অর্থের বিনিময়ে নীরবতা!
১১ জুন ২০১৮বিশ্রাম ও আরামের জায়গা হিসেবে হংকং-এর কথা কেউ ভাবে না৷ সেখানে দিনে-রাতে কখনোই শান্ত পরিবেশ পাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ৷ অনেক পর্যটক শহরের ভিড়ভাড়, হই-হট্টগোল দেখে রোমাঞ্চিত হলেও স্থানীয় মানুষের কাছে তা মোটেই তেমন সুখকর নয়৷ আগে থেকে টেবিল বুক না করলে রেস্তোরাঁয় প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়৷ সপ্তাহান্তে এত ভিড় যে ঠিকমতো হাঁটাচলা করাই কঠিন৷ দোকানবাজারে খুব ভিড়৷ কিন্তু একটু বাইরের দিকে গেলেই এমন হই-হট্টগোল এড়ানো যায়৷
হংকং শহরে কিছু শান্ত জায়গা আছে বটে, কিন্তু সে সব এলাকা বড়ই দুর্গম৷ কিন্তু শহরের কিছু মানুষ শহরের কোলাহল এড়াতে বেশ দূরে যেতেও প্রস্তুত৷ কিন্তু হাইকার হিসেবে মিং কিং ওয়ং মনে করেন, গ্রামের দিকেও ভিড় বাড়ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘মিডিয়ার কারণেই প্রায় এমনটা ঘটে৷ পাঠকরা হংকং-এর এমন সুন্দর জায়গার কথা জেনে অবাক হন৷ কিন্তু সে সব জায়গা এত পর্যটক সামলাতে পারে না৷ একবার কোনো জায়গা বিখ্যাত হলেই মানুষের ঢল নামে৷''
গ্রামের দিকে যাবার আরেকটি কারণ হলো, শহরের সবুজ এলাকায়ও আর তিলধারণের জায়গা নেই৷ মিং কিং ওয়ং বলেন, ‘‘বলতে পারেন, হংকং-এর মানুষ তো নিজেদের বাড়িতেই থাকতে পারেন৷ কিছু লোক তা পারলেও অনেককে ক্ষুদ্র ফ্ল্যাটে পরিবারের সবার সঙ্গে থাকতে হয়৷ এত সীমিত জায়গায় আরাম করা কঠিন৷''
হংকং শহরের ব্যস্ত মানুষের জন্য কি নিরুপদ্রব অথচ নাগালের মধ্যে কোনো জায়গা রয়েছে? শহরের ব্যস্ত এক এলাকার মধ্যেই এমন মরূদ্যান রয়েছে৷ ‘স্টিল হাউস' নামের এই ক্যাফেতে নীরবতা কেনা যায়৷ চা-কফি, সঙ্গে কখনো এক টুকরো কেক৷ শান্ত ও নীরব পরিবেশ উপভোগ করতে এর বেশি কিছু অর্ডার করা যায় না৷
‘স্টিল হাউস' ক্যাফের মালিক মিউ চ্যান৷ এই শিল্পীর আশা, এখানে মানুষের মন কিছুটা বিশ্রাম পাবে৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেকেরই একা থাকার মুহূর্ত ও জায়গার প্রয়োজন৷ ২৪ ঘণ্টা ধরে অন্যের সঙ্গে আদানপ্রদান করতে করতে সবাই জীবনের আসল চাহিদা ভুলে যায়৷''
কিছু গ্রাহক নীরবতার মাশুল গুনতে আপত্তি করেন না৷ তাঁদের মতে, এই ক্যাফে এমন এক অভিনব অভিজ্ঞতা দেয়, যা এমনকি প্রকৃতিও দিতে পারে না৷ যেমন ইয়ান হুই বলেন, ‘‘আমি শহরের উপকণ্ঠে থাকি৷ সেখানে এমনিতেই শান্ত পরিবেশ৷ কিন্তু এখানকার মতো আরাম সেখানে পাই না৷ এটা সত্যি এক অভিনব জায়গা৷ এখানে বসে নীচে মানুষের ভিড় দেখলে অবাস্তব মনে হয়৷''
তবে ব্যস্ত জীবনের বিপরীত মানেই শুধু নীরবতা হতে হবে, এমন নয়৷ অলস দুপুরে সংগীতও শরীর-মন জুড়িয়ে দিতে পারে৷
হাং শুয়েন লি/এসবি