বোর্ড আর ক্লাবগুলোকে খেলোয়াড় তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে
২২ নভেম্বর ২০১৯এ অভাব দূর করতে বিসিবি এবং ক্লাবগুলোর আরো উদ্যোগী হওয়া দরকার বলেও মনে করেন তিনি৷
ডয়চে ভেলে: টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদা পাওয়ার পর বাংলাদেশে ক্রিকেটের উন্নয়ন যেভাবে হওয়ার কথা ছিল সেভাবে কি হয়েছে?
মোবাশ্বের হোসেন: আমি আমার একটি ব্যক্তিগত স্মৃতি আগে বলে নিতে চাই৷ ১৯৭৬ সালে আমি লন্ডনে কমনওয়েলথ আর্কিটেক্ট কনফারেন্সে যাই৷ সেখানে গিয়ে আমি যখন বলললাম, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি৷ তখন সবাই বলল, তুমি বার্বাডোস থেকে এসেছ? আমি আবার বললাম, না, আমি ঢাকা থেকে এসেছি৷ তখন তারা বলল, ও তুমি ডাকার থেকে এসেছ! কিন্তু যেদিন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল পাকিস্তানকে হারালো তারপর থেকে কিন্তু বাংলাদেশকে আর আলাদাভাবে চিনিয়ে দিতে হয় না৷ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পরিচিতি এবং বাংলাদেশের পতাকা সমানে উড়িয়ে যাচ্ছে ক্রিকেট৷
অবকাঠামোগত সীমবদ্ধতার মধ্য দিয়েও বাংলাদেশের এই ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু জাতীয় পতাকা উড্ডীন করা এই ক্রিকেট যে গতিতে এগিয়ে যাওয়ার কথা সেখানে কিন্তু আমি ব্যাত্যয় দেখতে পাই৷
কী ধরনের ব্যাত্যয় আপনি দেখতে পান?
পাইপ লাইনে এখন যে ক্রিকেটার থাকার কথা তা নেই৷ ক্রিকেটার তৈরির ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা নেই৷ আমরা যদি মোস্তাফিজের কথা ধরি৷ তার ভাই তাকে ৮-৯ মাইল দূরে নিয়ে যেতো ট্রেনিংয়ের জন্য৷ জেলা বা বিভাগে আমরা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারিনি৷ আগে যে জেলার সাথে জেলার খেলা হতো সেই খেলা আর হয় না৷ ফলে পাইপ লাইনে পর্যাপ্ত ক্রিকেটার নেই৷ আমরা তেমন ক্রিকেটার পাচ্ছি না৷ সাভারে যে ট্রেনিং সেন্টার করা হয়েছে সেখান থেকে প্লেয়ার আসছে৷ কিন্তু সারাদেশের কথা চিন্তা করলে সেভাবে আমরা পাচ্ছি না৷
ক্রিকেটার তৈরির দায়িত্ব কার?
প্রধানত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের৷ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বাংলাদেশের খেলার অঙ্গনে এখন সবচেয়ে ধনী অর্গ্যানাইজেশন৷ আমি যখন ব্রাদার্স ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলাম, তখন ফুটবল থেকে টাকা নিয়ে ক্রিকেটারদের নাস্তার ব্যবস্থা করা হতো৷ শুরুটা এরকম ছিল৷ সেই ক্রিকেটে অনেক টাকা এখন৷ কিন্তু সেভাবে ক্রিকেটের উন্নয়ন হয়নি৷
তাহলে ক্রিকেট বোর্ড এত টাকা দিয়ে করছেটা কী?
এখন ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক হওয়া অনেক সম্মানের ব্যাপার৷ তাই অনেক ধনী লোক সেটা হওয়ার জন্য অর্থ বিনিয়োগ করেন৷ এটার চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তা হলেও অনেক প্রভাবশালী হওয়া যায়৷ ফলে অর্থ বিনিয়োগ করে অনেকে পরিচালক হন৷ অনেক অগ্রহনযোগ্য ব্যক্তি এখন ঢুকে গেছেন বোর্ডে৷ ক্রিকেটের উন্নয়নে তারা তেমন ভূমিকা রাখছেন না৷
ঢাকা খরচ করে কেন তারা ক্রিকেট বোর্ডে ঢুকতে চান? তাতে তাদের লাভ কী?
তারা বিনিয়োগ করে নিজেদের সুপরিচিত করেন৷ সমাজে তাদের অবস্থান তৈরি করেন৷ এটা একটা বড় লাভ৷ আর যখন এই প্রতিষ্ঠান বড় হয়, প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে লাভ করে, তার অংশও তারা পান৷ তাদের দিয়ে কিন্তু খেলার উন্নয়ন হয় না৷
ক্রিকেট বোর্ডে পেশদারিত্ব, গণতন্ত্র এগুলো নেই তাহলে?
অবশ্যই নেই৷ আমি এ কারণে ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে কেসও করেছি৷ তাতে জয়লাভও করেছি৷ এখানে ইলেকশন ছাড়াই, নামমাত্র ইলেকশন করে যাতে স্বপদে থাকা যায় সেজন্য কয়েকটি ক্লাবের দু’টি করে ভোট দেয়ার নিয়ম করা হয়েছে৷ বিশ্বের কোথাও এই নিয়ম নেই৷ কেউ যদি ছয় বা সাতটা ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন, তাকে আর বোর্ডে হারানো যাবে না৷কারণ, তার ১৪টি ভোট রিজার্ভ হয়ে যায়৷ ক্রিকেট বোর্ডকে বাইপাস করে নতুন গঠনতন্ত্র করা হয়েছে, যা আজও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি৷ এখন ক্রিকেট নিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার মূলে আছে এসব৷
তাহলে ক্রিকেটকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য করনীয় কী?
ক্রিকেট বোর্ডের যে আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে সেটাকে কাজে লাগিয়ে উন্নত মানের, বিশ্বমানের ক্রিকেট অ্যাকাডেমি করতে হবে৷ শুধু ক্রিকেট বোর্ড নয়, ক্রীড়া মন্ত্রনালয়কেও এগিয়ে আসতে হবে৷ দেশের সব জেলায় এখন উন্নতমানের স্টেডিয়াম রয়েছে৷ ক্রিকেটের জন্য উন্নত স্টেডিয়াম নয়, উন্নত মাঠ দরকার৷ জেলা ও বিভাগেও অ্যাকাডেমি করতে হবে৷ জেলা ও বিভাগে সারাবছর ধরে ক্রিকেট ম্যাচ চালু রাখতে হবে৷ আর ঢাকার ক্লাবগুলো এখন আর ক্রিকেটার তৈরি করছে না৷ সেদিকেও নজর দিতে হবে৷ এটা করতে পারলে আমরা অনেক বিশ্বমানের ক্রিকেটার পাবো৷ তারা শুধু দেশের মুখই উজ্জ্বল করবে না, তারা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও নিয়ে আসবে৷ বাংলাদেশের ছেলেদের সেই মেধা আছে৷
এখন আরেকট সমস্যা হচ্ছে পাতানো খেলা৷ প্রিমিয়ার লীগ ও ক্লাব ক্রিকেটে পাতানো খেলার প্রাদূর্ভাব৷ ক্রিকেট বোর্ডে যারা আছেন, তারা আবার বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গেও যুক্ত, তারাই এই পাতানো খেলার পিছনে আছেন৷ কোন ক্লাবকে হারাতে হবে, কাকে জিতাতে হবে এটা তারাই ঠিক করেন৷ এটা দূর করা খুবই জরুরি৷ পাতানো খেলার অভিযোগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ক্রিকেটারকে বের করে দেয়া হচ্ছে আর আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে এটা আরো জেঁকে বসেছে৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷