ব্লগ প্রতিযোগিতা
৩ এপ্রিল ২০১২ডয়চে ভেলের অষ্টম আন্তর্জাতিক ব্লগ অনুসন্ধান প্রতিযোগিতায় এবারো আন্তর্জাতিক বিচারকদের মধ্যে আছেন বিভিন্ন দেশের ব্লগার, নিরপেক্ষ সাংবাদিক এবং মিডিয়া বিশেষজ্ঞরা৷ প্রত্যেক জুরি সদস্যই তাঁর নিজের ভাষায় প্রদত্ত প্রস্তাবগুলির (ওয়েবলিংক) তালিকা পান৷ এবং সেই সুদীর্ঘ তালিকাগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনার পর, প্রতিযোগিতার প্রতিটি বিভাগে ১১ জন চূড়ান্ত প্রতিযোগীকে মনোনয়ন করেন৷
কেমন ছিল ব্লগ বাছাই করার সেই অভিজ্ঞতা? বিশেষ করে সাবরিনা সুলতানা'কে আবারো ‘বেস্ট ব্লগ' ক্যাটাগরিতে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো কেন? বাংলাদেশের ফোটোগ্রাফির জগতে মাইল ফলক ‘দৃক্' ও দক্ষিণ এশিয়া ফোটোগ্রাফি ইনস্টিটিউট ‘পাঠশালা'-র স্থপতি ড. শহিদুল আলম, যিনি এবছর বাংলা ভাষার বিচারকও, তিনি জানান, ‘‘আমাদের দেশেই এতো ধরনের ব্লগ রয়েছে এবং ব্লগোস্ফিয়ারটা যে এতো সজীব, সেটা আমার ধারণায় ছিল না৷ এছাড়া মনোনয়নের কাজটা করতে গিয়ে আমার আরো একটা অভিজ্ঞতা হলো যে, বাংলাদেশে কেউ নিজে একা একটা ব্লগ করছে - তা না৷ প্রত্যেকটা ব্লগের চারিপাশেই কিন্তু একটা কমিউনিটি রয়েছে, যারা খুব সক্রিয়ভাবে কাজ করে৷ এটা দেখে আমার নিজেরও মনে হয়েছে যে, আমি এক ধরনের একটা আন্দোলনের মধ্যে রয়েছি৷''
তিনি বলেন, ‘‘যতোগুলো ব্লগ আমি দেখেছি, তার অধিকাংশই কিন্তু কোনো একটা রাজনৈতিক-সামাজিক বোধ বা একটা পরিবর্তন আনার আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং সেখানে সাবরিনার ব্লগটা বিশেষ করে ভালো লেগেছে, কারণ এ কথা ধরেই নেওয়া হয় যে আমার দেশ, বাংলাদেশ প্রযুক্তিভাবে পিছিয়ে আছে৷ তারপর যাঁরা প্রতিবন্ধী তাঁদের ক্ষেত্রে তো আরো বেশি৷ সেখানে বাংলাদেশের প্রতিবন্ধীরা এরকম একটা প্রযুক্তিকে নিয়ে এভাবে কাজ করছে এবং শক্তিশালীভাবে তাঁদের প্রতিবন্ধকতাকে মোকাবিলা করছে, এটা আমার খুব ভালো লেগেছে৷''
শহিদুল আলম ছবি তুলে দেশে বিদেশে পুরস্কৃত হয়েছেন৷ আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে জুরির আসন অলঙ্কৃত করেছেন বহুবার৷ অথচ অনেকেই জানেন না যে, আদতে তিনিই হচ্ছেন বাংলাদেশের ব্লগিং জগতের প্রথম পথিকৃৎ৷ তাই তাঁর কাছেই জানতে চাই, এবারের ‘স্পেশাল টপিক অ্যাওয়ার্ড' বা বিশেষ বিভাগের মূলমন্ত্র তো শিক্ষা ও সংস্কৃতি৷ অর্থাৎ, এবার প্রতিযোগিতায় মূলমন্ত্র হিসেবে এবছর বেছে নেওয়া হয়েছে ‘শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্লগের ভূমিকা'কে৷ এই যেমন, ইংরেজি ভাষায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ থেকে ‘খান একাডেমী'-র মতো একটা ব্লগ৷ তা বাংলা ব্লগোস্ফিয়ারের মধ্যে কিছু ভালো শিক্ষা বা সংস্কৃতি বিষয়ক ব্লগ কি পাওয়া গেল? শহিদুল বললেন,‘‘খান একাডেমী বাংলায় নয় বলে আমরা এটা বাংলা ব্লগ হিসেবে রাখতে পারি নি৷ কিন্তু এক্ষেত্রে অন্য একটা জিনিস আমি করেছি৷ অ্যামেরিকার একটা ম্যাগাজিনের সঙ্গে আমি ইতিমধ্যেই কথা বলেছি যে, খান একাডেমীর ‘খান'-এর ওপর আমি একটা ফটো-ফিচার করবো, যেটা তারা তাদের ম্যাগাজিনে ব্যবহার করবে৷''
এছাড়া, আরো বহু ব্লগ ঘেঁটে দেখেছেন শহিদুল৷ যাদের মধ্যে অনেকগুলিকেই তিনি বাছাই করতে পারেন নি৷ কারণ এক, তাদের আগেই মনোনয়ন করা হয়েছে অথবা তারা কোনো না কোনোভাবে ডয়চে ভেলের সঙ্গে জড়িত৷ এই যেমন সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে করা ফেসবুক পাতাটি৷ যদিও শহিদুলের কথায়, ‘‘গুণীজনের ক্ষেত্রে অবশ্য আমার মজা লাগার একটা কারণ আছে৷ একদম প্রথমে, যখন গুণীজন শুরু হয়, তখন ওটার প্রদর্শনীটা দৃক'এ হয়েছিল এবং আমার এক ছাত্র ওটার ছবিগুলি তুলেছিল৷ তাই আমি অনেক দিন ধরেই এটার কথা জানি৷ কিন্তু এটা যে এতো দূর এগিয়ে গেছে, এটা যে একটা ‘আর্কাইভ'-এ দাঁড়িয়ে গেছে, সেটা আমার জানা ছিল না৷ এই আর্কাইভিং জিনিসটা, বিশেষ করে ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রপারটি'-কে সংরক্ষণ করা আমাদের দেশে সরকারিভাবে তো হয়ই নি, বেসরকারিভাবেও ঠিকমতো হয় নি৷ তাই এটা যে এবার ব্লগোস্ফিয়ারের লোকজন করা শুরু করেছে, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷''
বলাবাহুল্য, ‘দ্য বব্স' এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ব্লগ পুরস্কার হিসেবে স্বীকৃত৷ এর মাধ্যমে গোটা বিশ্বে মত প্রকাশের অধিকার ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাকে আরও শক্তিশালী করতে চায় ডয়চে ভেলে৷ দু'বছর থেকে ডয়চে ভেলের এই সেরা ব্লগ প্রতিযোগিতায় যোগ করা হয়েছে বাংলা ভাষাকে৷ আর এবছর, সেরা ব্লগ প্রতিযোগিতার এই ওয়েবসাইটটি সাজানো হয়েছে নতুন করে৷ শুধু ইংরেজিতে নয়, সাইটটি এবার পড়া যাবে বাংলাতেও৷
ছয়টি আন্তর্জাতিক বিভাগের ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড' বব্স'এর আসল পুরস্কার হলেও, ‘ইউজার-প্রাইজ'-এর বিজয়ীদের নির্ধারণের ক্ষমতা কিন্তু আপনারই হাতে৷ তাই আপনার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চলে যান বব্স'এর ওয়েবসাইটে৷ ঠিকানা: thebobs.com/bengali৷
মনোনয়নের মতো আবারো সাইটটিতে আপনার ফেসবুক, টুইটার বা ওপেন-আইডি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে লগ ইন করুন আর ভোট দিন প্রতিদিন, মাত্র ৩০ সেকেন্ডে৷
প্রসঙ্গত, ডিডাব্লিউ'র ‘বেস্ট অব ব্লগস' বা বব্স প্রতিযোগিতার ভোটিং পর্ব শেষ হবে আগামী ২রা মে৷ আর সেদিনই ঘোষণা করা হবে বিজয়ীদের নাম৷
প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন