির মুখে পড়েছে সাধারণ মানুষ৷ ইসলামাবাদের বাসিন্দা উসমান আজিজ বলেন, ‘‘প্রতিবাদ করা সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার৷ তবে তা করতে গিয়ে কোনো শহরকে অবরুদ্ধ করে ফেলা উচিত নয়৷''
মানবাধিকার কর্মী ফাতেমা আতিফ বলেন, ইসলামি দলগুলোর দাবির কাছে সরকার সবসময় মাথা নত করে৷তাঁর মতে, ‘‘সামরিক বাহিনীর সাথে দ্বন্দ্বে ক্ষমতাসীন দল এমনিতেই ফুটন্ত জলের উপর আছে৷ এখন প্রতিবাদকারীদের মোকাবেলা করার মতো রাজনৈতিক অবস্থান তাদের নেই৷'' অধ্যাপক তাওসিফ আহমেদের মতে, জিহাদি সংগঠনগুলোকে মূল ধারায় এভাবে পুনর্বাসিত করলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পাকিস্তানের অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে৷ ‘‘এ ধরনের দলগুলোকে মূল ধারায় এভাবে এনে পাকিস্তান নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেন বিশ্বাস করবে যে, আমরা উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়ছি?''
তবে ইসলামি দলগুলো বলছে, সংবিধান তাদের রাজনীতিতে অংশ নেয়া, নির্বাচন করা এবং ইসলামবিরোধী যে কোনো আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকার দিয়েছে৷
১৯৮০ সালে কার্যকর হওয়া‘ব্লাসফেমি' আইন পাকিস্তানের অন্যতম স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ৷পাকিস্তানের অনেক ইসলামপন্থি দল গণতান্ত্রিক সংসদের বদলে দেশে শরিয়া আইনের শাসন চায়৷ অন্যদিকে, অনেক মানবাধিকার কর্মী ও সংগঠন ব্লাসফেমি আইনের সংশোধন চায়৷ তবে ইসলামপন্থি দলগুলো মনে করে, এ আইনের কোনো ধরনের সংশোধন দেশে ইসলামের অস্তিত্বের জন্য হুমকি৷