ব্রেক্সিট কার্যকরে আরও ছয় মাস
১১ এপ্রিল ২০১৯ব্রাসেলসে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টার বৈঠকের পর ব্রেক্সিট কার্যকরে ব্রিটেনকে আরো ছয় মাস বাড়তি সময় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর নেতারা৷ ১২ এপ্রিলের পরিবর্তে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়েছেন তাঁরা৷ এই সময়ের ভেতরেই ব্রিটেনকে তার রাজনৈতিক অচলাবস্থা ভেঙে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে৷ বেরিয়ে যাওয়ার পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে সম্পর্ক কেমন হবে সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মেকে সংসদে চুক্তি পাস করাতে হবে৷ কোনো সিদ্ধান্ত না হলে আবারও চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের ঝুঁকিতে পড়তে হবে৷ এমনকি ব্রেক্সিট বাতিলের সুযোগও থাকবে ব্রিটেনের সামনে৷
বুধবারের সম্মেলন
প্রথম দফার বর্ধিত সময়সীমা অনুযায়ী এই শুক্রবার ইউরোপ থেকে ব্রিটেনের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ ঘটার কথা ছিল৷ কিন্তু পার্লামেন্টে কোনো চুক্তি পাস করাতে ব্যর্থ হয়ে ইইউর কাছে ব্রেক্সিট কার্যকরের সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করেন টেরেসা মে৷ বুধবার ব্রাসেলসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই জরুরি সম্মেলনে বসেন জোটভুক্ত ২৭ দেশের নেতারা৷ ৫ ঘণ্টা ধরে চলে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক৷ সময় বৃদ্ধির বিষয়ে সবাই একমত হলেও তা কতটা দীর্ঘ হবে তা নিয়েই বিরোধ তৈরি হয়৷ টেরেসা মে ১২ এপ্রিল থেকে সময়সীমা বাড়িয়ে ৩০ জুন করার আবেদন করেছিলেন৷ কিন্তু ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল থেকে শুরু করে বেশিরভাগ নেতাই এটি এক বছরের জন্য বৃদ্ধির পক্ষে ছিলেন৷ তারা চেয়েছিলেন কোনো ঝুঁকি ছাড়াই ব্রিটেন ধীরে সুস্থে তার সিদ্ধান্ত নিক৷ কিন্তু টেরেসা মেকে তা রাজনৈতিকভাবে কিছুটা বিপাকে ফেলে দিত৷ এমনকি ব্রেক্সিট না হওয়ার পক্ষে জনমতও বেড়ে যেতে পারে এ সময়ের মধ্যে৷ তাই তিনি চান দ্রুত বিচ্ছেদ কার্যকর করতে৷ মের মতো স্বল্প সময়ের জন্য মেয়াদ বৃদ্ধির পক্ষে ছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ তাঁর জোরাজুরিতেই শেষ পর্যন্ত নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসেন অন্যরা৷ দুই প্রস্তাবের মাঝামাঝি সময় ৩১ অক্টোবর ব্রেক্সিট কার্যকরের সময়সীমা নির্ধারণে সম্মত হন সবাই৷
ব্রিটেনের জন্য শর্ত
সময় বাড়ানোর মাশুল হিসেবে টেরেসা মেকে অবশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু শর্তও মেনে নিতে হয়েছে৷ তিনি চেয়েছিলেন ইউরোপীয় সংসদের আসন্ন নির্বাচন এড়াতে৷ কিন্তু সেটি অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে৷ বুধবারের সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩১ অক্টোবরের আগে যে-কোনো সময় ব্রেক্সিট কার্যকর করতে পারবে ব্রিটেন৷ সেক্ষেত্রে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচনে তাদের অংশ নিতে হবে৷
তবে মে যদি নির্বাচন এড়াতে চান তাহলে ১ জুনের ভেতর তাঁকে ব্রেক্সিট কার্যকর করতে হবে৷ সেক্ষেত্রে এই সময়ের মধ্যে কোনো চুক্তি পাস করাতে না পারলে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের পথে হাঁটতে হবে ব্রিটেনকে৷
গত বছর মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে ব্রেক্সিট নিয়ে যে চুক্তি করেছেন তাতে আর কোনো পরিবর্তন আনা হবে না বলেও সম্মেলন থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে৷
‘‘সময় নষ্ট করবেন না''
অতিরিক্ত যে সময় দেয়া হয়েছে ব্রিটেন তা যেন নষ্ট না করে সে বিষয়ে জোর দিয়েছেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক৷ এর ভেতরে ব্রিটেনের জন্য সব ধরণের পথই খোলা আছে বলে জানান তিনি৷ বলেন, চাইলে তারা আটকে থাকা চুক্তি অনুমোদন করতে পারে, বিচ্ছেদের কৌশল বদলাতে পারে, এমনকি ব্রেক্সিট বাতিলও করে দিতে পারে৷ টুস্ক এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধিতে আগ্রহী থাকলেও যতটুকু সময় দেয়া হয়েছে সেটিও যথেষ্ট বলে মনে করেন৷ ‘‘অনুগ্রহ করে এই সময় নষ্ট করবেন না,'' ব্রিটেনের উদ্দেশে বলেন টুস্ক৷
জুনে ব্রিটেনের পরিস্থিতির অগ্রগতি নিয়ে ইইউর নিয়মিত সম্মেলনে পর্যালোচনা হওয়ার কথা রয়েছে৷ তবে টুস্ক বলেন, ‘‘জুনে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না এটি পরিষ্কার৷ মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যাপারেও কোনো রকমের আলোচনা হবে না৷ এমনকি আমি বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করতে চাই না, শুধু সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছুটা অবহিত করা হতে পারে৷''
‘বিচ্ছেদ যত দ্রুত সম্ভব'
এদিকে ছয়মাসের জন্য মেয়াদ বাড়লেও ইইউ'র সাথে বিচ্ছেদ যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর করতে চান মে৷ ব্রিটেনের পার্লামেন্টে এখনও কোনো চুক্তি পাস করতে না পারায় অনুশোচনাও প্রকাশ করেন তিনি৷ ‘‘আমি জানি সময় বৃদ্ধির আবেদন করায় অনেকেই হতাশ হয়েছেন,'' বলেন মে৷
ইইউর নির্বাচন এড়াতে আগামী মাসের প্রথম তিন সপ্তাহের মধ্যেই সংসদে ব্রেক্সিট চুক্তি পাস করাতে চান তিনি৷ সেক্ষেত্রে জুনের মধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যেতে চায় ব্রিটেন৷ বৃহস্পতিবার সম্মেলনের ফলাফল দেশটির সংসদকে অবহিত করার কথা মে'র৷
এফএস/জেডএইচ (রয়টার্স, এএফপি)