1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাতির লজ্জার বিচার চাই

আশীষ চক্রবর্ত্তী৩০ জুন ২০১৫

ক্রিকেটার নাসির ছবি সরিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ মাশরাফি বর্বর, অসভ্যদের কৃতকর্মের দায় চাপিয়েছেন সবার ঘাড়ে৷ তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে মাশরাফিরই পুরোনো কথা উল্টো করে বলি, ‘‘নাসির, মাশরাফি অ্যান্ড উই অল আর নাও আনহ্যাপি''৷

https://p.dw.com/p/1Fq29
Bangladesch vs England Cricket Weltmeisterschaft
ছবি: Reuters/D. Gray

ক্রিকেটে পাকিস্তানের পর ভারতকেও ‘লজ্জা' দিয়েছে বাংলাদেশ৷ কিন্তু এই প্রাপ্তির আনন্দে কালিমা লেপে দিল কিছু বিকৃত মানসিকতার মানুষ৷ নিজেদের ‘ক্রিকেটভক্ত' হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করলেও, ‘বিকৃত রুচির অসভ্য মানুষ' ছাড়া আর কোনো পরিচয় এদের মানায় না৷ এদের সব সময়, সব জায়গায় দেখি আমরা৷ এরাই যায় টিএসসি-তে নারীদেহ খাবলাতে, সুযোগ পেলে এরা ধর্ষণও করে৷ আমরা কখনো এদের ‘ক্রিকেটভক্ত', কখনো ‘আওয়ামী লীগ বিরোধী', কখনো ‘বিএনপি বিরোধী', কখনো ‘নারীবিদ্বেষী', কখনো বা শুধু ‘মৌলবাদী' ভাবি৷ ভুল করি৷ হতে পারে, এদের কেউ হয়ত ক্রিকেট সত্যিই ভালোবাসে, হয়ত আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে সত্যিই জড়িত, কেউ হয়ত ‘মৌলবাদী', কিন্তু মন-মানসিকতায় এরা সবাই এক, অভিন্ন৷ সব রসুনের যেমন এক গোঁড়া, তেমনি এদেরও এক মানসিকতা৷ এদের মধ্যে অনেকে পোশাকে, চালচলনে আধুনিক হলেও মানসিকতায় বর্বর, অসভ্য৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, জয়, তারেক, চিত্রনায়িকা মৌসুমি, পপি, নায়ক সাকিব খান বা অন্য কারো বানানো অশ্লীল ছবি পোস্ট করে, কিংবা তাঁদের সম্পর্কে অশ্রাব্য মন্তব্য করে তারা বর্বরতা, অসভ্যতার চর্চাই করে সব সময়৷

Deutsche Welle DW Arun Chowdhury
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

অবশ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা নীরব থাকি৷ কেউ বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা বা সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্য ‘মানহানিকর' কিছু করলে রাজনীতির মাঠে যারা তাঁদের বিরোধী, তারা নীরব থাকে, অনেকক্ষেত্রে বাহবাও দেয়৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বা বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে হেয়প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টায় বিএনপি বিরোধীরাও নিষ্ক্রিয়তা, নীরবতার গণ্ডি ছাড়িয়ে যায় অহরহ৷

সাংবাদিক, ক্রিকেটার বা অন্য পেশাজীবীরাও সমালোচনার ঊর্ধে নন৷ তাই শ্রদ্ধা বা স্নেহের আসনে রেখেছি এমন অনেক পরিচিতজনকেই দেখি, ফেসবুকে ‘আপত্তিকর' মন্তব্য লিখছেন৷ তিন মাস আগে এই বিষয়ে একটা ব্লগ লিখেছিলাম৷ শিরোনাম ছিল, ‘মনিকা, হ্যাপিদের একটু শান্তিতে থাকতে দিন'৷ হ্যাপি মানে বাংলাদেশের ক্রিকেটার রুবেল হোসেনের সাবেক প্রেমিকা, অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপি৷ মনিকা মানে তো মনিকা লিউইনস্কি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারির জন্যই বেশি পরিচিত৷

হ্যাপি আর মনিকাও সাইবার-অপরাধের শিকার হয়েছেন৷ কিন্তু তাঁদের হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ কথা বলেনি, বাংলাদেশে শত মানুষ একজোট হয়ে বলেনি যে, ‘‘হ্যাপিকে ইঙ্গিত করে বিদ্রুপাত্মক কিছু লেখা বা বলা অন্যায়'', বলেনি, ‘‘হ্যাপিও কারো না কারো বোন, তাঁকে কটাক্ষ করার মাঝে কোনো বাহাদুরি নেই৷'' ব্লগটির এক জায়গায় লিখেছিলাম, ‘‘ক্রিকেটকে ভালোবেসে, রুবেলের ভক্ত হয়ে আনন্দ করা যেতেই পারে, তাই বলে আনন্দের ফাঁকে কাউকে দুঃখ বা লজ্জা দেয়া কেন? কাউকে কষ্ট দেয়াটাও আনন্দের অংশ? এভাবে আনন্দ উপভোগ করা কি সুস্থতা বা মানবিকতা?''

এবার এক তরুণীর সঙ্গে ক্রিকেটার নাসিরের ছবি দেখে তাঁকে এবং সেই তরুণীকে অপমান করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে কিছু লোক৷ নাসির বেশি আহত হয়েছেন, কারণ, তরুণীটি তাঁর বোন৷ কতগুলো লোক তাঁর ভাইয়ের ভক্ত সেজে ছবির নীচে অশ্রাব্য মন্তব্য করায় বোন নাকি লজ্জায়-অপমানে কেঁদেছেন৷ নাসির আর আবেগ সামলাতে পারেননি, ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন, ফেসবুক থেকে ছবিটি সরিয়ে নিয়ে লিখেছেন, ‘‘আপনাদের মতো ফ্যান আমার দরকার নাই৷ আমাকে যাঁরা পছন্দ করেন না তারা আমার ছবিতে লাইক দিবেন না৷ আমাকে ফলো করবেন না৷''

অধিনায়ক মাশরাফিও দাঁড়িয়েছেন নাসিরের পাশে৷ বিকৃত মানসিকতার মানুষগুলোর প্রতি ঘৃণা জানাতে নিজের ফেসবুক ফ্যানপেজ বাংলাদেশে বন্ধ করে দিয়েছেন৷ ফ্যানপেজ বন্ধ করার পক্ষে মাশরাফির যুক্তি, ‘‘আজ নাসিরের বোনকে উদ্দেশ্য করে এ সব বলছে, কাল আমার-আপনার মেয়েকে নিয়ে করবে৷ যে করেই হোক, এটা বন্ধ করতে হবে!''

একদম ঠিক বলেছেন, একটু দেরিতে হলেও পুরোপুরি ঠিক বুঝেছেন মাশরাফি৷ মনে আছে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচ শেষে এই মাশরাফিই বলেছিলেন, ‘‘রুবেল ইজ ভেরি হ্যাপি নাও৷'' তখন ‘হ্যাপি' শব্দটি কেন অনেকের কাছে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বা প্রণিধানযোগ্য ছিল, তা আমরা জানি৷ এ-ও জানি, হাসিমুখে ‘রুবেল ইজ ভেরি হ্যাপি নাউ' বলে মাশরাফি সেদিন অনেক বাহবা, অনেক হাততালিও পেয়েছিলেন৷ মাশরাফি বিন মুর্তজা, হ্যাপিও কিন্তু কারো না কারো মেয়ে, কারো না কারো বোন!

নাসিরের প্রতিবাদ এবং মাশরাফির ফ্যানপেজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আমাদের অনুভূতিকে নাড়া দিয়েছে৷ ‘ম্যাশ' ঠিকই বলেছেন, এ সব মানুষকে না রুখলে দিনে দিনে এরা আরো বেপরোয়া হবে৷ এদের রুখতেই হবে৷ শুধু ফ্যানপেজ বন্ধ করলে কাজ হবে না৷ প্রতিবাদে দু-এক ছত্রের ঝড় তুললেও নয়৷ এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিতে হবে৷ পুলিশ বলছে, নাসির মামলা করলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ কেন? নাসির মামলা না করলে ব্যবস্থা নেয়া যায় না?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে কতজনই তো এখন জেলে৷ শেখ হাসিনা তো মামলা করেননি৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশও মামলা করেছে৷ নাসিরের বোনের দায়িত্বটাও কি পুলিশ নিতে পারে না?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য