1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস

১০ নভেম্বর ২০২১

রাষ্ট্রায়াত্ব পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ধরা পড়েছে পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর৷ আর এই প্রশ্নপত্র বিক্রি হয়েছে মোট ৬০ কোটি টাকার৷ এর সাথে জড়িত তিন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ৷

https://p.dw.com/p/42pJE
Symbolbild Beschriftung Zettel Deutsch lernen
ছবি: imago/blickwinkel

গত শনিবার রাষ্ট্রায়ত্ব পাঁচটি ব্যাংকের অফিসার(ক্যাশ) পদে এক হাজার ৫১১টি পদের নিয়োগের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়৷ আর ওই পদের বিপরীতে পরীক্ষায় অংশ নেন এক লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ জন চাকরি প্রার্থী৷ ওই দিন বিকেল চারটায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ১০০টি  প্রশ্ন ও তার সঠিক উত্তর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷ তার তাতেই পরীক্ষার্থীদের সন্দেহ হয় এবং পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানায়৷ কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের "ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি” তখন প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ অস্বীকার করে বলে যে ৫৬ ভাগ আবেদনকারী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে৷ বাকিরা অংশ নেয়নি৷ তারাই এই কথা বলছে৷
কিন্তু ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ(ডিবি) তাদের অনুসন্ধানে প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পায় এবং এর সঙ্গে জড়িত পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে৷ গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ ডয়চে ভেলেকে জানান,"এই ফাঁসের সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তা এবং নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত আহসানউল্লা ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির একজন টেকনিশিয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷”
তারা হলেন, জনতা ব্যাংকের অফিসার শামসুল হক শ্যামল, রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জানে আলম মিলন, পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মুস্তাফিজুর রহমান মিলন, আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকেনোলজির টেকনিশিয়ান মুক্তারুজ্জামান রয়েল এবং রাইসুল ইসলাম স্বপন৷ এই নিয়োগ পরীক্ষা ছিলো সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের৷
গেয়েন্দারা জানান, রাইসুল ইসলাম স্বপন প্রশ্ন ফাঁসের মূল হোতা৷ তাকে ডিবি পরীক্ষার্থী সেজে প্রথম গ্রেপ্তার করে৷ তাদের কাছ থেকে নিয়োগ পরীক্ষার চার সেট প্রশ্ন, চার সেট উত্তর, মোবাইল , ল্যাপটপ, হোয়াটসঅ্যাপে রাখা প্রশ্ন এবং ছয় লাখ টাকা উদ্ধার করেছে৷ আটকরা জানিয়েছে, তারা এক সেট প্রশ্ন বিভিন্ন ধাপে পাঁচ থেকে ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে৷ পরীক্ষা শুরুর ছয় ঘন্টা আগে তারা তাদের পরীক্ষার্থীদের ঢাকার ৩০টি জায়গায় জড়ো করে প্রশ্ন ও তার উত্তর মুখস্থ করিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠায়৷ তারা দুই হাজার পরীক্ষার্থীর কাছে প্রশ্ন ও উত্তর  এভাবে বিক্রি করেছে৷ যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান,"আমাদের হিসেবে এই চক্র ৬০ কোটি টাকা আয় করেছে৷ এর সঙ্গে আরো অনেকে জড়িত থাকতে পারে৷ অর্থ উদ্ধারেরও চেষ্টা চলছে৷”
তিনি আরো জানান, এই চক্রকে আটক এবং মামলা দারের পর তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাথে দেখা করে তথ্য প্রমাণ দিয়ে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের অনুরোধ জানিয়েছেন৷
বাংলাদেশ ব্যাংক ডিবির এই অভিযানের পর এখনো পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়নি৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলম ডয়চে ভেলেকে জানান,"পরীক্ষা নেয়ার দায়িত্ব আমরা দিয়েছিলাম আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকেনোলজিকে৷ তারা টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ পায়৷ আমরা তাদের কাছে এরইমধ্যে ব্যাখ্যা চেয়েছি৷ তাদের ব্যাখ্যা পাওয়ার পর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব৷ এত বড় পরীক্ষা আমাদের পক্ষে নেয়া সম্ভব নয়৷ তাই যাদের সক্ষমতা আছে তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়৷”
রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকে অফিসার নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি "ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি” আছে৷ তারাই মূলত এই পরীক্ষার দায়িত্বে কেন্দ্রীয়ভাবে থাকেন৷ এই কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবির প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর দাবী করেছিলেন প্রশ্ন ফাঁসের কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ তবে বুধবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন,"আমাদের তো কোনো গোয়েন্দা সংস্থা নেই৷ তাই আমরা বলতে পারছিনা ফাঁস হয়েছি কী না৷ এখন গোয়েন্দারা বলছেন ফাঁসের কথা৷ আমরা যারা পরীক্ষা নিয়েছেন তাদের জানিয়েছি৷ আমি তখন বলেছিলাম  আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি৷”
আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকেনোলজির  "সেন্টার ফর এক্সটেশন সার্ভিসকে” এই পরীক্ষ নিতে মোট এক কোটি ৩৩ লাখ টাকা দেয়া হয়৷ এক্সটেশন সার্ভিস-এর পরিচালক ও বিজনেস ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক ড. আমানউল্লাহ জানান, তিনিসহ একটি কমিটি প্রশ্নপত্র তৈরি ও পরীক্ষার দায়িত্বে ছিলেন৷ কিন্তু কীভাবে ফাঁস হলো তা বুঝতে পারছেন না৷ প্রশ্নের সফট কপি তার কম্পিউটারে রক্ষিত ছিলো৷
তিনি বলেন,"গোয়েন্দারা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে৷ আজ (বুধবার ) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও টিঠি পেয়েছি৷ আগামীকাল(বৃহস্পতিবার) ভিসি মহোদয় একটি বৈঠক ডেকেছেন ৷ সেখানেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷ ভিসি এক্সটেশন সার্ভিসের চেয়ারম্যান৷”
আটক টেকনিশিয়ান মুক্তারুজ্জামান রয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কম্পিউটার টেকনিশিয়ান বলে জানান তিানি৷ আরো দুই জন জড়িত বলে গোয়েন্দারা তাকে জানিয়েছেন৷
কার কথা," আমরা আগেও বড় বড় নিয়োগ পরীক্ষা নিয়েছি ৷ এরকম ঘটেনি৷ এই ঘটনায় আমি লজ্জিত৷ কারণ পুরো দায়-দায়িত্ব আমারই ছিলো৷”
তবে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা এই প্রথম নয়৷ বার বার কেন প্রশ্ন ফাঁস হয় এবং বাড়তি সতর্কতা কেন নেয়া হয়না জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন,"আমি আগের ঘটনা জানি না৷ আর আমরা তো সরাসরি পরীক্ষা নিই না৷ বাইরের লোককে পরীক্ষা নিতে দিলে তো ফাঁস হতেই পারে৷ আর আমরা সতর্ক বলেই তো কম ফাঁস হয়৷”

হারুন অর রশীদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য