ব্রেক্সিটের তিন সপ্তাহ আগেও বোঝাপড়া দূর অস্ত
৭ মার্চ ২০১৯ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বিচ্ছেদকে কেন্দ্র করে অনিশ্চয়তা কাটার কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে আগামী ২৯ মার্চ নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ব্রেক্সিট কার্যকর করতে চান৷ সেই লক্ষ্যে আগামী ১২ মার্চ তিনি সংসদে ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদনের জন্য দ্বিতীয়বার চেষ্টা চালাবেন বলে জানিয়েছেন৷
তবে কট্টর ব্রেক্সিপন্থিদের ভোট পেতে হলে প্রধানমন্ত্রীকে আইরিশ সীমান্তে ব্যাকস্টপ ব্যবস্থার প্রশ্নে ইইউ-র কাছ থেকে কিছু আইনসিদ্ধ ছাড় আদায় করতে হবে৷ সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ব্রিটিশ অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ্রি কক্স-কে মঙ্গলবার ব্রাসেলসে পাঠিয়েছিলেন৷ কিন্তু দুই পক্ষের আলোচনায় এখনো কোনো অগ্রগতি ঘটেনি বলে বুধবার জানিয়েছে ইইউ৷
ইইউ-র প্রধান মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়ে তাঁর মুখপাত্রের মাধ্যমে বলেছেন, যে গঠনমূলক পরিবেশ সত্ত্বেও আলোচনা অত্যন্ত কঠিন ছিল৷ এখনো পর্যন্ত বিচ্ছেদ চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো সমাধানসূত্র পাওয়া যায়নি৷ আগামী সপ্তাহান্ত পর্যন্ত আলোচনা চলবে বলে জানিয়েছেন ইইউ-র এক কর্মকর্তা৷ লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর এক মুখপাত্রও একই সুরে বলেন, যে কঠিন আলোচনা সত্ত্বেও সরকার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের দাবি আদায় করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে৷ উল্লেখ্য, ইইউ মূল ব্রেক্সিট চুক্তিতে কোনোরকম রদবদলের সম্ভাবনা শুরু থেকেই উড়িয়ে দিয়েছে৷ তবে বাড়তি এক নথির মাধ্যমে ব্যাকস্টপ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় আশ্বাস দিতে প্রস্তুত ব্রাসেলস৷
এদিকে ব্রিটিশ সংসদের উচ্চ কক্ষ এক সর্বদলীয় প্রস্তাব পাস করে সরকারকে নতুন করে বিপাকে ফেলেছে৷ হাউস অফ লর্ডস ব্রেক্সিটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের শুল্ক ব্যবস্থায় যোগ দিতে সরকারকে আলোচনার উদ্যোগ নিতে বলেছে৷ অথচ টেরেসা মে এমন পদক্ষেপের ঘোর বিরোধী৷ একমাত্র লেবার দল ও ক্ষমতাসীন টোরি দলের কিছু সদস্য এমন প্রস্তাবকে সমর্থন করেন৷ ফলে প্রধানমন্ত্রীর দুশ্চিন্তার তালিকায় নতুন একটি বিষয় যোগ হচ্ছে৷
এমন প্রেক্ষাপটে নানা রকম সম্ভাব্য চিত্র উঠে আসছে৷ দুই পক্ষ যদি সপ্তাহান্তে ব্যাকস্টপ সংক্রান্ত কোনো বোঝাপড়া করতে সক্ষম হয়, সে ক্ষেত্রে টেরেসা মে আগামী সোমবার ব্রাসেলসে গিয়ে তা অনুমোদন করতে পারেন৷ তারপর বুধবার তিনি সংসদে সেই খসড়া পেশ করতে পারেন৷ আগামী ২১ ও ২২ মার্চ ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও বাকি নেতারা ব্রেক্সিটের তারিখ পেছানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন৷ ব্রিটিশ সংসদ ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদন করলে সেটি কার্যকর করতে কয়েক মাস বাড়তি সময় দিতে প্রস্তুত ইইউ৷ তবে কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া মেয়াদ বাড়ানোর প্রশ্নে ইইউ সদস্য দেশগুলি ব্রিটেনের প্রতি মোটেই তেমন সহানুভূতিশীল নয়৷
এমন নাজুক পরিস্থিতিতে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের আশঙ্কা আরও জোরালো হচ্ছে৷ অন্যদিকে কট্টর ব্রেক্সিটপন্থিরাও উভয় সংকটে পড়েছেন৷ তাঁরা আবার ব্রেক্সিট চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দিলে এবং সে ক্ষেত্রে ব্রেক্সিটের তারিখ কয়েক মাস বা ২ বছর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হলে গোটা প্রক্রিয়া অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন৷ বিশেষ করে দ্বিতীয় গণভোট অনুষ্ঠিত হলে ভোটাররা ইইউ-তে থেকে যাবার পক্ষে রায় দিতে পারেন৷ এমন ‘অঘটন' এড়াতে তাঁরা শেষ পর্যন্ত ব্রাসেলসের আশ্বাসের ভিত্তিতে ব্রেক্সিট চুক্তির পক্ষে ভোট দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
সংলাপ ও ইতিবাচক প্রত্যাশা সত্ত্বেও চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে৷ ব্রিটিশ বাণিজ্যমন্ত্রী লায়াম ফক্স বুধবার জানিয়েছেন, যে শুল্ক কাঠামোর এক খসড়া সম্পর্কে সরকারের মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে৷ সংসদ সদস্যরা ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে ভোটাভুটির আগেই সে বিষয়ে আরও জানতে চেয়েছেন৷ তাঁদের আশঙ্কা, সরকার শুল্কের হার একতরফাভাবে কমালে ভোক্তাদের কিছুটা সুবিধা হলেও ব্রিটিশ ব্যবসা-বাণিজ্য জগতের ক্ষতি হবে৷
এসবি/জেডএইচ (এএফপি, রয়টার্স)